TMC

পাঁচ বছরে বাংলা ছেড়েছে কয়েক হাজার সংস্থা, তথ্য কেন্দ্রের, ‘হাতিয়ার’ পদ্মের, তৃণমূল বলছে গাঁজাখুরি!

বাংলা থেকে একের পর এক সংস্থা অন্য রাজ্যে নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের। এ নিয়ে বিজেপি সরব। কিন্তু সংসদে জমা দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১৩
2,227 Companies have shifted their registered office from West Bengal to other States in the last five years

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

বাংলায় নতুন শিল্প আসে না। পুরনো শিল্প রাজ্যে থাকে না। এই অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এমন তুলনা করে প্রায়শই সরব হয়। বিশেষত, বিজেপি শাসিত রাজ্যের তুলনায় বাংলার শিল্প পরিস্থিতি ‘খারাপ’ বলে দাবি করে গত বিধানসভা নির্বাচনেই প্রচারে নেমেছিলেন পদ্মনেতারা। এ বার সেই বিষয়ে আরও বড় তথ্য প্রকাশ্যে আনতে চায় রাজ্য বিজেপি। সেই লক্ষ্যেই দলের সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য রাজ্যসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, গত পাঁচ বছরে কত সংস্থা বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছে? সেই প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলা ছেড়ে কতগুলি সংস্থা নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা (রেজিস্টার্ড অফিস) অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়েছে। রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, ওই সংস্থাগুলির মধ্যে ৩৭টি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত।

Advertisement

বিজেপির সাংসদ শমীক ওই বিষয়ে মোট চারটি প্রশ্ন জমা দিয়েছিলেন সংসদে। তিনি জানতে চান, ২০১৯ থেকে ২০২৪— এই পাঁচ বছরে কত সংস্থা ঠিকানা বদলে বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে গিয়েছে? এর মধ্যে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত কতগুলি সংস্থা এবং সেগুলি কোন কোন ক্ষেত্রের? তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, ওই সংস্থাগুলি পশ্চিমবঙ্গ থেকে সদর দফতর সরিয়ে নেওয়ার কারণ হিসাবে কী কী জানিয়েছে? চতুর্থ প্রশ্নে শমীক জানতে চেয়েছিলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রক কী কী পদক্ষেপ করেছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প সংস্থাকে নিয়ে আসা যায়।

সব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন কর্পোরেট বিষয় মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হর্ষ মলহোত্র। প্রথম দু’টি প্রশ্নের উত্তরে সংখ্যায় হিসাব দিলেও মন্ত্রী শেষ দু’টির ক্ষেত্রে সে ভাবে জবাব দেননি। তিনি লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারতের কোম্পানি আইনের ১৩(৪) ধারা অনুযায়ী যে কোনও সংস্থাই তাদের ঠিকানা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে পারে। কী কী কারণে ‘স্থানান্তর’, তা জানিয়ে মন্ত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক থেকে কাজের সুবিধা-অসুবিধার জন্য অনেক ঠিকানা বদল হয়েছে। এ ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিচালন খরচ এবং পরিচালনার সুবিধার মতো কারণও দেখিয়েছে অনেক সংস্থা।

ওই তথ্য হাতে পেয়ে শমীক রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে ‘কটাক্ষ’ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এই রাজ্যে সরকারি খরচে ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্লোবাল বিজ়নেস সামিট হয়। কিন্তু কোনও সংস্থা টিকে থাকে না। এটা আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি। এ বার কেন্দ্রের রিপোর্টে সেটা সত্য বলে জানা গেল।’’ এত বেসরকারি সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যে বেকারত্ব বাড়ছে এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না বলেও আক্রমণ করেছেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‘গোটা দেশেই যখন উন্নয়নের জোয়ার, নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে, তখন বাংলায় কাজের পরিবেশ না থাকায় একের পর এক সংস্থা রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’’ যদিও এই দাবি এবং কেন্দ্রের রিপোর্টকে কোনও গুরুত্ব দিতে রাজি নয় শাসক তৃণমূল। দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটা একটা গাঁজাখুরি রিপোর্ট। করোনার সময়ে সারা দেশেই এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার পরবর্তী কালে বাংলায় কার্যকরী বিনিয়োগ বেড়েছে এবং কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন