গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দোষীর ফাঁসির সাজার বন্দোবস্ত করবে শাসকদল তৃণমূল। মঙ্গলবার বিধানসভায় বিলটি পেশ করা হবে। ওই দিনই আলোচনার পর বিল পাশ করে আইন তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আলোচনায় অংশ নেবে বিজেপি পরিষদীয় দল। সোমবারের অধিবেশন শোকপ্রস্তাবের পরেই শেষ হয়ে যাবে। বিজেপি পরিষদীয় দল জেনেছে, বিধানসভার সেই শোকপ্রস্তাবে শুধুমাত্র নাম রয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। যিনি গত অগস্ট মাসের ৮ তারিখে প্রয়াত হয়েছেন। অথচ সেই প্রস্তাবে উল্লেখ নেই আরজি করে নিহত চিকিৎসকের। এ কথা জানার পরেই সোমবারের সব প্রস্তাবের সময় বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি যে, বিধানসভার শোক প্রস্তাবে ধর্ষণ করে খুন হওয়া চিকিৎসকের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি আমি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, এমনটা হলে আমরা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিধানসভার অধিবেশনেই সরব হব।’’ সোমবার দুপুরে বিধানসভায় কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক বসবে। সেই বৈঠকে স্থির হবে বিধানসভার দু’দিনের কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতেই মঙ্গলবার বিধানসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ বিধানসভায় তৃণমূল পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনই কিছু বলব না। যথাসময়ে এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান সবাই জানতে পারবে।’’ প্রসঙ্গত, শুক্রবার কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনের প্রস্তাবে প্রথমে রাখা হয়নি ওই নিহত চিকিৎসকের উল্লেখ। কিন্তু বিজেপি কাউন্সিলরদের বিক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত পুরসভা শোকপ্রস্তাবে ওই নিহত চিকিৎসকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘আসলে যে অধিবেশন মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন, তা শুধুমাত্র নাটক বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। আইনের ছাত্র হওয়ার সুবাদে আমি জানি যে কোনও ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ব্যবস্থাই আমাদের আইনে রয়েছে। বিধানসভার অধিবেশন ডেকে যেমন তিনি নাটক করছেন, তেমনি তিনি নাটক করছেন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে। সত্যিই যদি বিধানসভার শোকপ্রস্তাবে ওই নিহত চিকিৎসকের মৃত্যুর উল্লেখ না থাকে, তা হলে আগামিকালই মুখ্যমন্ত্রীর নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত।’’ এ প্রসঙ্গে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘অবশ্যই নিহত চিকিৎসকের কথা বিধানসভার শোকপ্রস্তাবে উল্লেখ করা উচিত। সরকারি হাসপাতালে নিহত ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর দায় কোনও ভাবেই রাজ্য সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। যদি বিধানসভার শোকপ্রস্তাবে ওই মৃত্যুর উল্লেখ না থাকে, তা হলে তা অন্যায় হবে।’’
এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বাম জমানায় শোকপ্রস্তাবের ক্ষেত্রে সমাজে পরিচিত যাঁরা মারা গিয়েছেন, বা দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন, তাঁদের কথা উল্লেখ করা হত। কিন্তু পরিবর্তনের জমানায় আমরা অনেক কিছুই নতুন দেখেছি। যেমন, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সময় থেকেই আলাদা করে বিধানসভায় প্রস্তাব আনা শুরু হল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রেও পৃথক প্রস্তাব আসতেই পারে। কিন্তু আরজি করের মতো সরকারি হাসপাতালে ওই মহিলা চিকিৎসকের খুনের ঘটনা অবশ্যই বিধানসভার শোকপ্রস্তাবে উল্লেখ করার মতো ঘটনা। বিরোধীদের উচিত এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে সরকারপক্ষকে তা উল্লেখ করতে বলা। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিরোধী দলকে সম্মানও দেন না। আর কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কাও করেন না।’’