Train Cancellation in Sealdah

‘চোখের সামনে ছেলেটাকে পড়ে যেতে দেখলাম! ভিড়ে ঠাসা ট্রেন ছুটছিল, ঝুলতে ঝুলতেই চলেছিলাম আমরা’

ওই রানাঘাট লোকালেই ছিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের বার্তা বিভাগের শৌভিক দেবনাথ। চলন্ত ট্রেন থেকে যুবককে পড়ে যেতে দেখেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শী শৌভিক তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন।

Advertisement
শৌভিক দেবনাথ
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪ ১৪:২৮

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

‘পড়ে গেল, পড়ে গেল’। চিৎকার শুনেই ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের দরজা থেকে মুখ বার করে দেখলাম, একটা কমবয়সি ছেলে লাইনের পাশে পড়ে রয়েছে। ওঠার চেষ্টা করলেও সে তা পারছে না। একটা মনখারাপ, ভয়কে সঙ্গে নিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিলাম।

Advertisement

সকালে একটা আশঙ্কা নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম, হয়তো আজ বড় কোনও দুর্ভোগ পোহাতে হবে। হলও তাই। তখন সওয়া ৮টা। প্রতি দিনের মতো আজও রানাঘাট লোকাল ধরব বলে ব্যারাকপুর স্টেশনে পৌঁছই। স্টেশনে ঢুকেই দেখি প্ল্যাটফর্ম থিকথিক করছে ভিড়ে। হাতঘড়িটা দেখে নিয়ে এক জনকে বললাম, “দাদা, রানাঘাট কি বেরিয়ে গিয়েছে?” ব্যঙ্গের হাসি হেসে ভদ্রলোক বললেন, “কোনও ঘাটই আসেনি। দেখছেন না কী অবস্থা!”

সচরাচর সাড়ে ৮টার গ্যালপিং রানাঘাট লোকাল ধরি রোজ। প্ল্যাটফর্মে উঠে দেখি ঠাসা ভিড়। অনেক ক্ষণ পরে একটা ট্রেন ঢুকতেই পড়িমরি করে যাত্রীরা ওঠার জন্য যুদ্ধ শুরু করলেন। আমিও সেই ভিড়ে গা ভাসিয়ে দিলাম। কিছুটা শক্তিক্ষয় করে কোনও মতে ট্রেনের দরজার হাতল পর্যন্ত পৌঁছলাম। তখন বুঝলাম, এ ভাবে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। বাদুড়ঝোলা ভিড় নিয়ে ব্যারাকপুর স্টেশন ছাড়ল ট্রেন। ট্রেনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কামরায় একই দৃশ্য। পরের স্টেশন টিটাগড়ে ট্রেন ঢুকতেই আরও যাত্রী ঠেলে ওঠার চেষ্টা করলেন। অনেকেই আবার পারলেনও না। টিটাগড় স্টেশন ছেড়ে ট্রেন সবেমাত্র গতি বাড়িয়েছে। তার পরেই ঘটল ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার সেই ঘটনা।

চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিলাম। যে ভাবে প্রতিটি কামরায় লোক ঝুলছিল, সেই দৃশ্য দেখে প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল, কিছু না কিছু ঘটতে পারে। আশঙ্কাটা মিলে গেল। আমার গন্তব্য ছিল দমদম। সেখানে নেমে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু মনে এখনও একটা অস্বস্তি থেকেই গিয়েছে। চোখের সামনে চলন্ত ট্রেন থেকে একটা তরতাজা ছেলেকে পড়ে যেতে দেখে অস্বস্তি হয় বইকি। পরে জানতে পারলাম, ছেলেটি মারা গিয়েছে।

আমরা যারা শিয়ালদহ লাইনে যাতায়াত করি, তাদের কাছে ট্রেনের সমস্যা নতুন কিছু নয়। সময়ে ট্রেন না আসা, ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে গন্তব্যে যাওয়া— আমরা এই সবের ভুক্তভোগী। কিন্তু সত্যি বলছি, দীর্ঘ সাত-আট বছরে এমন দুর্ভোগে আর কখনও পড়িনি। মনে হল, শিয়ালদহে কাজ চলার জন্য রেল যতগুলি ট্রেন বাতিলের কথা জানিয়েছিল, তার বেশিই বাতিল করা হয়েছে। রেল আমাদের মতো নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে কী বলেছে শোনা হয়নি, তবে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, অফিসের ব্যস্ত সময়ে মানুষকে বিপাকে না ফেললেই ভাল হত। একটা তরতাজা প্রাণও অকালে চলে গেল।

Advertisement
আরও পড়ুন