(বাঁ দিকে) দেবেন্দ্র ফডণবীস, (ডান দিকে) একনাথ শিন্ডে। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের ঠিক ১১ দিনের মাথায় মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার দাবি জানাল বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাজুটি! বুধবার বিকেলে জোটের নেতা হিসেবে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং বিদায়ী উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে ভাবী মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যপালের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থনপত্র জমা দিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে ৫টায় শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’’ বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, দফতর ভাগাভাগি নিয়ে এখনও কিছু মতভেদ থাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় মুম্বইয়ের আজ়াদ ময়দানে পুরো মন্ত্রিসভা শপথ না-ও নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির ফডণবীস মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। তাঁর সঙ্গে শিবসেনা (শিন্ডে) প্রধান একনাথ এবং এনসিপি (অজিত) সভাপতি অজিত উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করবেন।
যদিও রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শিন্ডে নিজে জানাননি তিনি উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করবেন কি না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য— ‘‘আগামিকাল বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’’ শিন্ডের পাশে বসা অজিত তখন হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আমি উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছি। উনি (শিন্ডের দিকে ইঙ্গিত করে) কাল বিকেলেই তা জানতে পারবেন।’’
রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বুধবার দুপুরে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভবনে দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক, নির্মলা সীতারামন এবং বিজয় রূপাণীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। রূপাণী এর পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বিকেলে আজাদ ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন ফডণবীস।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, রফা অনুযায়ী বিধায়ক সংখ্যার আনুপাতিক হিসেবে বিজেপি ২১-২২, শিন্ডেসেনা ১২-১৩ এবং এনসিপি (অজিত) ৯-১০টি মন্ত্রিপদ পেতে পারে। ঘটনাচক্রে, বিদায়ী মন্ত্রিসভায় শিন্ডে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফডণবীস তাঁর ডেপুটি। এ বার বদলে যাচ্ছে দু’জনের ভূমিকা। ফডণবীস অবশ্য, ২০১৪-১৯ বিজেপি-অবিভক্ত শিবসেনা জোটের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদেও ছিলেন।
সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের তিন দল— বিজেপি, শিন্ডেসেনা এবং এনসিপি(অজিত) যথাক্রমে ১৩২, ৫৭ এবং ৪১টি আসনে জিতেছে। সূত্রের খবর, গত ২৩ জানুয়ারি ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পদ না-ছাড়ার বিষয়টিতে কার্যত অনড় ছিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে। বিস্তর দর কষাকষির পরে শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড় থেকে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন তিনি। নতুন সরকারে কোন দল কী মন্ত্রিত্ব পাবে, তা নিয়ে এখনও জট না-কাটায় শিন্ডেশিবির পাল্টা চাপের রণনীতি নিয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু তাতে ‘কাজ’ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কারণ পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসাব বলছে, অজিতের দলকে সঙ্গে পেলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ১৪৫ পেরিয়ে যাবেন ফডণবীস।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শিন্ডে। কিন্তু শুক্রবার সকালে দিল্লি থেকে মুম্বই ফিরেই তিনি চলে যান তাঁর গ্রামের বাড়িতে। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে বাতিল হয়ে যায় মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে সদ্যজয়ী জোটের বৈঠক। এর পরে সোমবার দুপুরে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব নির্মলা এবং রূপাণীকে মহারাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের ব্যাপারে রফাসূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিকেলেই অসুস্থতার কথা বলে শিন্ডে ফডণবীস ও অজিতের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে দেন। তার ফলে চলতি অচলাবস্থা আদৌ কেটেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে ঠাণের একটি হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান শিন্ডে। এর পরে মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে যান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান ফডণবীস। দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় দুই নেতার। সেই বৈঠকে মেলে রফাসূত্র।