Abhishek Banerjee Kunal Ghosh

উনি আমায় ইঙ্গিত করেননি বলেও শিল্পী বয়কট বিতর্কে অভিষেকের মন্তব্যে ‘ত্রিস্তর’ প্রতিক্রিয়া জানালেন কুণাল

বুধবার সকালে অভিষেক যা বলেছিলেন, তা শুনে তৃণমূলের মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছিল, নাম না করে তিনি আসলে কুণালকেই খোঁচা দিয়েছেন। প্রতিক্রিয়ায় কুণাল ব্যাখ্যা দিলেন, কেন তিনি তা মনে করেন না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫১
Artist Boycott Controversy: Kunal Ghosh Gives three tier Reaction on Abhishek Banerjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s Comments

শিল্পীদের একাংশকে বয়কট বিতর্কে নিজেদের অবস্থানে 'অনড়' রইলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

বুধবার সকালে শিল্পী বয়কট বিতর্কে নিজের অবস্থানে ‘অনড়’ থাকার বার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে উল্টো মেরুতে থাকা কুণাল ঘোষ বুঝিয়ে দিলেন, তিনিও নিজের অবস্থানে ‘অনড়’।

Advertisement

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক শিল্পী বয়কট বিতর্ক নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। তাঁর মন্তব্য শুনে দলের অনেকেরই মনে হয়েছিল, নাম না করে কুণালকেই ‘খোঁচা’ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। পরে কুণাল দাবি করেন, তিনি মনে করেন না যে, অভিষেক তাঁকে ইঙ্গিত করে কিছু বলেছেন। পাশাপাশিই তিনি অভিষেকের মন্তব্যকে তিনটি স্তরে ভাগ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আমি যত দূর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনি, তিনি বয়কট, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাওয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। যদি করতেন, তা হলে এক সময়ে যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন, তাঁরা দলে ফিরতে পারতেন না।’’ ঘটনাচক্রে, আরজি কর পর্বের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শিল্পীদের একাংশকে বয়কটের কথা প্রথম বলেছিলেন কুণালই। আবার কুণালই সারদা মামলায় জেলে থাকার সময় নানা সময়ে মমতাকে আক্রমণ করেছিলেন। ফলে নাম না করলেও অভিষেকের বক্তব্য (যাঁরা এক সময়ে আক্রমণ করেছেন, তাঁরা দলে ফিরেছেন) যে কুণালের প্রতি, তা কারও কাছে অস্পষ্ট ছিল না। কুণাল অবশ্য খুব একটা কালক্ষেপ না করে তার জবাবও দিয়েছেন।

প্রথম স্তরের প্রতিক্রিয়ায় কুণাল বলেছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক বলেছেন। আমরা বয়কটের রাজনীতি করি না। এটাই আমাদের নীতি। কিন্তু যে কয়েক জন আমাদের বলেছিলেন ‘চটিচাটা’, যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের (শেখ হাসিনার) মতো হেলিকপ্টারে পালিয়ে যেতে হবে, কারও কারও নাম করে বলেছিলেন, ওমুকের গালে-গালে, জুতো মারো তালে-তালে, আমি তাঁদের কথা বলেছিলাম। যে শিল্পীরা তৃণমূলকেই ঘৃণার চোখে দেখেন, তাঁদের সারা বাংলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ডাকছেন না।’’

এর পরেই কুণাল বলেন, ‘‘এটা থ্রি-টিয়ার প্রশ্ন। দ্বিতীয় টিয়ারটা হল, আমি আগেও বলেছি, মমতাদি সর্বোচ্চ নেত্রী। তিনি যা বলবেন মেনে নেব। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর কোনও বার্তা আসেনি। তাই তিনি (মমতা) কী ভাবছেন, সেটা অন্য কারও মুখ থেকে শুনব না।’’ সেখানে না থেমে তৃতীয় স্তরের প্রতিক্রিয়া দেন কুণাল, ‘‘আমি মনে করি না অভিষেক আমায় ইঙ্গিত করেছেন। কারণ, অভিষেক জানেন, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই রক্তাক্ত মমতাদিকে পুলিশের গাড়ি থেকে আমার গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে আমি হাসপাতালে পৌঁছেছিলাম। অভিষেক জানেন, ২০০৪-২০১১— এই পর্বে আমি মমতাদির জন্য কী কী করেছি। আর অভিষেক এটাও জানেন যে, দলের কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে কী কী ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন এখন গুরুতর অসুস্থ। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে একাধিক বার আমার সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। তাই তিনি আমায় ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করি না।’’ অভিষেকের তৃণমূলে সংগঠনে ‘অভিষেক’ হয়েছিল ২০১১ সালের ২১ জুলাই ব্রিগেডের মঞ্চে। সেখানেই যুব তৃণমূলের সমান্তরাল সংগঠন ‘যুবা’র সভাপতি হিসাবে প্রথম অভিষেকের নাম ঘোষণা হয়েছিল। বুধবার বিকেলে কুণাল সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘অভিষেককে দাঁড় করিয়ে মমতাদি আমাকে দিয়েই ওই ঘোষণা করিয়েছিলেন।’’

অভিষেক সার্বিক ভাবে বয়কট সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছেন। কুণাল সেই বক্তব্যের সূত্রেই বলেছেন, ‘‘মমতাদি শিল্পীদের সমাদর করতে জানেন। কিন্তু যে কয়েক জন আরজি কর পর্বে অসভ্যতা করেছিলেন, তাঁদের তৃণমূল কর্মীরা ডাকছেন না। কোথাও ডাকা হয়ে থাকলেও সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে। এটা তাঁরা ঠিক করে ফেলেছেন। ফলে এ নিয়ে কারও কথার উপর আর কিছু দাঁড়িয়ে নেই।’’

উল্লেখ্য, কুণালের বয়কট তত্ত্বের পরে অভিষেক যখন তা খারিজ করেছিলেন গত ২ জানুয়ারি, সে দিনও কুণাল বলেছিলেন, মমতা যদি বলেন, কুণাল ‘ভুল’ বলেছেন, তা হলে তিনি সে কথা মেনে নেবেন। বুধবার কুণাল দাবি করেছেন, পক্ষকাল কাটতে চললেও সর্বোচ্চ নেত্রীর তরফে তেমন কোনও বার্তা তাঁর কাছে আসেনি। অর্থাৎ, শিল্পীদের একাংশকে বয়কটের ডাক নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে যে বিতর্ক চলছে, তাতে অভিষেকের মতোই কুণালও নিজের অবস্থানেই ‘অন়ড়’ রইলেন। পাশাপাশি জোর দিয়েই বললেন, ‘‘আরজি কর পর্বের ওই চার মাস যাঁরা শত আক্রমণের মুখেও দলের হয়ে কথা বলে গিয়েছেন, তাঁরা ওই গুটিকয়েক শিল্পীকে মেনে নেবেন না। এটাই দলীয় কর্মীদের সার্বিক আবেগ।’’

Advertisement
আরও পড়ুন