জয়নগরে ভস্মীভূত সিপিএম সমর্থকের বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
জয়নগরে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অশান্তি। সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বহু বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি। অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে।
ঘটনাস্থলে গিয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। দমকলের একাধিক ইঞ্জিন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। গ্রামের মহিলারা পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এক অভিযুক্তকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগও উঠেছে। তবে পুলিশ সেই মৃত্যুর কথা এখনও নিশ্চিত করেনি।
জয়নগরের বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন সইফুদ্দিন লস্কর (৪৩)। তিনি এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্বও সামলাতেন। সইফুদ্দিনর স্ত্রী বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। সোমবার ভোর ৫টা নাগাদ নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, দু’টি বাইকে চড়ে মোট পাঁচ জন দুষ্কৃতী এসেছিলেন। তাঁরা সইফুদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুলি লাগে তাঁর কাঁধে। রক্তাক্ত অবস্থায় সইফুদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বামনগাছিতে এর পরেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। তৃণমূলের অভিযোগ, এলাকার সিপিএম নেতা-কর্মীরা ষড়যন্ত্র করে সইফুদ্দিনকে খুন করেছেন। এলাকা দখলের উদ্দেশ্যেই এই খুন করা হয়েছে।
বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের দোলুয়াখাঁকি নস্কর পাড়া এলাকায় সিপিএম কর্মীদের বাস। সেখানে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। একের পর এক বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালান উত্তেজিত তৃণমূল কর্মীরা। সিপিএম সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বহু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাতে প্রায় সর্বস্ব পুড়ে গিয়েছে। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন পুরুষেরা। অভিযোগ, দমকলের গাড়িকে এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অনেক পরে দমকল ঘটনাস্থলে যায়।
এই ঘটনায় সকালেই এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দুই অভিযুক্তকে তৃণমূল সমর্থকেরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এক জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। অন্য জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা পলাতক।
বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার বলেন, ‘‘সইফুদ্দিন এলাকায় জনপ্রিয় ছিল। তাঁকে এ ভাবে খুন করা হবে আমরা ভাবতে পারিনি। ওর কোনও শত্রুও ছিল বলে জানি না। বিষয়টি রাজনৈতিক। চক্রান্ত করে এই খুন করা হয়েছে। পুলিশকে অনুরোধ, যারা এই খুন করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।’’
এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন খুন হয়েছেন। মাফিয়া নেতা বলে ওঁকে এলাকায় সবাই চেনেন। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাফিয়ারাজ চলে। বখরার লড়াইয়ের কথা কে জানে না! যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে এর জন্য অন্য কারও ঘাড়ে দোষ চাপানোর মানে হয় না। দু’জন ধরা পড়েছে। এক জনের হাতে খুন হয়েছেন। তিনিও তৃণমূল। মৃতের পরিবারের সদস্যেরা তো তৃণমূলেরই নেতা। তাঁরা তো দলের কথা অনুযায়ী সিপিএমের ঘাড়েই দোষ চাপাবেন। কারও ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বার করা হোক। যথাযত তদন্ত হোক। দোষ চাপানোর মাধ্যমে খুনিকে প্রশ্রয় দেওয়ার এই তৃণমূলী রাজনীতি বিপজ্জনক।’’