Arms Factory

পুকুরে লুকোনো একের পর এক আগ্নেয়াস্ত্র! জয়নগরে দু’কামরার ঘরে আস্ত অস্ত্র কারখানার হদিস

ধৃতের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির পালিশ মেশিন, ড্রিল মেশিন, ডাইস, ফাইল, করাত, হ্যাক্সো, বাটালি, হাতুড়ি, লোহার পাত, পাইপ ইত্যাদি। পাওয়া গিয়েছে ৮টি ওয়ান শটার বন্দুক।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০০
arrest

ধৃতকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘ঠিক সন্ধ্যা ৬টা। হাসপাতালের সামনে দাঁড়াবেন।’’ ফোনে এই নির্দেশ মতো ক্রেতার বেশে অপেক্ষা করছিল পুলিশ। সময় মতো ‘শিকার’ এলেন। পুলিশকে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরাও পড়লেন। সেখান থেকে খোঁজ চালিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে আবার অবৈধ অস্ত্র কারখানার হদিস পেল পুলিশ। প্রচুর পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হল কারখানার ‘মালিক’ রহমতুল্লা শেখকে। তাঁর দু’কামরার ঘরে গিয়ে কার্যত চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারীদের। বাড়িভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম তো ছিলই, পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বাড়ির পাশে পুকুরের জলেও ডুবিয়ে রাখা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র!

Advertisement

এই অবৈধ অস্ত্র কারবারের খোঁজ আগেই পেয়েছিল পুলিশ। সেই মতো জাল পাতে বারুইপুর পুলিশ জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি), জয়নগর থানা এবং বকুলতলা থানার পুলিশ। এই যৌথ অভিযানে পুলিশ ক্রেতার ছদ্মবেশ নেয়। যোগাযোগ করা হয় অবৈধ অস্ত্র কারখানার মালিকের সঙ্গে। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জয়নগরের ময়দা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে হাজির হওয়ার ‘নির্দেশ’ আসে। কথা ছিল এক হাতে টাকা নিয়ে অন্য হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ‘ডেলিভারি’র। সেই মতো সন্ধ্যা ৬টাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। তার পর প্রায় দেড় ঘণ্টা এ দিক-ও দিক ঘুরিয়ে ময়দা থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই অস্ত্র কারবারিকে।

পুলিশকর্মীরা মোটর বাইক এবং অটোতে ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পর অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়। এর পর ধৃতকে নিয়ে কাশীপুরের কামারিয়া এলাকার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন নির্জন এলাকায় দু’কামরার ঘরের ভিতর থেকে বাইরে, শুধু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম আর যন্ত্রপাতি। এমনকি, বাড়ির ঠিক পিছনে থাকা পুকুরেও বস্তায় ভরে লুকোনো ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।

রহমতুল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির পালিশ মেশিন, ড্রিল মেশিন, ডাইস, ফাইল, করাত, হ্যাক্সো, বাটালি, হাতুড়ি, লোহার পাত, পাইপ ইত্যাদি। পাওয়া গিয়েছে ৮টি ওয়ান শটার বন্দুক। দুটো লং পাইপও উদ্ধার হয়। এ ছাড়া নানাবিধ সরঞ্জাম। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বাড়ি, থুড়ি অস্ত্র কারখানাতেই স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে থাকতেন অভিযুক্ত।

বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে বারুইপুরের পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, ‘‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই অভিযানে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ছোট্ট একটা ঘরের মধ্যে আস্ত অস্ত্র কারখানা তৈরি করে রেখেছিল অভিযুক্ত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই অভিযুক্তকে ট্র্যাক করছিলাম আমরা। এখনও পর্যন্ত ধৃতের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না জানা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তা পরিষ্কার হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement