SSC Recruitment

আরজি কর আন্দোলনের নিবে যাওয়া আগুন চাকরি বাতিলে নতুন করে জ্বালানোর ডাক! তৃণমূলের ভরসা সেই মমতা

আরজি কর আন্দোলন বাংলার নাগরিক আন্দোলনের ইতিহাসে ‘মাইলফলক’, যে আন্দোলন সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নামিয়ে এনেছিল। এ নিয়েও কোনও তর্ক নেই যে, ১৪ বছরের শাসনকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল দলহীন সেই নাগরিক আন্দোলন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আরজি কর আন্দোলন কয়েক দিন গড়ানোর পর থেকেই একটি স্লোগান মুখে মুখে ঘুরত— ‘শোক নয়, দ্রোহ’। সেই আরজি কর আন্দোলনের ‘অন্যতম’ মুখ, জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অন্যতম নেতা দেবাশিস হালদার বৃহস্পতিবার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধে লিখেছেন, ‘এই কান্না, এই অসহায়তা জাস্ট দেখা যাচ্ছে না। এই চোখের জল আগুন হয়ে এই রক্তচোষাদের পুড়িয়ে ধ্বংস করুক— এ ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই।’

Advertisement

হোয়াটস্‌অ্যাপ স্টেটাসে দেবাশিসের লেখায় এই অভিপ্রায় স্পষ্ট যে, আরজি কর আন্দোলনের আগুন যখন প্রায় নিবে গিয়েছে, তখন চাকরি বাতিল নিয়ে সরকার তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলনের আগুন জ্বালাতে হবে। যেমন তা স্পষ্ট বিরোধী বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস নেতাদের বিবৃতি এবং মন্তব্যেও। এটা ঠিক যে, আরজি কর আন্দোলনের সময়ে ক্ষোভের যে উদ্গিরণ হয়েছিল, তা ঠান্ডা হয়ে গেলেও ভিতরে এখনও ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। যে কোনও ঘটনায় বিরোধীপক্ষ তাতে নতুন করে ইন্ধন জোগাতে চাইবেই। নিয়োগ দুর্নীতির ফলে চাকরি হারানো নিয়েও সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে।

আরজি কর আন্দোলন বাংলার নাগরিক আন্দোলনের ইতিহাসে ‘মাইলফলক’, যে আন্দোলন সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নামিয়ে এনেছিল। এ নিয়েও কোনও তর্ক নেই যে, ১৪ বছরের শাসনকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল ‘দলহীন’ সেই নাগরিক আন্দোলন এবং তাতে বিপুল অংশের মহিলাদের উপস্থিতি। কিন্তু চাকরি বাতিল নিয়ে সেই অর্থে কোনও নাগরিক আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠলে তা আরজি করের ঘটনার আগেই হতে পারত। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন সমাজের সমস্ত অংশের মধ্যে আরজি করের ঘটনার মতো ‘স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া’ জাগাতে পারেনি। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার পর তা হবে কি না, তা এখনও বলার সময় আসেনি। তবে চেষ্টা যে শুরু হয়েছে, তা স্পষ্ট।

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার অব্যবহিত পরে শাসক তৃণমূলের মধ্যে দু’টি মতামত ছিল। একাংশের বক্তব্য ছিল, ওই রায় সার্বিক ভাবে জনমানসে সরকার সম্পর্কে দুর্নীতির প্রশ্নে ধারণাকে আরও দৃঢ় করবে। আবার ‘আশাবাদী’ অংশের বক্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে। তাতে যোগ্যদের নিয়োগ হলে জনমানসে প্রভাব পড়বে না। নির্বাচনী রাজনীতিতেও ছাপ পড়ার সম্ভাবনা ততটা প্রবল নয়। কারণ, ভোট এখনও এক বছর বাকি। বিকালে মমতা ‘আগ্রাসী’ ভঙ্গিতে বিজেপি এবং সিপিএমের ঘাড়ে ‘দায়’ ঠেলে দেন এবং বুঝিয়ে দেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনিই ময়দানে নামছেন। তাতে তৃণমূলের অনেকে আশা করছেন, নতুন আন্দোলনের ফুলকি তৈরি হওয়ার আগেই মমতা তা নিভিয়ে দিতে পেরেছেন। অনেকের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছেন, তিনি চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে রয়েছেন। ফলে সরকারের তরফে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করবেন।

মমতার ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, আরজি কর আন্দোলনে বাংলাদেশের নাগরিক আন্দোলনের প্রভাব ছিল। এই ক্ষেত্রে তেমন কোনও ‘ইন্ধন’ নেই। আরজি কর আন্দোলনের সময়ে ‘রাত দখলের’ ডাক দিয়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রিমঝিম সিংহ। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলে কি ‘রাত দখল’ হবে? হবে কি না, তা রিমঝিম এখনই হলফ করে বলতে পারছেন না। তবে আদালতকে দুষে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘কারা ঘুষ দিল, কারা ঘুষ নিল, সেটা আদালত বার করতে পারল না? এটা কি বড় মাথাদের আড়াল করার বন্দোবস্ত নয়?’’ রিমঝিম প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু সরাসরি আন্দোলনের ডাক দেননি। শুধু বলেছেন, চাকরি যাঁরা হারিয়েছেন, তাঁরা চাইলে রিমঝিমদের মঞ্চ তাঁদের পাশে থাকবে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বিজেপি-সিপিএম সার্বিক ভাবে অনিয়ম এবং দুর্নীতিকে সামনে রেখে তৃণমূল তথা মমতাকে বিঁধতে চাইছে। পাল্টা তৃণমূল পদ্মশিবিরের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে (বস্তুত, মমতাও বৃহস্পতিবার ব্যাপমের প্রসঙ্গ বলেছেন), মধ্যপ্রদেশে বিজেপির শাসনেই ব্যাপম কেলেঙ্কারি হয়েছিল। ৫০ জনের বেশি মানুষকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। তা হলে সুকান্ত মজুমদার, শমীক ভট্টাচার্যেরা এত কথা বলছেন কী করে? সিপিএমকে খোঁচা দিতে গিয়ে ত্রিপুরায় মানিক সরকারের জমানায় ১০,৩২৩ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের প্রসঙ্গও আসছে। তবে তৃণমূলের নেতারা একটা বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ‘নিশ্চিন্ত’। যে, আরজি কর আন্দোলনের সময়ে নাগরিক মিছিল-সহ যা যা দেখা গিয়েছিল, তৃণমূলের বিড়ম্বনার জন্য যে যে প্রেক্ষাপট ছিল, চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে অন্তত এখনও পর্যন্ত তেমন সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে না। এখন শাসক শিবিরের অপেক্ষা, সোমবার মমতা ময়দানে নেমে কী করেন।

Advertisement
আরও পড়ুন