জিআই পেতে পারে কোচবিহারের শীতলপাটি। ফাইল চিত্র।
কলকাতার রসোগোল্লার পর কোচবিহারের শীতলপাটি। কোচবিহারের বিখ্যাত শীতলপাটির ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ (জিআই) তকমা আদায়ের জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকা শীতলপাটিকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে। তাই রাজ্যের উৎসব মরসুম শেষ শহলেই জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানানো হবে।
বাংলাদেশে শীতলপাটির ব্যবহারের চল রয়েছে যথেষ্টই। পশ্চিমবঙ্গেও আবার এই পণ্য উৎপাদনে নাম রয়েছে কোচবিহারের। তাই এই পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের উদ্যোগে কোচবিহারের শীতলপাটিকেই জিআই পাইয়ে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। দফতরের অধীন খাদি গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এ বিষয়ে যাবতীয় উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কোচবিহার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে পর্ষদের কর্তাদের। দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ হাজার কারিগর শীতলপাটি তৈরির কাজে যুক্ত। বছরে কয়েক কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয় শীতলপাটির শিল্পকে ঘিরে। এমন পরিসংখ্যান হাতে পেয়েই এই সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ শুরু করেছিল পর্ষদ।
কৃত্রিম সহ একাধিক উপকরণে তৈরি মাদুর বাজারে এলেও, প্রাকৃতিক উপাদানে বোনা শীতলপাটির কদর বিন্দুমাত্র কমেনি। তা ছাড়া কয়েক হাজার শিল্পীর কর্মসংস্থান সংযুক্ত এই ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলার মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে শীতলপাটির মধ্যে। মাদুর ছাড়াও ব্যাগ, বসার আসন সহ একাধিক জিনিস তৈরি হয় শীতলপাটি থেকে। প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর এই শীতলপাটিকে বিশ্বের আঙ্গিনায় তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
দেশভাগের আগে শীতলপাটি একান্তই বাংলার নিজস্ব সামগ্রী ছিল। কোচবিহারের পরিবেশের সঙ্গে এর উৎপাদন গভীর ভাবে জড়িয়ে। জিআই স্বীকৃতি পেলে শীতলপাটির ব্যবসা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলার বিভিন্ন গ্রামের শিল্পীদের হাতে তৈরি জিনিস ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের সর্বত্র। শীতলপাটিকেও সেই ভাবে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘শীতলপাটির সঙ্গে বাংলার মাটির গন্ধ মিশে রয়েছে। শীতলপাটির জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা আবেদন করতে চলেছি। বাংলার নিজস্ব উৎপাদন শীতলপাটি। এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কোচবিহার-সহ পাশ্ববর্তী জেলার মানুষ বেশি করে যাতে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই আমরা এই পদক্ষেপ করেছি।’’
জিআই স্বীকৃতি পওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। গবেষক দিব্যেন্দুবিকাশ দত্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহের কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই তিনি কোচবিহার ঘুরে এসেছেন। কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ওড়িশাকে হারিয়ে বাংলার রসগোল্লা পেয়েছে জিআই। শীতলপাটিও জিআই স্বীকৃতি পাবে, আশায় রয়েছে দফতর। রসগোল্লার মতো অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে এই নিয়ে বিরোধ হবে না বলেই মনে করছেন দফতরের কর্তারা। আপাতত শীতলপাটির জিআই লাভের পরেই বাংলার অন্যান্য পণ্য নিয়েও এই ধরনের পদক্ষেপ নেবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর।