গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের জন্য শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচিই নয়, বাঙালির আবেগ ছোঁয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। এ বার তাদের লক্ষ্য সাগরে কপিলমুনির আশ্রম। এখনও পর্যন্ত যা পরিকল্পনা, তাতে আগামী বৃহস্পতিবার কাকদ্বীপ থেকে দলের কলকাতা জোনের ‘পরিবর্তন’ যাত্রার সূচনা করবেন অমিত শাহ। তবে তার আগে তিনি যেতে চান সাগরে। সেখানে কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দিয়ে শুরু করতে চান ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সফর। অমিতের ইচ্ছার গুরুত্ব দিয়ে সোমবার থেকেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। সকাল সকাল সাগরে চলে গিয়েছেন রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি তথা রাঢ়বঙ্গ জোনের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রস্তুতি দেখার পাশাপাশি তিনিও কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দিয়ে আসেন।
প্রতিবার সাগর সফরে গিয়ে কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কম যায় না বিজেপি-ও। গত ডিসেম্বরেই ওই মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এ বার যেতে চলেছেন অমিত। ওই দিন তাঁর যে কর্মসূচি এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, তাতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সোজা হেলিকপ্টারে সাগরে যাবেন অমিত। সেখানে পুজো দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন। এর পরে আসবেন হেলিকপ্টারেই আসবেন কাকদ্বীপে। সেখানে রথযাত্রার সূচনা করবেন। তার পর নামখানার ইন্দিরা ময়দানে হবে জনসভা। অমিতের হাতে রথের যাত্রার সূচনার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় দিন দশেক ঘুরবে ‘পরিবর্তন যাত্রা’। এর পরে তা কলকাতায় ঢুকবে।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের অঙ্গ হিসেবেই এ বার বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। যাকে ‘বাঙালির ভক্তিকেন্দ্র সফর’ বলে বর্ণনা করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অমিত এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা কয়েক দফায় বাংলায় সফর করেছেন। প্রতিটি কর্মসূচির আগেই তাঁরা কোনও না কোনও ধর্মীয় স্থান বা মন্দিরে গিয়েছেন। নড্ডা যেমন ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়েছেন, তেমনই মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনায় গঙ্গামূর্তির সামনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আবার কলকাতায় কালীঘাট মন্দির বা কাটোয়ায় সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। একই ভাবে অমিতও দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী, মেদিনীপুরে কালীমন্দির বা বোলপুরে হনুমান মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। গত ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি অমিতের যে সফর বাতিল হয়েছিল, তাতেও ছিল মায়াপুরে ইস্কন মন্দির, কলকাতায় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ এবং বেলুড় মঠ পরিদর্শনের সূচি। এর পর গত বৃহস্পতিবার আমিতের একদিনের রাজ্য সফরের সূচিতেও ছিল দুই ‘ভক্তিকেন্দ্র’— উত্তরের কোচবিহারে মদনমোহন মন্দির এবং দক্ষিণের ঠাকুরনগরে মতুয়াগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দির।
তবে বাংলায় সফরে এসে কোনও মন্দিরে যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় বা ৭ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ায় তাঁর বক্তব্যে ছিল সেই ছোঁয়া। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মোদী তাঁর বক্তৃতায় বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের পাশাপাশি বাঙালি ধর্মগুরুদের নামও উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ছিল চৈতন্যদেব, মা আনন্দময়ী, অনুকুল ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম। আবার হলদিয়ায় সমাবেশকে ‘প্রিয় মা, বোন, ভাই ও বন্ধুরা’ সম্বোধন করে বললেন, ‘‘মেদিনীপুরের এই পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। শহিদ মাতঙ্গিনী, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর রক্তে রক্তিম হয়েছে এই ভূমি। এই ভূমিতে তৈরি হয়েছে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এই মাটির বীরসন্তান বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙালিকে ‘বর্ণপরিচয়’ দিয়েছেন। সতীশচন্দ্র সামন্তর হাতে হলদিয়া বন্দর তৈরি হয়েছে। মেদিনীপুরের এমন মাটিতে এসে আমি মুগ্ধ।’’