Health Debacle in west bengal

স্যালাইন-কাণ্ডে বদলি করা হল স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিবকে? ‘সময়’ নিয়ে জোর বিতণ্ডা সরকার-বিরোধীর

বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সিনিয়র সচিব চৈতালি চক্রবর্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০৭
চৈতালিকে সরানোর সেই নির্দেশিকা।

চৈতালিকে সরানোর সেই নির্দেশিকা। — নিজস্ব চিত্র

দায়িত্ব থেকে সরানো হল স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সিনিয়র সচিব চৈতালি চক্রবর্তীকে। বুধবার রাতেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য ভবন। ওষুধ সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভাঞ্জন দাসকে। ঘটনাচক্রে, স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে আন্দোলনে নেমে বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে চৈতালির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি পরিষদীয় দলের দাবি, শুভেন্দুর কোনও প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সেই কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

তবে প্রশাসনিক মহলের একাংশের দাবি, বিরোধী দলের ওই দাবির কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ, বুধবার চৈতালিকে দায়িত্ব থেকে সরানো হলেও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছিল সোমবারেই। নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকদের নির্দেশ পেয়েই রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন।

বিজেপি যদিও তা মানতে নারাজ। স্বাস্থ্য ভবন ‘অভিযানে’ শুভেন্দুর সঙ্গী বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, ‘‘আমরা গিয়ে ওই আধিকারিকের কাছে বাংলার মানুষের হয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। ওই বিষ স্যালাইন বাতিল করা সত্ত্বেও কী ভাবে আবার অসুস্থ সাধারণ মানুষের জন্য তা ব্যবহার করা হল, তার জবাব রাজ্য সরকারকে দিতেই হবে। আমরা সেই প্রশ্ন ওই আধিকারিককে করেছি। উনি তার কোনও জবাব দিতে পারেননি। সে কারণেই ওই আধিকারিককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ বিজেপির অপর বিধায়ক বিমান ঘোষের আবার অভিযোগ, আগামী দিনে যাতে রাজ্য সরকারের কোন আধিকারিক বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেন, সেই ‘বার্তা’ দিতেই ওই আধিকারিককে সরানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে শোরগোল ওঠার পরে গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের বৈঠক হয়। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকে মুখ্যসচিবের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় স্বাস্থ্যসচিবকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও তিনি যে ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য ভবনের কাজে ‘অসন্তুষ্ট’, তা স্বাস্থ্যসচিবকে বুঝিয়ে দেন মুখ্যসচিব। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই চৈতালিকে সরিয়ে শুভাঞ্জনকে দায়িত্বে আনার বিষয়টি ঠিক হয়ে যায়। বস্তুত, ওই দিনই বিজ্ঞপ্তি জারি করে শুভাঞ্জনকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যসচিব। তাই দায়িত্ব পাওয়ার পর কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে জনস্বার্থ মামলার বিষয়ে নিয়ে রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন শুভাঞ্জন। তখনই স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের কাছে চৈতালির অপসারণ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে বিরোধী দলনেতার দফতর সূত্রের দাবি, বিজ্ঞপ্তি মঙ্গলবার ১৪ তারিখ রাতে প্রকাশিত হলেও তা নবান্নের ‘অনুমোদন’ পেয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। তাতে সই করা হয়েছে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে চৈতালির সাক্ষাতের পরেই।

স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, চৈতালি যে হেতু জানতেন, তিনি আর দায়িত্বে থাকছেন না, তাই বিরোধী দলনেতার প্রশ্নের জবাবে কোনও মন্তব্য করেননি। ফলে বিষয়টি অত ‘সরল’ নয়। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যসচিবের অধীনে যে সচিবেরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন চৈতালি। এত দিন পর্যন্ত ‘ড্রাগ অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট’ দফতরেরও সচিব ছিলেন তিনি। ওষুধ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ছিল তাঁরই হাতে। কোন কোন ওষুধ ব্যবহার করা হবে, কোন সংস্থাকে ওষুধের বরাত দেওয়া হবে, সবই দেখতেন তিনি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার পর চাঞ্চল্য ছড়ায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরও তিন প্রসূতিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয়। ওই ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে আসে, স্যালাইনের গুণমানের কারণেই এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অন্য প্রসূতিরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরবর্তী কালে আরও অনেক তত্ত্ব উঠে এলেও স্যালাইন প্রস্তুতকারী সংস্থার ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই স্যালাইনই সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ‘অস্বস্তি’তে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই চৈতালিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য। ওই সূত্রের বক্তব্য, এর সঙ্গে বিরোধী দলনেতার স্বাস্থ্য ভবন ‘অভিযান’ বা প্রশ্নের কোনও সম্পর্ক নেই।

সেই সরকারি নির্দেশিকা।

সেই সরকারি নির্দেশিকা। — নিজস্ব চিত্র

Advertisement
আরও পড়ুন