—ফাইল ছবি।
ইডি হেফাজতে থাকাকালীন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাবারের দিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে নির্দেশ দিল আদালত। ওই সময়কালে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে তাঁর মেয়ে খাবার দিতে পারবেন বলে নির্দেশ দেয় আদালত। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক তনুময় কর্মকারের নির্দেশ দেন, অভিযুক্তকে দেওয়া খাবার নিরাপদ কি না, প্রতি মুহূর্তে তা পরীক্ষা করতে হবে ইডির তদন্তকারী আধিকারিককে। এ ছাড়াও শুক্রবার এই মামলায় একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রায় ২০ ঘণ্টা টানা তল্লাশি শেষে জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়ি থেকে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে ইডি। শুক্রবার জ্যোতিপ্রিয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আদালতে হাজির করানো হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আবেদন খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে ১০ দিন ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। ওই নির্দেশ শোনার পরেই কোর্ট চত্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতিপ্রিয়। তিনি বমি করতে থাকেন। শারীরিক সমস্যার কারণে এর পর বিচারক মন্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সবিস্তারে নির্দেশ দেন। আদালত অভিযুক্তের খাবারের বিষয়টিতে জোর দেয়। ইডি আদালতে জানায়, জ্যোতিপ্রিয়ের নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস রয়েছে। তাই হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মেয়েকে খাবার দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। সে আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। আদালত জানায়, ইডি হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্তকে তাঁর মেয়ে খাবার দিতে পারবেন। তবে সেই খাবার নিরাপদ কি না, তা বিশেষ ভাবে যাচাই করে দেখতে হবে ইডির তদন্তকারী আধিকারিককে। প্রতি মুহূর্তে খাবার পরীক্ষা করে খেতে দিতে হবে।
শুক্রবার আদালতে জ্যোতিপ্রিয়ের পক্ষে জামিনের আবেদন জানানো হয়। কোর্ট জানায়, এই মামলাটি বিশেষ আদালতের বিচারাধীন বিষয়। তাই এখনই জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হবে না। একই সঙ্গে আদালত মনে করছে, উপযুক্ত তদন্তের জন্য অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। এর পরেই জ্যোতিপ্রিয়কে ১০ দিন ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। কোর্ট জানায়, আগামী ৫ নভেম্বর আবার তাঁকে আদালতে হাজির করাতে হবে। ইডি তাঁকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে কোনও অত্যাচার করেনি বলেও আদালতে জানান রাজ্যের মন্ত্রী। কোর্টের নির্দেশ, হেফাজতে থাকা অভিযুক্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া নির্দেশিকা মেনে জ্যোতিপ্রিয়ের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে পারবে ইডির তদন্তকারী অফিসার। তবে নিশ্চিত করতে হবে, হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্তের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কিছু করা হবে না।
শুক্রবার আদালতেই অসুস্থতা অনুভব করেন জ্যোতিপ্রিয়। তাঁকে বমিও করতে দেখা যায়। ইডি জানিয়েছে, এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি। তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করলেও এ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দসই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন বনমন্ত্রী। সে বক্তব্যে সহমত হয়ে আদালত জানায়, হেফাজতের বাইরে নিজের পছন্দসই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন অভিযুক্ত। চিকিৎসার খরচ তাঁকেই বহন করতে হবে। অন্য দিকে, আদালতের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্ত সুস্থ অনুভব করলে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করতে পারবেন তদন্তকারী অফিসার। কোর্টের নির্দেশ, ইডিকে এই সুযোগ দেওয়া হলেও চিকিৎসায় কোনও রকমের গাফিলতি করা যাবে না। তাই অভিযুক্তকে কমান্ড হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসার জন্য তৎক্ষণাৎ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিযুক্তের উপযুক্ত নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে ইডির তদন্তকারী আধিকারিককে। এ ছাড়া নির্দেশনামায় কোর্ট জানিয়েছে, হেফাজতে থাকাকালীন জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাদ রেখে প্রতি দিন এক ঘণ্টা করে জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন তাঁর আইনজীবী নির্মাল্য দাশগুপ্ত।