Indian Independence Day

Independence Day 2021: তলিয়ে গিয়েছে নলদাঁড়ি ঘাট, ধুলো জমেছে শহিদ অনুরূপচন্দ্র সেনের নামেও

নলদাঁড়ি ঘাটের মতোই অনুরূপচন্দ্রের নামও স্মৃতির অতলে। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্থানীয় ইতিহাস ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ১০:২৬
বিপ্লবী অনুরূপচন্দ্র সেন।

বিপ্লবী অনুরূপচন্দ্র সেন। —নিজস্ব চিত্র।

আক্ষরিক অর্থেই নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে নলদাঁড়ি ঘাট। সংস্কারের অভাবে আগাছায় ঢেকেছে ঘাটের ধারে বিপ্লবীদের আড্ডাস্থল। এককালে বহু বিপ্লবীরই পা পড়েছিল এ ঘাটে। তবে কালের নিয়মে আজ স্মৃতির অতলে নলদাঁড়ি ঘাট!

নলদাঁড়ি ঘাট থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের বুড়ুলে যেতে হত শহিদ অনুরূপচন্দ্র সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ বা সরলা দেবীর মতো চরমপন্থী বিপ্লবীদের। নলদাঁড়ি ঘাটের মতোই অনুরূপচন্দ্রের নামেও ধুলো জমতে শুরু করেছে। তাঁর নামে এলাকায় একটি কলেজ গড়ে উঠলেও নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্থানীয় ইতিহাস!

ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেশ জুড়ে যে সংগ্রামের আগুন জ্বলেছিল, তার আঁচ এসে পড়েছিল কলকাতা থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরে বুড়ুলেও। নলদাঁড়ি ঘাট পেরিয়েই অধুনা বজবজ ২ নম্বর ব্লকের বুড়ুলে যেতেন অনুরূপ-অনন্তরা। লক্ষ্য— স্থানীয় যুবকদের সশস্ত্র বিপ্লবের মন্ত্রে ‘দীক্ষা’ দেওয়া। সে সময় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল জলপথ। হুগলি নদীর পাড়ে নলদাঁড়ি ঘাটে ভিড়ত স্টিমার। অতি দুর্গম এলাকা হওয়ায় এ ঘাটে নেমে বুড়ুলে আশ্রয় নিতেন চরমপন্থীদের অনেকেই।

Advertisement
আরও পড়ুন:
বেহাল দশায় নলদাঁড়ি ঘাট।

বেহাল দশায় নলদাঁড়ি ঘাট। —নিজস্ব চিত্র।

বুড়ুল হাইস্কুলে গণিতের শিক্ষক হিসাবে চাকরি করতে এসে স্থানীয় যুবকদের সশস্ত্র আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের প্রধান সহকারী অনুরূপচন্দ্র। যদিও ১৯০৫ সাল থেকেই বুড়ুল-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়ে গিয়েছে। তবে মাস্টারদার নির্দেশেই ১৯২২ সালে স্টিমারে করে নলদাঁড়ি ঘাটে প্রথম পা রাখেন যুগান্তর দলের অন্যতম নেতা অনুরূপচন্দ্র।

শিক্ষকতার পাশাপাশি এলাকার সংস্কৃতিচর্চাতেও ভূমিকা ছিল অনুরূপচন্দ্রের। এলাকার যুবকদের সশস্ত্র বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করতে গড়েছিলেন ‘গুপ্ত সমিতি’ বা ‘পল্লি হিতৈষণী সমিতি’-র মতো সংগঠন। সেখানেই মজুত করে রাখা হত আগ্নেয়াস্ত্র এবং নিষিদ্ধ বই-পত্রপত্রিকা। সশস্ত্র বিপ্লব নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সন্ধ্যা হলেই নদীপাড়ের বাতিঘরের কাছে যুবকদের নিয়ে চলত অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ। চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর স্থানীয় বিড়লাপুর-মায়াপুরে গ্যারিসন অস্ত্রভাণ্ডার লুণ্ঠনের পরিকল্পনাও করেছিলেন অনুরূপচন্দ্র। কিন্তু এলাকার জমিদার ও ব্রিটিশ পুলিশের কড়া নজরদারিতে তা ভেস্তে যায়। এর মাঝেই দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় নাম জড়ায় অনুরূপচন্দ্রের।

অন্তিম জীবনে জেলবন্দি অনুরূপচন্দ্র সেন।

অন্তিম জীবনে জেলবন্দি অনুরূপচন্দ্র সেন। —ফাইল চিত্র।

১৯২৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর। শীতের এক সকালে বুড়ুল থেকে অনুরূপচন্দ্রকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় নলদাঁড়ি ঘাটে। সেখান থেকে কলকাতায়। সে দিন ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। বিচারে অনুরূপচন্দ্রের সাজা হয়। তাঁকে আলিপুর মেট্রোপলিটন জেলে রাখার এক মাস পর জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে প্রবল অত্যাচার ও চরম অব্যবস্থায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও অনুরূপচন্দ্রের মৃত্যুর সাল-তারিখ নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে।

অনুরূপচন্দ্র বুড়ুল ছাড়লেও থেমে থাকেনি আন্দোলন। তাঁরই শিষ্য প্রভাসচন্দ্র রায়, গণেশ ঘোষ, নগেন সেন এবং সুরেশচন্দ্র ঘোষের মতো বিপ্লবীর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে সশস্ত্র আন্দোলনের মন্ত্র। তবে স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে সে ইতিহাস যেন ক্রমশ ধূসর। অনুরূপচন্দ্রকেও যেন ভুলতে বসেছে বুড়ুল। নলদাঁড়ি ঘাটও হারাতে বসেছে স্মৃতি থেকে। স্থানীয় ইতিহাস গবেষক তথা কলকাতা পুলিশের এএসআই অভিজিৎ বেরা বলেন, ‘‘স্বাধীনতার অধিকার ছিনিয়ে আনতে বিপ্লবীদের মরণপণ সংগ্রামের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বুড়ুল এবং নলদাঁড়ি ঘাটের সঙ্গে। কিন্তু অবহেলায় ও সংস্কারের অভাবে সে জায়গাগুলি আজ ধ্বংসের মুখে। নতুন প্রজন্মের কাছে বিপ্লবী অনুরূপচন্দ্র সেন এবং বুড়ুলের ইতিহাসকে পৌঁছে দিতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের আবেদন করছি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement