মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এক জন দোষীর জন্য সবাইকে কী ভাবে এক জায়গায় যুক্ত করা হল? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় হাই কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছিলেন। মমতা বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আর এক জন প্রধান বিচারপতির থেকে কি আমরা এটুকু মানবিকতা আশা করতে পারি না? একটা আত্মরক্ষার সুযোগ দেওয়া কি যেত না?”
মমতা বলেন, “আমরা জানি, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এই রায়কে আমরা ইতিবাচক ভাবে নিচ্ছি। আমাদের ইচ্ছা আছে, আমরা ইতিবাচক ভাবে পদক্ষেপ করব।”
মমতার অভিযোগ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেওয়াই বিজেপির লক্ষ্য। এর বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়াই হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, “যাঁরা ন্যায্য ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের পাশে আমরা ছিলাম, আছি এবং থাকব।”
মমতা বলেন, “এই পরিবারগুলি অচল হয়ে গেলে বিজেপি-সিপিএমও সচল থাকবে না। কোনও ঘটনা ঘটলে, দায়িত্ব আপনাদের হবে।”
মমতা বলেন, “যাদের চাকরি গিয়েছে, তারা বিচার পাওয়ার জন্য ডিপ্রাইভড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন। তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, সবাই একত্রিত হতে চান। তাঁরা অনুরোধ করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী-সহ আমি যদি তাঁদের সভায় উপস্থিত থাকি, তাঁরা খুশি হবেন।” আগামী ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে তাঁদের কথা শুনতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ধৈর্য হারাবেন না। মানসিক চাপ নেবেন না। যখন প্রক্রিয়া হবে, আদালত তো আপনাদের সকলকে আবেদন করতে বলেছে। আপনারা আবেদন করুন।”
মমতা বলেন, “আমি শুনেছি শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেকে ডিপ্রেস্ড। ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন অনেকে। আমরা চাই না একটাও দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছি মানবিকতার স্বার্থে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আদালতের রায় যেমন আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তেমনই রায় আমাদের দুটো পথও দিয়েছে। রায় মেনেই আমরা সেটা করব। ২০১৬ সালে কারা কারা মন্ত্রী ছিলেন, আমরা রেকর্ড খুঁজে বার করব। কোনও একটা জেলার কথা তো আমরা জানিই।”
শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “যখন বিপদে মানুষের পাশ থেকে সবাই পালিয়ে যায়, তখন কেউ না কেউ আসে তাঁকে রক্ষা করার জন্য।”
মমতা বলেন, “যাঁদের বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১১৬১০ জন নবম-দশম শ্রেণিতে পড়াতেন। ৫৫৯৬ জন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াতেন। বাকিরা অন্য ক্লাসে। আপনারা জানেন, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ‘গেটওয়ে’। তাঁদের মধ্যে অনেকে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয়, ২৫ হাজারের চাকরি বাদ দিয়ে দেওয়া হল, তা হলে স্কুল পড়াবে কে!”
মমতা বলেন, “এতগুলো মানুষের চাকরি যাওয়ার পরে বিজেপির মন্ত্রী সুকান্তবাবু বলছেন। আমি ফেসবুকে তাঁর উক্তি দেখেছি। অযোগ্যদের জন্য যোগ্যদের চাকরি গিয়েছে, এর জন্য নাকি আমরা দায়ী। আপনারা যখন প্রথমে কেস করলেন, একবারও ভাবলেন না কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য? সরকারকেও ভাবতে দিলেন না।”
নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আদালতের নির্দেশ মতো প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রীকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে এসএসসিকে সরকারের ভাবনার কথা জানাতে। তিনি জানান, এসএসসি স্বশাসিত সংস্থা এবং তারা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা করবে। মমতা বলেন, “ওরা বলেছে তিন মাসের মধ্যে প্রসেস করতে, আমরা করে দেব। আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক।”
মমতা বলেন, “এই মামলায় তো তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে জেলে রেখে দেওয়া হয়েছে, অনেক দিন হয়ে গেল! এক জনের অপরাধে কত জনের শাস্তি হয়?”
মমতা বলেন, “আত্মরক্ষার জন্যেও তো সুযোগ দেওয়া উচিত। এতগুলো শিক্ষকের ভবিষ্যৎ! ভুলে যাবেন না, এরা সবাই স্কুলের শিক্ষক। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেওয়া কি বিজেপির টার্গেট?”
রায়ের উপসংহারের ৪৬ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই অংশে বলা হয়েছে, যাঁরা ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছেন,
তাঁদের টাকা দিতে হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা বিস্তারিত পড়েছি। রায়টি আমরা পুরোটা পড়েছি। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে। কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।”
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্যের কী পদক্ষেপ হবে, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। সূত্রের খবর, এরই মধ্যে দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ওই বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রের খবর।
বস্তুত, এই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় অন্যতম একটি জটিলতা ছিল যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করা। ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালের এসএসসি পেয়ে যাঁরা চাকরি করছিলেন, তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাঁরা চাইলে পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র ২০১৬ সালের গোটা নিয়োগ প্যানেলই বাতিল হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ই বহাল রেখেছে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায়ে চাকরি বাতিল হচ্ছে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার (২৫,৭৫২) শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর। নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।