Prosenjit Chatterjee

প্রসেনজিৎ-সাক্ষাতে বিজেপি নেতা, তবে জল্পনা উড়িয়ে দিলেন টলিউডের ‘বুম্বাদা’

সমস্ত জল্পনা-কল্পনা সপাটে মাঠের বাইরে ফেলে আনন্দবাজার ডিজিটালে প্রসেনজিৎ লিখেছেন, ‘আমি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছি না। রাজনীতিতেও যোগ দিচ্ছি না’।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১২:৫৪
 প্রসেনজিতের দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে বিজেপি-র সংগঠক অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রসেনজিতের দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে বিজেপি-র সংগঠক অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

আরও এক অভিনেতা। আরও এক নেতা। আরও এক সাক্ষাৎ। এবং আরও এক জল্পনা। এবারের কুশীলব প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। সরস্বতী পুজোর দিন প্রসেনজিতের দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে গিয়ে সস্ত্রীক তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপি-র সংগঠক এবং অমিত শাহকে নিয়ে বইয়ের লেখক। অনির্বাণ। উপহার দিয়েছেন অমিতকে নিয়ে লেখা নিজের বইও। একান্তে দু’জনের কথা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। তার থেকেই ছড়িয়েছে জল্পনা। টলিউডের ‘বুম্বাদা’ অবশ্য সমস্ত জল্পনা-কল্পনা সপাটে মাঠের বাইরে ফেলে আনন্দবাজার ডিজিটালে লিখেছেন, ‘আমি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছি না। রাজনীতিতেও যোগ দিচ্ছি না’।

মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে এসেছিল সঙ্ঘ পরিবারের প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে বলিউডের ‘দাদা’ মিঠুন চক্রবর্তীর সাক্ষাৎ। মিঠুনের মুম্বইয়ের বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ রুদ্ধদ্বার বৈঠক সারেন ভাগবত। তবে বৈঠকের বিষয়ে আলোকপাত করেনি কোনও পক্ষই। মিঠুন শুধু বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ভাগবতের একটা ‘আধ্যাত্মিক সংযোগ’ রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, এখনও ওই সাক্ষাতে কোনও রাজনৈতিক জল্পনার অবকাশ নেই। সেই সন্ধ্যাতেই আরও এক সুপারস্টারের বাড়িতে বিজেপি-র প্রতিনিধি। অনির্বাণ ওই সাক্ষাৎকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের উৎসুক জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতা অনির্বাণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে নিজের লেখা বই ‘অমিত শাহ অ্যান্ড দ্য মার্চ অফ বিজেপি’ উপহার দেন প্রসেনজিৎকে। ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলান দু’জনে।

Advertisement

অনির্বাণ সে অর্থে বিজেপি-র কোনও পদে নেই। দক্ষিণের বজবজের মূল বাসিন্দা হলেও তিনি থাকেন দিল্লিতে। সংগঠনের কাজও করেন। তবে নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে তিনি রাজ্য বিজেপি-র সামনের সারির সৈনিক হিসাবেই পরিচিত। বিডেপি-র ‘লক্ষ্য সোনার বাংলা’ কর্মসূচির দায়িত্ব তাঁর উপরেই। অনির্বাণ ‘শ্যামাপ্রসাদ ফাউন্ডেশন’-এর কর্তাও বটে। যদিও অনির্বাণ এতে ‘রাজনৈতিক রং’ খোঁজা ঠিক নয় বলেই দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রসেনজিৎকে ধন্যবাদ জানাতেই তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। অনির্বাণের কথায়, ‘‘ওই অনুষ্ঠানে আসার জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। সাংস্কৃতিক হাব হিসেবে বাংলার হৃতগৌরব কী করে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।’’ প্রসেনজিৎ অবশ্য শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ভিক্টোরিয়ায় গিয়েছিলেন শুধুমাত্র নেতাজির জন্য। একটি সরকারি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে। অনির্বাণের আরও বক্তব্য, ‘‘এটা আমাদের সম্পর্ক অভিযানের অঙ্গ। যেমন অমিত শাহ কলকাতায় এসে অজয় চক্রবর্তীর বাড়ি গিয়েছিলেন।’’

তবু তাঁর সঙ্গে অনির্বাণের সাক্ষাৎ নিয়ে জল্পনা তৈরি হওয়ায় খানিক বিস্মিতই অভিনেতা। বুধবার আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রশ্নের জবাবে তিনি সাফ বলেছেন, ‘‘বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছি না। অনির্বাণের স্ত্রী এবং কন্যা আমার ভক্ত। ওঁরা সে কারণেই দেখা করতে এসেছিলেন। ওঁরা এসেছিলেন একজন নায়ক এবং অভিনেতার সঙ্গে দেখা করতে। উনি আমাকে একটা বই উপহার দিয়েছেন। যা আমার কাছে সৌজন্যের পরিচয় বলেই মনে হয়েছে।’’ টলিউডের বুম্বাদার আরও বক্তব্য, ‘‘প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যদি রাজনীতিতে যোগ দেয়, তাহলে পাঁচ বছর ধরে ভেবে বুক ফুলিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেবে। লুকিয়ে-চুরিয়ে নয়। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কখনও রাজনীতিতে যাবে না। এটা আপনারা লিখে দিতে পারেন!’’

এখনকার মতো একই কথা বলেছেন মিঠুনও। তিনি জানিয়েছেন, ‘এখনও পর্যন্ত’ কোনও ‘রাজনৈতিক সংযোগ’-এর কথা তিনি ভাবছেন না। তবে ইতিমধ্যেই খবর রটেছে যে, সরাসরি যোগ না দিলেও মিঠুন বাংলার ভোটে বিজেপি-র হয়ে প্রচারে নামলেও নামতে পারেন। একদা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন যদি সত্যিই বিজেপি-র হয়ে ভোটের প্রচারে নামেন, তাহলে তা ‘চমক’ তো হবে বটেই! সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যারপরনাই বিপর্যস্ত ছিলেন মিঠুন। এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেটের কাছে তাঁর প্রদেয় অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছিলেন সেলুয়েডের এই নক্ষত্র। একইসঙ্গে রাজনীতিতে ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদপদও। সেই তিনিই যদি এখন তৃণমূলের পয়লা নম্বর রাজনৈতিক শত্রু বিজেপি-র হয়ে ভোটের প্রচারে নামেন, তাহলে তা ‘রাজনৈতিক অভিঘাত’ তৈরি করতে বাধ্য! তবে সেটা বলবে সময়। যে সময় দ্রুত এগোচ্ছে।

আরও পড়ুন
Advertisement