National Park In India

চিড়িয়াখানা নয়, সোজা হাজির হতে পারেন বাঘ-সিংহের ডেরায়, সাহস আছে তো?

ভারতের ৫ জাতীয় উদ্যান বেড়িয়ে আসতে পারেন এই শীতে। বাঘের ডেরায় ঢুকে বাঘ দেখার আনন্দই আলাদা। তবে সেখানে গেলেই যে বাঘের দেখা মিলবে, তা নয়। বরাত ভাল থাকলে চাক্ষুষ করতে পারেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৪
বাঘের ডেরায় যাবেন নাকি!

বাঘের ডেরায় যাবেন নাকি! ছবি: সংগৃহীত।

এই শীতে কোথায় যাবেন ভাবছেন? বাঘের ডেরায় হানা দেবেন নাকি! না, না, কোনও চিড়িয়াখানা নয়, একেবারে জঙ্গলের গহীনে, যেখানে সদর্পে ঘুরে বেড়ায় বাঘেরা। ছানাপোনা নিয়ে বসতও করে। শুধু বাঘ কেন, যেখানে গেলে দেখা মিলবে হাতি, বাঁদর, হরিণ, সম্বরেরও। তেমন কোথাও যাবেন ?

Advertisement

কথা হচ্ছে, জাতীয় উদ্যান নিয়ে। ভারতে এমন ১০৬টি জাতীয় উদ্যান রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার বিভিন্ন অরণ্যকে জাতীয় উদ্যানের তকমা দিয়েছে। এই জঙ্গলগুলিতে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বন্যপ্রাণেরা সুরক্ষিত বলেই ধরা হয়। অনুমতিক্রমে সেই সমস্ত জঙ্গল এলাকায় যেতে পারেন পর্যটকেরা। তবে বাঘের ডেরায় মোটেই পায়ে হেঁটে ঘোরা যায় না। বরং নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে সাফারির ব্যবস্থা থাকে। সাফারি বুক করলে প্রবেশ করা যায় জঙ্গলের গভীরে।

শুধু বাঘ নয়, কোনও জাতীয় উদ্যানের জনপ্রিয়তা সিংহের জন্য, কোনওটিতে পাওয়া যায় একশৃঙ্গ গন্ডার। এমনই ৫ জাতীয় উদ্যানের নাম জেনে নিন, যেখানে ঘুরে আসতে পারেন শীতেও।

জিম করবেট জাতীয় উদ্যান: উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে রয়েছে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৫৬ সালে বিখ্যাত শিকারি এডওয়ার্ড জেমস করবেটের নামে নামকরণ হয় এই জাতীয় উদ্যানের। ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতিও জিম করবেট জাতীয় উদ্যানের মাথাতেই। ৫২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা এই জাতীয় উদ্যানে ২০০টির বেশি বাঘের বসবাস। এ ছাড়াও হাতি, চিতাবাঘ, নীলগাই, সম্বরের দেখা মেলে এই জাতীয় উদ্যানে।

জঙ্গলের দু’টি অংশ। হালকা জঙ্গলকে বলা হয় ‘বাফার জ়োন’। গভীর জঙ্গলকে বলা হয় কোর এরিয়া। সমগ্র জঙ্গলে ৬টি জ়োন রয়েছে যেগুলিতে পর্যটকেরা ঘুরতে পারেন। এগুলি হল বিজরানি, ঝিরনা, ঢেলা, ধিকালা, দুর্গা দেবী এবং সীতাবনি জ়োন।

জঙ্গল সাফারিতে বাঘ দর্শন।

জঙ্গল সাফারিতে বাঘ দর্শন। ছবি: সংগৃহীত।

সাফারির সময়: সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং দুপুরে আড়াইটে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাফারি হয়। সকাল অথবা বিকেল, যে কোনও একটি সময় বেছে নিতে পারেন পর্যটকেরা। একটি জিপে ৬ জন বসতে পারেন। জিপপিছু খরচ সাড়ে সাত হাজার টাকা।

তাড়োবা জাতীয় উদ্যান: মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর জেলায় ১৭২৭ বর্গ কিলোমিটার পরিধি নিয়ে তাড়োবা জাতীয় উদ্যান। তাড়োবায় জঙ্গল বলতে বেশিটাই শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য, যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর বাঁশঝাড়। সঙ্গে মহুয়া, জাম, অর্জুন, বহেড়া, বিজা, ফেল আর শালগাছের সারি। আর রয়েছে সম্পূর্ণ সাদা রঙের গোষ্ট ট্রি বা ভূতগাছ। কপাল ভাল থাকলে এখানেই বাঘের সদর্প পদচারণা দৃষ্টিগোচর হতে পারে। ২০১০-এর সমীক্ষা অনুযায়ী এখানে ৪৩টি বাঘ রয়েছে। তাড়োবার মোহারলি গেট হল বাঘ দেখার সেরা প্রবেশপথ। জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত অন্ধেরি টাইগার রিজ়ার্ভে আরও কিছু প্রবেশপথ রয়েছে। এগুলি হল খুটওয়ান্ডা, কোলারা, নভেগাঁও, পাংড়ি আর জারি। জঙ্গলের গহীনে, অর্থাৎ কোর এরিয়ায় সাফারির জন্য তিনটি জ়োন আাছে— তাড়োবা, মোহারলি এবং কোলসা।

সময়: নভেম্বর মাসে সকাল ৬টা এবং ডিসেম্বর মাসে সকাল সাড়ে ছটা থেকে জিপ সাফারি শুরু হয়। সকাল ছাড়া দুপুর আড়াইটে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত একটি সাফারি হয়। একটি সাফারিতে জিপ খরচ পড়ে ৫ হাজার টাকা।

পেঞ্চ জাতীয় উদ্যান: ‘জঙ্গল বুক’-এর মোগলি, বালু, বাগিরা চরিত্রগুলিকে মনে আছে? লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং এই চরিত্রগুলিকে কিন্তু এই জঙ্গল থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া ও সিওনি জেলার কেন্দ্রে অবস্থিত পেঞ্চ জাতীয় উদ্যান। তবে এর কিছুটা অংশ রয়েছে মহারাষ্ট্রেও। কেবল বাঘ নয়, জঙ্গল জুড়ে রয়েছে সম্বর, নীলগাই, হরিণ, নেকড়ে, চিতা, ময়ূরের আনাগোনা। আটটি জ়োনে পেঞ্চে সাফারি হয়। তোরিয়া, কামাঝিরি, ঝামতারা, তেলিয়া, রুখাদ, সিলারি, খুরসাপার, চোরবাহুলি।

জঙ্গলের মধ্যে নজরমিনার।

জঙ্গলের মধ্যে নজরমিনার। ছবি:সংগৃহীত।

সাফারির সময়: সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা এবং দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জিপ সাফারি হয়। সকাল বা বিকেল, যে কোনও একটি সময় বুকিং করতে পারেন। এখানে প্রতি জিপে খরচ সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ৬ জন তাতে বসতে পারেন।

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান: বাঘের জন্য নয়, অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের জনপ্রিয়তা একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য। এই বন্যপ্রাণ শুধু এখানেই দেখা যায়। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পেয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। শুধু গন্ডার নয়, বাইসন, হাতি, হরিণ, বাঘ-সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণের বসত এই উদ্যান। এখানে রয়েছে কয়েকশো প্রজাতির পাখি। বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে। গোলাঘাট এবং নগাঁও জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গল। চারটি জায়গায় সাফারি হয়, মিহিমুখ, বাগোরি, আগারাটোলি, ঘোরাকাটি।

সাফারির সময়: জিপ সাফারি এবং হাতি সাফারি হয়। জিপ সাফারি হয় সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং দুপুর ২টো থেকে ৪টে। এ ছাড়া হাতির পিঠে চেপেও জঙ্গলে ঘোরা যায়। ভোর সাড়ে ৫টা সাড়ে ৬টা এবং সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা।

গির জাতীয় উদ্যান: বাঘের ডেরা নয়, সিংহের ডেরায় ঢুকতে গেলে যেতে হবে গুজরাতে। কপাল ভাল থাকলে এই জঙ্গলেই দেখা মিলতে পারে এশিয়াটিক লায়নের। জাতীয় উদ্যানে সাফারির জন্য আটটি রাস্তা আছে। শাসন থেকে শুরু করে খোকরা, শ্রীভান-সহ একাধিক জায়গা ঘুরে জিপ এসে থামে শাসনে। এক সময় এই জায়গা ছিল জুনাগড়ের নবাবের শিকারের স্থান। পরে তা জাতীয় উদ্যান করে ভারত সরকার। ২০১৫ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী এখানে ৫২৩টি সিংহ ছিল। হরিণ, লেপার্ড, জঙ্গল ক্যাট-সহ প্রচুর পশুপাখির আস্তানা এই জঙ্গল। এখানে অন্তত ৩০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।

সাফারির সময়: সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে ন’টা, সাড়ে ন’টা থেকে সাড়ে ১২টা এবং দুপুর তিনটে থেকে ছ’টা, তিন বার সাফারি হয়।

মনে রাখা দরকার: যে কোনও জায়গায় আগাম বুকিং করে যাওয়া ভাল। না হলে পর্যটন মরসুমে অতিরিক্ত ভিড়ে সাফারির সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। অবশ্যই পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। সাফারি বুক করা থাকলেও পরিচয়পত্র ছাড়া জঙ্গলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না।

আরও পড়ুন
Advertisement