—প্রতীকী চিত্র।
আবাস প্রকল্পের খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে, নিয়ম অনুযায়ী গ্রামসভা হয়েছে বৃহস্পতিবার। নথি যাচাইয়ের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পথে। সব ঠিক থাকলে কাল রবিবার বা তার পর দিন থেকেই ‘বাংলার বাড়ি’ প্রাপকদের মোবাইলে নথি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লক বা পঞ্চায়েতে যোগাযোগের বার্তা যাবে। নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সমীক্ষা ও খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে, প্রথম পর্যায়ে জেলায় ৭৯,২৬৬ জনের কাছে বার্তা যাবে।
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “প্রতিটি সংসদ ধরে নথি যাচাইয়ের কাউন্টার করা হবে। আধারের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, সেই মোবাইল নিয়ে যেতে হবে বার্তা প্রাপকদের।” নথি যাচাইয়ের পরে মোবাইলে ‘ওটিপি’ যাবে। সেই সূত্র ধরে অনলাইনে মুচলেকা জমা দিতে হবে তাঁদের। ‘বাংলার বাড়ি’ তালিকায় নাম থাকা অনেকের কাছে এখনও অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। সে সব বার্তা প্রাপকদের জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে কম্পিউটারে নথি যাচাইয়ের কাজ করবেন ব্লকের কর্মীরা। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ-র নির্দেশে নথি যাচাইয়ের জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগাবেন বিডিও-রা। অভিযোগ উঠলে ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন।
গত ২৭ নভেম্বর রাতে জেলা পরিষদের ওয়েবসাইটে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের তালিকা প্রকাশিত হয়। পরে তার লিঙ্ক দেওয়া হয় জেল প্রশাসনের ওয়েবসাইটে। নির্দেশ ছিল, প্রতিটি ব্লক, পঞ্চায়েত দফতরে এমন জায়গাতে তালিকা টাঙাতে হবে যাতে সেটি সকলে দেখতে পান। অভিযোগ, কেতুগ্রাম ১ ও ২-সহ জেলার বেশির ভাগ ব্লক বা পঞ্চায়েতে তালিকা টাঙানো হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় ‘চুপিচুপি’ গ্রামসভা সারা হয়েছে। রায়না, ভাতার, পূর্বস্থলীর মতো কয়েকটি পঞ্চায়েতে গ্রামসভা হয়েছে প্রকাশ্যে। সে সব জায়গাতে তালিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছেন বাসিন্দারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে ১,৮৩,৬০৭টি বাড়ি সমীক্ষার আওতায় ছিল। সমীক্ষার পরে ১,৩৩,৯৯৮ জনের নাম খসড়া তালিকায় ছিল। সেখান থেকে ৭৯,২৬৬ জনের ফোনে নথি যাচাইয়ের বার্তা পাঠাবে জেলা।
বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়েছে? নবান্নের দাবি, ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (গ্রামীণ) সমীক্ষার পরে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী যাঁদের নাম ‘বাংলার বাড়ি’ তালিকায় আছে, তাঁদেরকে নথি যাচাইয়ের জন্য ডাকা হবে। এ ছাড়াও, বন্যায় বিধ্বস্ত ৯০২ জন বাড়ির মালিক ও মুখ্যমন্ত্রী দফতরে বাড়ির দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া ৬০২৪ জনের কাছে বার্তা যাবে। ২০২২-এ সমীক্ষার সময়ে জেলায় ৪৩ হাজার বাসিন্দার নাম তালিকা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে বর্তমান তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২২-র অগ্রাধিকার তালিকায় ৫৫,১৬৮ জনের নাম ছিল। ওই তালিকা থেকে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে নাম রয়েছে ৪৬,০৩৩ জনের।
জানা গিয়েছে, নথি যাচাইয়ের জন্য ১,০৫, ৩১৭ জনের তালিকা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন ৭৯,২৬৬ জন। নথি যাচাইয়ের জন্য বেশি ডাক পাচ্ছেন– জামালপুর (৬৩৮৫ জন), বর্ধমান ১ (৫৩১৪) ও ভাতারের (৭০২৫) বাসিন্দারা। কম ডাক পাচ্ছেন আউশগ্রাম ২, রায়না ২ ও বর্ধমান ২ ব্লকের বাসিন্দারা।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের প্রশ্ন, “খসড়া তালিকার কথা মানুষ জানতেই পারেননি। যে টুকু প্রকাশ্যে এসেছে, তাতেই প্রচুর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। স্বচ্ছল তৃণমূল নেতাদের নাম রয়েছে তালিকায়। তাঁরাও কি ডাক পাচ্ছেন?” তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসন স্বচ্ছ্ব তালিকা প্রকাশ করেছে। কোথাও আবাসের তালিকা নিয়ে অভিযোগ নেই। নথি যাচাইয়ে যোগ্যদেরই ডাকা হবে।”