ছবি: সংগৃহীত।
কখনও কখনও কোনও দুঃখজনক ঘটনা মানুষের জীবনের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে। বেলজিয়ামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘটে তেমনই এক ঘটনা। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে চোখের সামনে থেকে রহস্যজনক ভাবে ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছিলেন স্ত্রী। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লাভ হয়নি। খোঁজ মিলেছিল দু’বছর পর। তবে তখন চোখের জল ফেলা ছাড়া তাঁর আর কোনও উপায় ছিল না।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’-এর প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বেলজিয়ামের আন্ডেনের ৮৩ বছর বয়সি বাসিন্দা পাউলেট ল্যান্ডরিউক্সের অ্যালঝাইমার্স ছিল। এই রোগের কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ধীরে ধীরে লোপও পায়। ২০২০ নাগাদ পাউলেটের অসুস্থতা বাড়ে। ওষুধ খেতেও তিনি ভুলে যাচ্ছিলেন। স্বামী মার্সেল টাররেট-ই তাঁর পরিচর্যা করতেন। পাউলেটকে সবসময় চোখে চোখে রাখতেন মার্সেল। কিন্তু এত কিছু করেও বিশেষ লাভ হয়নি। ২০২০ সালের ২ নভেম্বর ঘটে যায় অঘটন।
ওই দিন সকালে জামাকাপড় কেচে তা মেলতে বাড়ির পিছনের বাগানে গিয়েছিলেন মার্সেল। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন, স্ত্রী ঘরে নেই। টেবিলে রাখা জলখাবার যেমন ছিল তেমনই পড়ে রয়েছে, টিভি চলছে। কিন্তু পাউলেট আশপাশে কোথাও নেই। এদিক ওদিক দেখে প্রতিবেশীদের খবর দেন মার্সেল। পুলিশেও খবর দেন। পুলিশ এসে বাড়ির চারপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখে। হেলিকপ্টার থেকেও খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু পাউলেটকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। হঠাৎ যেন হাওয়ায় উবে গিয়েছিলেন তিনি।
এর পর দু’বছর পাউলেটের কোন খোঁজ মেলেনি। এক সময় মার্সেলও খোঁজাখুঁজি বন্ধ করেন। স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়ার আশা ত্যাগ করেছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই আশার আলো দেখা যায় দু’বছর পরে, ২০২২ সালে। অপ্রত্যাশিত ভাবে গুগল্ ‘স্ট্রিট ভিউ’-এ, পাউলেটের বাড়ির সামনের রাস্তায় তাঁর ছবি ধরা পড়ে। এক প্রতিবেশী সেই ছবি দেখে খোঁজ দেন মার্সেলকে। ছবিতে দেখা গিয়েছিল, বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা ধরে একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকছেন তিনি।
সেই ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন মার্সেল। পুলিশ অতি সাবধানে বাড়ির সামনের সেই ঝোপে উঁকি মেরে দেখেন, সেখানে একটি গর্ত রয়েছে। সেই গর্ত থেকেই পাউলেটের দেহাবশেষ উদ্ধার হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মার্সেল। পুলিশের তদন্তে অনুমান করা হয়েছিল, ঝোপের মধ্যে আটকে গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন পাউলেট। সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। অ্যালঝাইমার্সের কারণে কাউকে ডাকতেও ভুলে গিয়েছিলেন।