কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
দুপুর আড়াইটেয় আবার শুরু হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি। আপাতত বিরতি। আড়াই ঘণ্টা শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা তথা মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারী। বিরতিতে বেরিয়ে বললেন, ‘‘মামলাকারী হিসাবে বিচারাধীন বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না। তবে আমার ভাল লেগেছে যে, আদালত মেনে নিয়েছে, মামলাকারীর লক্ষ্য ভোট বন্ধ করা নয়।’’
বিজেপির আইনজীবী বলেন, ‘‘কাঁথি পুরসভা নির্বাচন, কলকাতা পুরসভা নির্বাচন— সব ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ ভোটের আশ্বাস দিয়েছিল কমিশন। তার পরেও বড় আকারে অশান্তি হয়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় পাঁচ বিচারপতি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়েছিল। এই সব ঘটনা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দিকেই ইঙ্গিত করছে।’’
মামলাকারীদের দাবি অনুযায়ী মনোনয়নের সময় বৃদ্ধির পক্ষে কথা বলার পর এ বার বিরোধীদের দাবি মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর কথাও বললেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
বিচারপতি বলেন, ‘‘হনুমান জয়ন্তীর সময় আমরা বলেছিলাম সাধারণ মানুষের মনোবল বাড়াতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে। তারা রাজ্যকে সহযোগিতা করতে এসেছিল। এ ক্ষেত্রেও কমিশন চাইলে সহযোগিতা চাইতে পারে। কমিশন ৬ থেকে ১০টি জেলাকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করেছে। প্রয়োজনে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা যেতে পারে।’’
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘নির্বাচনে কেন্দ্রীয় মোতায়েন করলে ভাল হয়। রাজ্য নিজের মতো বাহিনী দেবে। ধরুন, কলকাতা থেকে পুলিশ হুগলি এবং হাওড়ার পাঠালেন। সে ক্ষেত্রে শহরে তো বাহিনী কম পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন কমিশনের।’’
চুক্তি ভিত্তিক কর্মী বা সিভিক ভলিন্টিয়ারদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা প্রসঙ্গেও সতর্ক করে আদালত বলেছে, ‘‘এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, সিভিক কিন্তু পুলিশ নয়। তারা পুলিশকে সাহায্য করার কাজে যুক্ত।’’
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের সময় বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। বলেছেন, আগের বারের তুলনায় মনোনয়ন পেশের সময় কম। প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা মনোনয়ন পেশের জন্য অপর্যাপ্ত। এ প্রসঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, চাইলে মনোনয়নের সময় এক দিন বাড়ানো যেতে পারে। ৯ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত যে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল, তা ৯ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে। এর প্রত্যুত্তরে বিচারপতি বলেন, সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোট ১৪ জুলাই করাতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তাদের ক্ষমতার বিষয়ে সতর্ক করলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তিনি বললেন, ‘‘প্রার্থীর কথা ছেড়ে দিলাম, কিন্তু কমিশনের উপর ভোটারদের আস্থা প্রয়োজন। আপনারা নিরপেক্ষ সংস্থা। আপনাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে অভিজ্ঞতা থেকে এ বারেও ত্রুটি থাকা উচিত নয়। কমিশনের ভূমিকা সন্তোষজনক হওয়া উচিত। আপনাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। কমিশন চাইলে সঠিক পদক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু কমিশন পুরো বিষয়টি হাইজ্যাক করে নিজেদের কাছে রেখেছে। ’’
গত ৯ জুন থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। ১৫ জুন মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। প্রধান বিচারপতি কমিশনের কাছে জানতে চাইলেন, ‘‘এখনও অবধি কত মনোনয়ন জমা পড়েছে কমিশনের কাছে?’’
মনোনয়নের সময় বৃদ্ধি না করার যুক্তি দিতে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর উদাহরণ দিল কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বললেন, ‘‘ধর্মাবতার! ধরুন, আমি আমার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে যাচ্ছি। আমি তো জানি কী কী নথিপত্র লাগে। এর জন্য অতিরিক্ত সময় তো দাবি করতে আমি দাবি করতে পারি না।’’
প্রধান বিচারপতি কমিশনকে বললেন, আপনারা দিনে ৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন। কিন্তু তাও পর্যাপ্ত সময় নয়। জবাবে কমিশন বলল, ‘‘চার ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে মানে ওই সময় পর্যন্ত মনোনয়ন, তার পর দরজা বন্ধ, এমনটা নয়। বিকেল ৩টে পর্যন্ত যাঁরা প্রবেশ করবেন তাঁরা মনোনয়ন দিতে পারবেন।’’
বিজেপির আইনজীবীর অভিযোগ শোনার পর কমিশনের আইনজীবী বললেন, ‘‘আইন মোতাবেক আমাদের হাত বাঁধা রয়েছে। তবে অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোট করাতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’
বিজেপির আইনজীবী জানিয়েছেন, দায়িত্ব নেওয়ার এক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা করলেন। সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকা হয়নি। এ দিকে, অনলাইনে জাতির শংসাপত্র দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় সংরক্ষিত আসনে অনেকে মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না। এই সব সমস্যা নিয়ে এত কম সময়ে মনোনয়ন জমা পড়বে কী ভাবে?
বিজেপির আইনজীবী আদালতকে বললেন, প্রতি প্রার্থীর মনোনয়ন পিছু ৪০ সেকেন্ড করেও সময় পাওয়া যাচ্ছে না। কী ভাবে? তা স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘‘প্রতি দিন ৪ ঘণ্টা করে মনোনয়ন নেওয়া হচ্ছে। ৫ দিনে হিসাব করলে ৭৩ হাজার প্রার্থীর জন্য গড়ে ৪০ সেকেন্ড সময়ও মেলে না।’’
বিজেপির আইনজীবী গত বারের পঞ্চায়েত ভোটের উদাহরণ টেনে আনলেন। বললেন, গত বারের কথা ধরলে বলতে হবে, শাসকদল ২০ হাজার আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। এ বার ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আশা করা যায় না।
কমিশনের আইনজীবীর দাবি প্রসঙ্গে আগেই আদালত বলেছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন বাদ দিলে এ বার মনোনয়নের জন্য পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বিজেপির আইনজীবীও বললেন, ‘‘৭৩ হাজার আসনে এত দ্রুত মনোনয়ন সম্ভব নয়।’’
১৪ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট করানোর পরামর্শে পাল্টা যুক্তি দিল কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বললেন, দিন পিছিয়ে দেওয়া যায় না। তা ছাড়া, গত বার মনোনয়নের জন্য ৭ দিনই সময় দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৮ জুলাই এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট করার ঘোষণা করেছিল। প্রধান বিচারপতি বললেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন পিছিয়ে গেলে ভোট ১৪ জুলাই করাতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘হিসাব বলছে কমিশন ৫ দিন সময় দিয়েছে। আমরা বিজ্ঞপ্তির দিন ধরব না। ওই দিন বাদ রাখব।’’
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয় জমা দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের প্রশ্নের মুখে পড়ল কমিশন। প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘সংবাদপত্রে দেখলাম মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানো কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে অশান্তির খবর আসছে।’’
পঞ্চায়েত ভোটের শুনানি সরাসরি শুনতে হাই কোর্টে হাজির হলেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সকাল ১১টা নাগাদ প্রধান বিচারপতির এজলাসে এসে উপস্থিত হলেন তিনি।
মনোনয়নের জন্য কমিশনের দেওয়া সময় যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। প্রধান বিচারপতিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানাল, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা এক দিন বাড়ানো যেতে পারে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, গত বারে ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। যে দিন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল, সে দিনটি বাইরে রাখা উচিত।