সোমবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর উদ্বোধনে অমিত শাহ, তাই ব্যস্ত বিরোধী দলনেতা যোগ দেবেন না অধিবেশনে।। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সোমবার দেবীপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। ওই দিনই নজিরবিহীন ভাবে ডাকা হয়েছে এক দিনের বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন। আর সে দিনই কলকাতায় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের শারদোৎসবের উদ্বোধন করতে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমন পরিস্থিতিতে বিধানসভার এক দিনের অধিবেশনে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আমরা ওই দিন থাকব না। বিধায়করা সকলেই পুজোয় ব্যস্ত থাকবেন। আমাদের এই বিল নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। ওরা আনছে, ওরা ওদের মতোই পাশ করাবে।’’ শুক্রবার আচমকাই জানা যায়, সোমবার এক দিনের বিশেষ অধিবেশন বসবে বিধানসভায়। গত বাদল অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে দু’টি বিলে সংশোধন জরুরি। বিল সংশোধন না হলে মন্ত্রী, বিধায়কদের বর্ধিত বেতন দেওয়া যাবে না। তাই প্রয়োজন বুঝে তড়িঘড়ি বিধানসভার অধিবেশন এক দিনের জন্য বসিয়ে বিল দু’টি পাশ করিয়ে নেওয়া হবে। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, মন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধি করতে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্যালারিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েন্স অ্যাক্ট ১৯৫২’ ও বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করতে ‘বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি (মেম্বার অ্যামিউজ়মেন্টস) অ্যাক্ট ১৯৩৭’ সংশোধন করা হবে।
বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই দিনই কয়েক ঘণ্টার জন্য কলকাতায় আসবেন শাহ। বিজেপি সূত্রে খবর, শাহের সফরের কারণে সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন বিরোধী দলনেতা। শাহের কলকাতায় আগমন থেকে শুরু করে দিল্লি যাত্রার আগে পর্যন্ত শুভেন্দুকেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেই থাকতে হবে। তাই তাঁর পক্ষে ওই দিনের বিধানসভা অধিবেশনে যোগদান করা সম্ভব নয়। আর বিজেপি বিধায়করাও পুজোর কারণে বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত রয়েছেন। তাই জনসংযোগের কাজ ছেড়ে তাঁরাও বিধানসভার অধিবেশনে যোগদান করতে চান না। তাঁরা নিজেদের ব্যস্ততার কথা শুভেন্দুকে জানিয়েছেন বলেই পরিষদীয় দল সূত্রে খবর। তাই ‘আচমকা ডাকা’ অধিবেশনে গরহাজির থাকবেন বিজেপি বিধায়করা। তবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ইতিহাসে দেবীপক্ষে কখনও অধিবেশন বসেছে কি না, তা স্মরণে আনতে পারছেন না কেউই।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় নিজের বক্তব্য শেষে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মন্ত্রী থেকে বিধায়ক— সব স্তরেই ৪০ হাজার টাকা করে বেতন বৃদ্ধি করছে সরকার। সরকারের বেতন কাঠামো অনুযায়ী, বিধায়কদের বেতন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হল ৫০ হাজার টাকা। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রীরা এত দিন মাসে ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে পেতেন। এখন থেকে তাঁরা পাবেন ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। এ ছাড়া, রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রীদের বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। তাঁরা বেতন বাবদ এ বার থেকে ৫১ হাজার টাকা পাবেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং প্রতিমন্ত্রী, পূর্ণমন্ত্রীরা এত দিন ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা পেতেন। এ বার থেকে তাঁরা পাবেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন না করার কথা জানিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিধায়কের ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি না।’’ যদিও, আইনগত কারণে এই বর্ধিত বেতন না নেওয়ার উপায় নেই বিজেপি বিধায়কদের। বিরোধী দলনেতা তাঁর বর্ধিত বেতন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চকে তাঁদের লড়াইয়ের জন্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।