অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — তৃণমূলের ফেসবুক পেজ থেকে।
চলতি অক্টোবর মাস যেন তাঁর অন্য অভিষেকের মাস। ২ থেকে ৯ তারিখ দিল্লির রাজঘাট, যন্তর মন্তর, কৃষিভবন হয়ে কলকাতার রাজভবন— আন্দোলনের ময়দানে তৃণমূলের সেনাপতির এক রূপান্তর দেখেছিল রাজ্য। তার দিন পাঁচেক পরে আবার চমক! মহালয়ার বিকেলে কলকাতার নজরুল মঞ্চে যখন চণ্ডীপাঠের সংস্কৃত স্তোত্র উচ্চারিত হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে, উপস্থিত প্রায় সকলেই খানিক নড়েচড়ে বসেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে অনেক বারই বিভিন্ন মঞ্চে সংস্কৃত স্তোত্র পাঠ করেছেন। কিন্তু তৃণমূলের কেউই মনে করে বলতে পারছেন না, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে আগে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে এমন স্তোত্রপাঠ করতে শুনেছেন কি না! দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে ধীর এবং স্পষ্ট বাচনভঙ্গিতে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ পাঠ করলেন, ‘‘ইয়া দেবী সর্বভূতেষু...’’। দলের এক প্রবীণ নেতা জানালেন, ঘরোয়া অনুষ্ঠানে অভিষেক এর আগে স্তোত্রপাঠ করেছেন। তবে এত বড় প্রকাশ্য কর্মসূচিতে করেছেন বলে তাঁর মনে পড়ছে না।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অভিষেক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্যদের কবিতা উদ্ধৃত করেন। রাজভবনের সামনের ধর্নামঞ্চের শেষ দিন সুকান্তের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘‘আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই/ স্বজন হারানো শশ্মানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’’ অভিষেকের সেই ধর্না কর্মসূচিতে এমন এমন ফ্রেম তৈরি হয়েছিল রাজভভনের উত্তর গেটের অদূরে রেড ক্রস প্লেসে, তাতে অনেকেই মমতার সেই আন্দোলনের ছাঁচ দেখতে পেয়েছিলেন। তৃণমূলের অনেকে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখতে শুরু করেছিলেন দিদির সেই ঝোড়ো দিনগুলিকে। শনিবারের নজরুল মঞ্চে অভিষেকের স্তোত্রপাঠও মনে করাল দিদির কথাই।
পায়ের চোট ও সংক্রমণের কারণে বাড়ি থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার উদ্বোধন করেন মমতা। চিকিৎসকদের বারণ, তাই সশরীরে নজরুল মঞ্চে যেতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাজ্যের মানুষের কাছে মমতার আবেদন— উৎসবের মরসুমে, পুজোর মরসুমে কেউ যেন কোনও প্ররোচনার ফাঁদে পা না-দেন। অভিষেকের বক্তৃতাও ছিল নাতিদীর্ঘ। তবে তাতেও নাম না-করে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের সেনাপতি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে আক্রমণ করে যাঁরা বলেছিলেন এই রাজ্যে দুর্গাপুজো হয় না, আজকে তাঁরাই বাংলায় পুজো উদ্বোধন করতে আসছেন। এটাই বাংলার ঐতিহ্যের জয়।’’ প্রসঙ্গত, মধ্য কলকাতার একটি পুজো উদ্বোধনে কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আসার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডারও। রাজ্য সরকারের উদ্যোগের ফলেই যে বাংলার দুর্গাপুজো আবহমান ঐতিহ্যের তকমা পেয়েছে তা-ও উল্লেখ করেন অভিষেক।