QR Code In Vijaya Vitthala Temple

‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, মন্দির স্তম্ভের নীচের কিউআর কোড স্ক্যান করলেই বেজে উঠবে সুরধ্বনি

হাম্পির বিজয় বিট্‌ঠল মন্দিরে স্তম্ভের নীচে কিউআর কোড। তা স্ক্যান করলেই বাজবে সুর। কিন্তু কেন এমন পদক্ষেপ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫০
কিউআর কোড স্ক্যান করলেই শোনা যাবে সুর।

কিউআর কোড স্ক্যান করলেই শোনা যাবে সুর। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতীয় স্থাপত্যকীর্তির এ এক বিস্ময়কর সৃষ্টি! সামান্য আঘাতে পাথরের স্তম্ভে বেজে ওঠে সরগম। সেই ধ্বনি পাথুরে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ধ্বনিত হয় গোটা চত্বরে। তুঙ্গভদ্রার তীরে প্রাচীন নগরী হাম্পি। সেই স্থানেই রয়েছে ভারতীয় স্থাপত্যের এক অনুপম নিদর্শন বিজয় বিট্‌ঠল মন্দির।

Advertisement

সেখানেই রয়েছে ‘সুরমণ্ডপ’। এই মন্দিরের সুরেলা ধ্বনি শোনার জন্যই এবার কিউআর কোডের ব্যবস্থা করল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। পর্যটকেরা সেই কোডের সামনে মোবাইল স্ক্যানার ধরলেই খুলে যাবে লিঙ্ক, বেজে উঠবে সুরেলা ধ্বনি। সেই সঙ্গে মোবাইলের পর্দায় ফুটে উঠবে মন্দিরের ভাস্কর্য, স্থাপত্যের ইতিবৃত্তের সংক্ষিপ্তসার।

কিন্তু কেন এমন আয়োজন? তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক এই মন্দিরের ইতিহাস। কর্ণাটকের পূর্ব-মধ্যস্থলে বিজয়নগর জেলায় অবস্থিত বিজয় বিট্‌ঠল মন্দির। বিশাল চত্বরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে, প্রাঙ্গণে রয়েছে গ্রানাইট পাথরের তৈরি একটি রথ। তার গায়ে গায়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য। এই রথের ছবি দেখা যায় ৫০ টাকার নোটে। পাথরের উপরে পাথর চাপিয়ে তৈরি করা প্রতিটি শিল্পকর্ম বিস্ময়কর।

হাম্পি জুড়ে দ্রাবিড় স্থাপত্য, মন্দির ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে এখানে। চোখজুড়নো এই সব স্মারক সংগ্রহশালার জন্য হাম্পি ইউনেস্কো দ্বারা 'বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান' হিসাবে স্বীকৃত। এক সময় শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষায় ইতিহাসের পাতায় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিজয়নগর সাম্রাজ্য। রাজারা হিন্দুধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে সেই সময়ে সমগ্র বিজয়নগর সাম্রাজ্য জুড়ে গড়ে ওঠে প্রচুর মন্দির। তারই মধ্যে একটি বিট্‌ঠল মন্দির। খ্রিষ্টিয় পঞ্চদশ শতকে রাজা দ্বিতীয় দেবরায়ের আমলে এই মন্দিরের নির্মিত হয়। রাজা কৃষ্ণদেবরায় এই চত্বরে আরও একাধিক মন্দির নির্মাণ করেন।

চত্বর জুড়ে একাধিক মন্দির রয়েছে। মূল মন্দির চিহ্নিত 'মহামন্তপ' বা ‘মহামণ্ডপ’ নামে। গ্রানাইট পাথর দিয়ে সমগ্র মন্দির নির্মিত। এখানে রয়েছে ৪০টি পিলার বা স্মম্ভ। সেগুলির উচ্চতা ১০ ফুট। বিজয় বিট্‌ঠল মন্দিরের আরাধ্য বিট্‌ঠল আসলে বিষ্ণুরই রূপ। এ ছাড়াও নজর কাড়ে মন্দিরের রথাকৃতি। আর রয়েছে ‘সুরমণ্ডপ’। গ্রানাইটের ৫৬টি স্তম্ভে তৈরি এই মণ্ডপে সুর যেন খেলা করে। স্তম্ভে কান পাতলে, মৃদু শব্দই সুরেলা ধ্বনিতে পরিণত হয়। নেপথ্যে রয়েছে এই পাথরের অভ্যন্তরে থাকা ‘ক্রিস্টাল ফরমেশন’।

এই মন্দিরে এলে গাইড স্তম্ভের গায়ে নানা রকম বোল তুলে পর্যটকদের মনোরঞ্জন করতেন। কিন্তু প্রাচীন এই মন্দিরে এই ভাবে সুরস্তম্ভে আঘাতের ফলে স্থাপত্যের ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় ২০০৮ সাল থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুরধ্বনি শ্রবণ থেকে যাতে পর্যটকেরা বঞ্চিত না হন, সে জন্যই এই কিউআর কোড বসানোর পরিকল্পনা বলে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তরফে জানানো হয়েছে।

বিজয় বিট্‌ঠল মন্দির।

বিজয় বিট্‌ঠল মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, হাম্পি-র এক আধিকারিক নিখিল দাস, একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, আপাতত ১০টি স্তম্ভে কিউআর কোড বসানো হলেও, আগামী দিনে ৫৬টি স্তম্ভেই তা বসানো হবে। পরবর্তীতে ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়েরও ভাবনা রয়েছে।

আর এক আধিকারিক অনিরুদ্ধ দেশাই বলছেন, পর্যটকেরা যাতে এই সুর থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত না হন তাই এমন ভাবনা। প্রতিটি পিলার বা স্তম্ভ থেকে কেমন সুর তৈরি হতে পারে, তার উদাহরণ স্বরূপ ২৫ সেকেন্ডের ক্লিপ তুলে ধরা হয়েছে।

অনেক পর্যটক, ফোটোগ্রাফার ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় প্রাচীন মন্দিরের স্থাপত্যকীর্তির ক্ষতি এড়ানো যাবে।

আরও পড়ুন
Advertisement