মনোনয়ন দিতে আসা বিজেপি নেতার হাতে গোলাপ ফুল আর জলের বোতল তুলে দেন তৃণমূল নেত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়েছে গন্ডগোলের ছবি। এ সব নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাই কোর্টে। তখনই অন্য রকম ছবি দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের বারাবনিতে। এখানে মনোনয়ন জমা দিতে এলে বিরোধীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে গোলাপ ফুল। তীব্র দাবদাহের মধ্যে মনোনয়ন দিতে এসে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর হাত থেকে জলের বোতলও নিচ্ছেন বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্ব। শাসকদলের ব্যবহারে তাঁরা ভীষণ খুশি। বলছেন, রাজ্যজুড়ে ভোটের সময়ে ছবিটা এমনই হওয়া উচিত।
গত শুক্রবার থেকে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া ইস্তক নানা জায়গায় মারামারির খবর মিলেছে। কোথাও আবার বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, তাদের মনোনয়ন কেন্দ্রে ঢুকতেই দিচ্ছে না তৃণমূল। বারাবনি বিধানসভার বারাবনি ব্লকেও মনোনয়নের প্রথম দিন শাসকদলের বিরুদ্ধে লাঠি উঁচিয়ে মারধরের অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। তবে ওই বিধানসভার অন্য একটি জায়গায় দেখা গেল আলাদা ছবি। সালানপুর ব্লকে মনোনয়ন কেন্দ্রের বাইরে তৃণমূলের নেতা এবং কর্মীরা বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের হাতে গোলাপ ফুল, পানীয় জলের বোতল ধরিয়ে দিচ্ছেন। আবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তাঁরা যেন বিডিও অফিসের ক্যান্টিন থেকে চা খেয়ে যান, তারও আমন্ত্রণ করছেন তৃণমূল নেতারা। বলছেন, ক্যান্টিনে সবার জন্য চা পানের বন্দোবস্ত তাঁরাই করেছেন। তৃণমূল নেতা ভোলা সিংহের কথায়, ‘‘এই ব্লকে কোনও ঝামেলা বা দ্বন্দ্ব হবে না। আমরা সবাই চাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই সবাই সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়ন জমা দিক। সে দিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের কর্তব্য।’’
ওই তৃণমূল নেতা আরও বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের নির্দেশে বিরোধীদের মনোনয়ন কেন্দ্রে ফুল-জল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছি। ঝামেলা নয়, উন্নয়নের নামে ভোট হবে সালানপুর ব্লকে। অনেক জায়গায় বিরোধীরা বলছে যে, তাদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। তাই এখানে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষ জানেন কে উন্নয়ন করেছে। কাকে ভোট দিতে হবে। সেই বিশ্বাস আছে।’’
বিজেপি এবং সিপিএম নেতাদের হাতে গোলাপ ফুল ধরিয়ে ফটো তোলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। চা-জলখাবার খেয়ে তবেই যেতে বলছেন তাঁরা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে বিরোধী প্রার্থীদের ‘বেস্ট অফ লাক’ বলতে শোনা যায় তৃণমূল নেতাদের। বিপ্লব দাস নামে বিজেপি নেতা মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা খুবই খুশি হলাম। এ রকমই তো হওয়া দরকার।’’ সিপিএম নেতা গণেশ পণ্ডিতের কথায়, ‘‘এই তো চাই। সবার মধ্যে সুসম্পর্ক থাকুক। উৎসবের মতো করে ভোট হোক। তৃণমূল যে উদ্যোগ নিয়েছে আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
ঠিক এই সময় অন্য ছবি দেখা গিয়েছে আসানসোলের জামুড়িয়াতে। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকি, বিজেপি প্রার্থী মন্ত্রীময় ঘোষকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল।