গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ঘৃণাভাষণের অভিযোগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে নালিশ জানাল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। মানবাধিকার কমিশনের ইমেলে পাঠানো এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘‘গত ২৪ অগস্ট শুভেন্দু অধিকারী ঘৃণাভাষণ দিয়েছেন। বলেছেন, অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের এনকাউন্টার করে মেরে ফেলা উচিত। তার এই বক্তব্যে শুধু বিচারাধীন বন্দিদেরই নয়, রাজ্যের সমস্ত মানুষের জীবনের অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে। পুলিশকে ও সাধারণ মানুষকে আইন হাতে নিয়ে খুন করতে প্ররোচনা দিয়েছে। এ সবই মানবাধিকার লঙ্ঘন।’’
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যকে পাঠানো চিঠিতে এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর লিখেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী প্রভাবশালী নেতা। তাঁর বক্তব্যের একটি সামাজিক অভিঘাত আছে। ফলে তাঁর এই বক্তব্যে খুবই খারাপ প্রভাব পড়বে সমাজে।’’ রঞ্জিতের আবেদন, ‘‘এক জন এমএলএ হিসাবে তিনি (শুভেন্দু) আইন প্রস্তুতকারক। তাঁর এই বক্তব্য তাই আইনসভার প্রতিও অশ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। আইন প্রস্তুতকারক হিসাবে আইনব্যবস্থাকে নস্যাৎ করার জন্য তার আরও বেশি সাজা হওয়া উচিত। বিচারাধীন হাজার হাজার বিচারাধীন বন্দিও তাঁর এই বক্তব্যে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জীবন কাটাবে। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে রাজ্যবাসীর মানবাধিকার রক্ষায় আপনি উপযুক্ত পদক্ষেপ নিন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’’
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৪ অগস্ট) উত্তরপ্রদেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও ধর্ষকদের ‘প্রয়োজনে এনকাউন্টারের’ পক্ষে সওয়াল করছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু। উত্তরবঙ্গের ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় ঘটনায় বিধানসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন, মাটিগাড়া এবং তুফানগঞ্জে দু’জন নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে শিলিগুড়িতে মিছিল করলে তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
বিজেপি বিধায়ক শঙ্করের বলা শেষ হলে অন্য বিধায়ককে বলার সুযোগ দেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার পক্ষে সে সময় স্লোগান শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। পরে তাঁরা ওয়াক আউট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। বিধানসভা চত্বরে বিজেপি বিধায়কদের সেই বিক্ষোভে যোগদান করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সেখানেই তিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতার সমালোচনা করেন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘মাত্র দু’দিনের মধ্যেই তিনটি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এখানে আইনের শাসন নেই। তাই অপরাধীদের মন থেকে ভয় চলে গিয়েছে। যেখানে অল্প সময়ের এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার কথা। তখন অপরাধী মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’
এর পরেই শুভেন্দু বলেন, ‘‘এ রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের মতো এক জন কড়া প্রশাসক দরকার। এই ধরনের অপরাধ যারা করছে, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। প্রয়োজনে এদের এনকাউন্টার করে দেওয়া উচিত।’’ শুভেন্দুর ‘এনকাউন্টার তত্ত্বে’র জবাবে তৃণমূল পরিষদীয় দলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীরা যতই এ রাজ্যকে যোগী রাজ্য করতে চান না কেন, এখানে যা হবে, তা আইনের ভিত্তিতেই হবে।’’ সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাম্প্রতিক ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধি বদলের উদ্যোগ সম্পর্কে তাপসের প্রশ্ন, ‘‘এনকাউন্টার বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? ন্যায় সংহতিতে কি এটা ইনক্লুড (অন্তর্ভুক্ত) করা আছে?’’