Konnagar Murder Case

বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে উতলা আট বছরের ছেলে খুনে ধৃত শান্তা! খেয়েছে কি না জানতে ফোনের আবদার

কোন্নগরের আদর্শনগরে বাড়িতে খুন হয় স্কুলছাত্র শ্রেয়াংশু শর্মা। ঘটনার চার দিনের মাথায় গ্রেফতার হন শিশুটির মা এবং তাঁর বান্ধবী। তাঁদের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক রয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কোন্নগর শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৬
Konnagar Murder

(বাঁ দিকে) শান্তা শর্মা এবং তাঁর ছেলে শ্রেয়াংশু শর্মা। —ফাইল চিত্র।

আট বছরের ছেলেকে খুনে গ্রেফতার হয়েছেন মা এবং তাঁর বান্ধবী। হুগলির কোন্নগরকাণ্ডে ধৃত শান্তা শর্মা এবং তাঁর বান্ধবী ইফ্‌ফত পরভিনকে রাখা হয়েছে পৃথক থানায়। তবে বার বার বান্ধবীকে দেখতে চেয়েছেন শান্তা। এমনকি, বান্ধবী ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করেছেন কি না, জানার জন্য পুলিশের কাছে তিনি ফোনও চান বলে খবর ।

Advertisement

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কোন্নগরের আদর্শনগরে বাড়িতে খুন হয় স্কুলছাত্র শ্রেয়াংশু শর্মা। ঘটনার চার দিনের মাথায় গ্রেফতার করা হয়েছে শিশুটির মা এবং তাঁর বান্ধবীকে। দু’জনের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু তার জন্য কেন নিজের শিশুপুত্রকে খুন করতে গেলেন? এ নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরাও। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা জানতে পারছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তকারীদের মধ্যে এক জন বলেন, ‘‘সমকামী সম্পর্কে ছেলে বাধা হলে সংসার ছেড়ে দিয়েই বান্ধবীর কাছে চলে যেতে পারতেন শান্তা দেবী। শান্তা এবং পরভিন, দু’জনে মিলে অন্য কোথাও চলেও যেতে পারতেন। কিন্তু সেটা করেননি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মনে করা হচ্ছে, ঝাড়া হাত-পা হতে চেয়েছিলেন অভিযুক্তা। স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়িকে শিক্ষা দিতেও এমন নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’’

শ্রীরামপুর আদালত শান্তা এবং পরভিনকে নয় দিনের পুলিশি হেফাজত দেওয়ার পর তাঁদের দুটি থানায় রাখা হয়েছে। দু’জনকে দফায় দফায় জেরা করছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তদন্তকারীরা। শ্রীরামপুর মহিলা থানায় রয়েছেন পরভিন। উত্তরপাড়া থানায় বন্দি শান্তা। পুলিশ সূত্রে খবর, দু’জনেই দু’জনের সঙ্গে কথা বলতে উন্মুখ। দেখা করতে পারবেন না জেনে ফোনে হলেও এক বার কথা বলতে চেয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশের কাছে প্রায় আবদার করেছেন শান্তা। সারা দিন কেমন কাটল, কে কী খেয়েছেন, কেমন আছেন— এ সব জানতে দু’জনেই পুলিশের কাছে খোঁজখবর করেছেন। কিন্তু, দু’জনেই শিশু খুনের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। বস্তুত, খুন হওয়া শিশুর মায়ের মানসিক ভাবে এতটা স্বাভাবিক থাকাই অবাক করছে তদন্তকারীদের।

আগেই জানা গিয়েছে, সন্তান খুনের পরও তেমন হেলদোল দেখা যায়নি শান্তার মধ্যে। এমনকি ছেলে মারা যাওয়ার পর দিন আদর করে কুকুরকে বিস্কুট খাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি। আর আদালতে তোলার সময়ও বান্ধবীর হয়েই বেশি কথা বলতে দেখা যায় শান্তাকে। তদন্তে উঠে এসেছে, স্বামীর মাথায় টাক বলে তাঁকে পছন্দ করতেন না শান্তা। স্বামীর সঙ্গে তেমন বনিবনা ছিল না। তবুও শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন। অন্য দিকে, পরভিনের বিয়ে হলেও কিছু দিনের মধ্যেই তিনি স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসেন।

শান্তার বিয়ের বছর দুই পর ছেলে শ্রেয়াংশের জন্ম। নাতিকে পেয়ে খুশি ছিলেন শান্তার শ্বশুর ওমপ্রকাশ এবং শাশুড়ি প্রেমলতা শর্মা। ওমপ্রকাশের তিন ছেলের মধ্যে দু’জন পঙ্কজ এবং প্রভাত কোন্নগরের পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। মেজো ছেলে প্রবীর তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন শিলিগুড়িতে। কোন্নগরে আট জনের পরিবারে শ্রেয়াংশু ছিল খুদে সদস্য। তাই সবারই আদরের ছিল। কিন্তু নিজের কোনও অপ্রাপ্তি থেকেই কি ছেলেকে খুন করে বসলেন শান্তা? এটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

শান্তার স্বামী জানাচ্ছেন, মাসে দুই-তিন বার পরভিন তাঁদের বাড়ি আসতেন। তাঁর অজান্তেও আসতেন কি না, সে সম্পর্কে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, শান্তা ছেলেকে লাঠিপেটা করতেন। পুলিশি জেরায় অবশ্য শান্তা জানিয়েছেন, সব সময় নয়। পড়াশোনা না করলে ছেলেকে মারধর করতেন। পঙ্কজও সেটাই বলছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement