vhp

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে বাংলা থেকেই উঠল ৫০ কোটি, উচ্ছ্বসিত হিন্দু পরিষদ

বিজেপি-র জনসভা থেকেও রাম মন্দিরের জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন জানানো হয়। যা শোনা গিয়েছে বিজেপি-তে নবাগত শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:৫৬
হিন্দু ভোট এককাট্টা করার লক্ষ্যে বিজেপি-র জনসভা থেকেও রাম মন্দিরের জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন জানানো হয়।

হিন্দু ভোট এককাট্টা করার লক্ষ্যে বিজেপি-র জনসভা থেকেও রাম মন্দিরের জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন জানানো হয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অব কি বার, ৬০ কোটি পার। অর্থাৎ, এর পর ৬০ কোটি পার করতে হবে। বলছে গেরুয়া শিবিরের সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কারণ, অযওধ্যার রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই ৫০ কোটি টাকা উঠে গিয়েছে। এই বাংলা থেকে। বহু মানুষ লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন। কোটি টাকাও দিয়েছেন কয়েকজন। তবে তাঁরা কারা, তা জানাতে রাজি নয় পরিষদ।

নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যখন ‘অব কি বার, দু’শ পার’ স্লোগান তুলেছে, তখন পরিষদ অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে অর্থসংগ্রহের প্রাথমিক লক্ষ্য পার করে ৬০ কোটি ছোঁওয়ার লক্ষ্য নিল। সংগঠনের দাবি, প্রাথমিক ভাবে গোটা দেশ থেকে এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যেই দেড় হাজার কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। বাংলা থেকে সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ৫০ কোটি টাকা। এখনও সময় হাতে থাকলেও ইতিমধ্যেই লক্ষ্যপূরণ হয়ে গিয়েছে বলে পরিষদ সূত্রে দাবি। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিষদের সর্বভারতীয় সহ-সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহের কথায়, ‘‘এই কর্মসূচিতে পরিষদ তো বটেই, সেই সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের অন্যান্য সংগঠনের সদস্যরাও যোগ দেন। সাধুসন্তরাও সঙ্গে ছিলেন। অযোধ্যায় নির্মীয়মাণ রাম মন্দিরের জন্য গোটা বাংলা জুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছেছি আমরা। যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তা পূর্ণ করে দিয়েছেন বাংলার মানুষ। আমরা এখন আরও বেশি অর্থসংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছি।’’

Advertisement

ঠিক কত টাকা সংগ্রহ হয়েছে এবং নতুন লক্ষ্য কী, তা খোলসা না করলেও শচীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, তাঁদের আশা, বাংলা থেকে মোট সংগ্রহের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হয়ে যেতে পারে। পরিষদ এই কর্মসূচির নাম দেয় ‘নিধিসংগ্রহ মহাভিযান যোজনা’। গত ১৫ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির দিন শুরু হয় অভিযান। চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি, মাঘ পূর্ণিমার দিন পর্যন্ত। কিন্তু তার আগেই তাঁরা লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিষদের পশ্চিমবঙ্গ শাখার এক নেতা। তিনি বলেন, ‘‘চারটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক ভাবে সংগৃহীত অর্থ জমা করা হয়। রাজ্যের পক্ষে হিসাব রাখা হয় দিনের শেষ কত হল সংগ্রহ। সম্প্রতি সেটা ৫০ কোটি পার করে গিয়েছে। এর পরেই নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।’’ তবে শচীন্দ্রনাথ অর্থের পরিমাণ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কত অর্থ সংগ্রহ হয়েছে, তার থেকেও বড় কথা, আমরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে কত মানুষের কাছে গিয়েছি। গ্রাম, শহর মিলিয়ে ৫০ লক্ষ পরিবারে গিয়েছি আমরা। সমাজের সব স্তরের মানুষের থেকে সামর্থ্যমতো অর্থ নিয়েছি।’’

বাংলা থেকে মোট সংগ্রহের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হয়ে যেতে পারে বলে আশা গেরুয়া শিবিরের সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের।

বাংলা থেকে মোট সংগ্রহের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হয়ে যেতে পারে বলে আশা গেরুয়া শিবিরের সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের। —নিজস্ব চিত্র।

কর্মসূচি ঘোষণার সময়েই স্পষ্ট ছিল যে, ‘হিন্দু’ জনসংযোগ-ই পরিষদের বড় লক্ষ্য। গোটা দেশেই এখন পরিষদের উদ্যোগে অর্থসংগ্রহ চললেও বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে তা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি হিন্দ‌ুদের হাতে যাওয়ার পরে থেকেই বিজেপি স্লোগান তুলেছিল ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। অর্থাৎ, মোদী থাকলে সম্ভব। তার পরে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর প্রধান মোহন ভাগবতের উপস্থিতিতে পৌরোহিত্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। যার মাধ্যমে সঙ্ঘ পরিবার এই বার্তা দিতে চেয়েছিল যে, মোদীর ‌জন্যই সবকিছু সম্ভব হচ্ছে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায় বা গত ৫ অগস্ট অযোধ্যায় ভূমিপুজোর স্মৃতি বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গবাসীর মধ্যে উস্কে দেওয়ার কাজই করল পরিষদ।

হিন্দু ভোট এককাট্টা করার লক্ষ্যে বিজেপি-র জনসভা থেকেও রাম মন্দিরের জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন জানানো হয়। যা শোনা গিয়েছে বিজেপি-তে নবাগত শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও। তিনি নিজেও বড় অঙ্কের ‘নিধি’ দেন রাম মন্দিরের জন্য। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ যেখানে ৫১ হাজার টাকা দেন সেখানে শুভেন্দু দেন ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। তবে পরিষদ কোনও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’র কথা মানতে রাজি নয়। শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘রাজনীতি বা বাংলার নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ জাতীয় গর্ব। তার অংশীদার এই বাংলাও। ভূমিপূজনের সময়ে বাংলার বিভিন্ন পুণ্যভূমি থেকে মাটি আর নদীর জল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অযোধ্যায়। সেই ভাবেই বাংলার মানুষের কাছ থেকেও নিধি সংগ্রহ চলছে। রাম মন্দির সকলের। তাই সকলের অংশগ্রহণ চাই। যাতে একজন বস্তিবাসীও অযোধ্যায় গিয়ে বলতে পারেন রামমন্দির নির্মাণে তাঁর অংশগ্রহণ আছে।’’

সাধারণ মানুষকে আন্দোলনের অংশ করে নিতে পরিষদের উদ্যোগে এমন অর্থ সংগ্রহ অভিযান অবশ্য এই প্রথম নয়। কন্যাকুমারীতে ‘বিবেকানন্দ শিলা স্মারক’ নির্মাণের জন্য ১৯৬৫ সালে ১ টাকা করে কুপন নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়েছিল পরিষদ। ১৯৮৯ সালে ‘রামশিলা পূজন’ কর্মসূচিতেও ১ টাকা ২৫ পয়সার কুপন নিয়ে অভিযান চালিয়েছিল তারা। শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘এ বার আমরা ১০ টাকার কুপনের মাধ্যমে নিধি সংগ্রহে বেশি জোর দিয়েছি। এর ফলে বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এ ছাড়াও ১০০ এবং ১,০০০ টাকার কুপনও আছে। ২,০০০ টাকা পর্যন্ত নগদ নেওয়া হচ্ছে। এর উপর অর্থ দিতে গেলে তা অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত ‘শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র’ ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে জমা করতে হবে। বেশি অঙ্কের চেক এবং ড্রাফ্টও নেওয়া হচ্ছে।’’ শচীন্দ্রনাথের বক্তব্য, ‘‘কে কত টাকা দিয়েছেন সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। আমাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য হল কত মানুষ নিধি দিয়েছেন। কত পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হয়েছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement