—প্রতীকী চিত্র।
লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আধার কার্ড বাতিলের চিঠিতে ঘুম উড়েছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর-মেমারির বাসিন্দাদের একাংশের। এখনও তাঁরা উচ্ছেদের আশঙ্কায় ভোগেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ধারাবাহিক ঘটনায় উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পূর্ব বর্ধমানে বসবাসকারী তাঁদের আত্মীয়দের। তাঁদের একটাই প্রার্থনা, দ্রুত ছন্দে ফিরুক প্রতিবেশী দেশ।
কয়েক মাস আগে জামালপুরের জৌগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছেন বাংলাদেশের বাসিন্দা বিপাশা হালদার (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর ছেলে ও বৌমা রয়েছেন ঢাকায়। বিপাশার ভিসা মেয়াদ শেষের মুখে। তাঁর এক আত্মীয় বলছিলেন, “দু’দিন আগেই ছেলের সঙ্গে মায়ের কথা হয়েছে। ছেলে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছে না। মাকে দেশে ফিরতে নিষেধ করছে। উভয় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কী হবে বুঝতে পারছি না।” শুধু বিপাশা নয়, সঙ্কটে পড়েছে কাটোয়ার ফরিদপুর কলোনি, দাঁইহাটে বেড়াতে আসা বাংলাদেশের দু’টি পরিবারও। তাদের দাবি, বড়িশাল-নোয়াখালিতে এই মুহূর্তে পা রাখা ‘অসম্ভব’।
বাংলাদেশ ফের অস্থির হওয়ার পরে সে দেশে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে জামালপুরের জৌগ্রামের কিছু বাসিন্দার। তাঁদের মধ্যে হীরক মণ্ডল, আশালতা মণ্ডলদের দাবি, “কী পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হচ্ছে বুঝতে পারছি। আমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। ও-পারে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।” উদ্বিগ্ন বাসুদেব মণ্ডল বলছেন, “আমার কাকার পরিবার ও-পারেই আছে। গত কয়েক দিন ধরে বাজারে যেতে পারছেন না। যোগাযোগ করতে পারছি না। বিভিন্ন সূত্রে খবর নিতে হচ্ছে।” মেমারির পারিজাত নগর, মহেশডাঙা ক্যাম্পের শঙ্কর সরকার, পলাশ বৈরাগ্যদের কথায়, “ভয়ে ফোনে কেউ কথাও বলতে চাইছে না। গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁরা কত আতঙ্কে রয়েছেন।” অনিতা হালদার বলছেন, “বড়িশাল-নোয়াখালিতে আমাদের আত্মীয় রয়েছেন। কয়েক দিন ধরে ভাইয়ের খবর পাচ্ছি না। রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।”
মতুয়াদের একটি গোষ্ঠীর নেতা হিরন্ময় ঠাকুরের আক্ষেপ, “এ পারে সিএএ-র হুঁশিয়ারি, আধার কার্ড বাতিলের চিঠি। আর ও-পারে অশান্তি। আমাদের চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থা।” মতুয়াদের আর একটি সংগঠনের নেতা, মেমারির শৈলেন বিশ্বাস বলেন, “আমার বোন বাংলাদেশে থাকে। কয়েক দিন খোঁজ পাইনি ওর। চিন্তা বাড়ছে। আমরা চাই, দেশটা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক।” কেবল আত্মীয় স্বজন নয়, বর্ধমান-কাটোয়ার অনেক পড়ুয়া বাংলাদেশে পড়তে গিয়েছেন। অনেকে রয়েছেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে। রবিবারই বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে এক পড়ুয়ার অভিভাবক দাবি করেছেন, “মেডিক্যাল কলেজে অশান্তির আবহ নেই। সব স্বাভাবিক রয়েছে।”
‘আগুনপাখি’র লেখক বাংলাদেশের প্রয়াত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের পৈতৃক বাড়ি মঙ্গলকোটের যবগ্রামে। আনন্দ পুরস্কার প্রাপক সাহিত্যিকের এক আত্মীয় বলেন, “পাখি কখনও কাঁটাতার মানে? আমাদের মনও কাঁটাতার আটকাতে পারেনি। অশান্তির আগুন নিভবেই। পড়শি দেশও আবার ছন্দে ফিরবে।’’