Mamata Banerjee

পটনায় নীতীশের ডাকা বিরোধী বৈঠকে মমতার সঙ্গী হবেন অভিষেক, সিদ্ধান্ত তৃণমূল নেত্রীর

তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে মমতার এই সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী সমীকরণে তৃণমূলের ‘মুখ’ হিসাবে অভিষেকের ‘প্রতিষ্ঠা’ নিশ্চিত হল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ১৫:৫৮
Abhishek Banerjee will be accompanying TMC chief Mamata Banerjee in Patna opposition meeting

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

পটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগদানের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার জানা গেল, ওই বৈঠকে তাঁর সঙ্গী হবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্যোগে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে আগামী শুক্রবার।

মমতার ‘সুপারিশ’ মেনেই দিল্লির বদলে বিহারে বৈঠকের আয়োজন করেছেন নীতীশ। গত ২৪ এপ্রিল আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নীতীশ। সে সময় প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, “নীতীশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বির‌োধী বৈঠক ডাকুন।” ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটের আগে জয়প্রকাশের উদ্যোগে বিহার থেকেই কংগ্রেস বিরোধী জোট গড়ে তোলার উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল।

Advertisement

আসন্ন পটনা বৈঠকে মমতার সঙ্গে অভিষেকেরও যোগদানের সিদ্ধান্তকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, মমতার এই সিদ্ধান্তে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী সমীকরণে তৃণমূলের ‘মুখ’ হিসাবে অভিষেকের ‘প্রতিষ্ঠা’ নিশ্চিত হল। পাশাপাশি, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সমঝোতাকে যে তৃণমূল নেত্রী যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন, অভিষেককে সঙ্গী করে সেই বার্তাও দিলেন মমতা।

ঘটনাচক্রে, পটনার বৈঠকের আগেই তৃণমূল, আম আদমি পার্টি (আপ), সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র মতো দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে, জাতীয় স্তরে বিজেপির মোকাবিলায় মমতার ‘তত্ত্ব’ সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এসপি সভাপতি অখিলেশ যাদব, আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। এই পরিস্থিতিতে পটনায় জেডিইউ নেতা নীতীশের ডাকা বৈঠকে অখিলেশ, কেজরীর পাশাপাশি হাজির থাকার কথা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের। এই আবহে মমতার সঙ্গে তৃণমূলের পরবর্তী প্রজন্মের নেতা অভিষেকের উপস্থিতিতে বিষয়টি ‘অন্য মাত্রা’ পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

নীতীশকে পটনায় বৈঠক ডাকার ‘পরামর্শ’ দেওয়ার প্রসঙ্গ মমতা বলেছিলেন, ‘‘দিল্লিতে অনেক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তা আর এগোয়নি। আঞ্চলিক স্তরে রাজ্যে রাজ্যে বৈঠক হোক।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে মমতার ওই মন্তব্যের নিশানা কংগ্রেসের দিকে। যাতে বোঝানো যায়, কংগ্রেসের উদ্যোগে বৈঠক হলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয় না। নীতীশের বৈঠকের আগে কেজরীওয়ালের দল পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের প্রেক্ষিতে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে মমতাকে। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ‘অপরাধে’ ১৩ জন আপ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে ‘আপ’!

ঘটনাচক্রে, বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্যও শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস বনাম তৃণমূলের সংঘাত তৈরি হয়েছে। আপ নেতা কেজরীবাল মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা করায় বিজেপির সুবিধা হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেসের উদ্দেশে কার্যত মমতার ‘সূত্রের’ (যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে) কথা বলেছেন অখিলেশ। টানাপড়েনের এই পরিস্থিতিতে পটনা বৈঠকে হাজির হওয়ার সুযোগ জাতীয় রাজনীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিষেককে নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ দেবে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement