WB Panchayet Election 2023

দলের সাজা উপেক্ষা করেই মনোনয়ন জমা দিয়ে দিলেন দুধকুমার, ‘আদি নেতা’কে নিয়ে কী করবে বিজেপি?

সেই ১৯৮৮ সাল থেকে যত বার পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে প্রার্থী হয়েছেন দুধকুমার মণ্ডল। জিতেওছেন প্রতি বার। এ বার দল তাঁকে চায় না। তবু মনোনয়ন জমা দিয়ে দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দুধকুমার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ১৯:২৪
BJP leader Dudhkumar Mondal

দুধকুমার মণ্ডল। — ফাইল চিত্র।

দুধকুমার মণ্ডল। এই রাজ্যে যখন বিজেপির কোনও সংগঠন ছিল না তখনই পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়েছিলেন বীরভূমের বিজেপি নেতা। এ বারও তিনি প্রার্থী হতে চান। দলকে না জানিয়েই মনোনয়ন জমা দিয়ে দিয়েছেন। বছরখানেক আগে দলবিরোধী মন্তব্য করায় তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। তাতে তাঁর বিজেপির প্রার্থী হওয়া সম্ভব নয়। তবে দুধকুমার প্রার্থী হবেনই বলে পণ করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রার্থী হবই। দল যদি প্রতীক না দেয় তবে নির্দল হয়ে লড়ব।’’ এ কথা জানার পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আমি বিষয়টা এখনই শুনলাম। দলের পক্ষে ভাবনা চিন্তা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা প্রাক্তন রাজ্য কর্মসমিতির সদস্য দুধকুমারের অভিযোগ ছিল, তাঁর সঙ্গে আলোচনা না করেই জেলা থেকে ব্লক কমিটি গঠন হয়েছে। এ নিয়ে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘পার্টির সংবিধানে কোথাও লেখা নেই, দুধকুমার মণ্ডলের সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটিগুলো করতে হবে।’’

একটা সময়ে আরএসএস প্রচারক থাকা দুধকুমার ১৯৮৮ সালে প্রথম বার বীরভূমের ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হন। ২০১৮ সালেও তিনি পঞ্চায়েতে জিতেছেন। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ময়ূরেশ্বর আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন দুধকুমার। ২০১৬-এ দাঁড়ান রামপুরহাট থেকে। ২০১৯ সালে বীরভূম আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনেও প্রার্থী করে বিজেপি। তবে কোনও বারই জিততে পারেননি। যদিও গ্রামের ভোটে তিনি অপ্রতিরোধ্য। চার বার গ্রাম পঞ্চায়েত এবং এক বার পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী দুধকুমার বেশ কিছু দিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। সুকান্ত রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে জেলা ও ব্লক স্তরের কমিটিতে বদল এলে ক্ষোভ প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন তিনি। ফেসবুকে লেখেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থক এবং কার্যকর্তাগণ, আমাকে যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা চুপচাপ বসে যান।’

Advertisement

এর পরেই তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় রাজ্য বিজেপি। সুকান্ত সেই সময়ে বলেছিলেন, ‘‘যত পুরনো নেতাই হোন না কেন, আমাদের নীতিতে ব্যক্তির থেকে সংগঠন বড়। দলবিরোধী কথা বরদাস্ত করা হবে না।’’ চলতি মাসের গোড়ার দিকেই আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে দুধকুমারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি পঞ্চায়েত নির্বাচনে সক্রিয় হবেন? দুধকুমার বলেছিলেন, ‘‘আমাকে দেওয়া চিঠি দল যত দিন না ফিরিয়ে নিচ্ছে তত দিন কোনও কাজ করব না। খালি দেখব।’’

কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজে উঠতেই সেই দুধকুমার মনোনয়ন জমা দিয়ে দিয়েছেন। তবে গত বার যে পঞ্চায়েতে জিতেছিলেন সেখানে নয়। সেটি সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণবহড়া অঞ্চলের ৫ নম্বর সংসদের ৭ নম্বর আসনে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দুধকুমার বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের ইচ্ছাতেই আমার প্রার্থী হওয়া। সবাই চাইছেন। রাজনীতি না করলেও মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’’ শুধু নিজের জয় নিয়ে নিশ্চিত নন, বিজেপির অন্য প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন। দাবি করেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূমে তুমুল গোলমালের মধ্যেও আমি জিতেছিলাম। আর এ বার পরিবেশ অনেক ভাল। গোটা জেলাতেই বিজেপি ভাল ফল করবে।’’

বিজেপি ভাল ফল করবে বললেও তাঁর জানা নেই দল শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রতীক দেবে কি না। সেটা জানা যাবে আরও কয়েকটা দিন পরে। তবে দুধকুমার বলছেন, ‘‘আমি জিততে চাই। জিতে কাজ করতে চাই। দল প্রতীক দেবে কি না তা নিয়ে খুব চিন্তিত নই। দিলে ভাল। না দিলে নির্দল হিসাবেই লড়ব এবং জিতব।’’

আরও পড়ুন
Advertisement