উপযুক্ত পরিকল্পনা করলে সাধ্যের মধ্যে মালয়েশিয়া ভ্রমণও সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
সাগর, গুহা, মন্দির, মসজিদ, মন ভাল করা প্রকৃতি— সবই আছে এ দেশে। খরচও আকাশছোঁয়া নয়। ভারত থেকে কম খরচে বিদেশভ্রমণে যেতে চান? তা হলে ঘুরে নিতে পারেন মালয়েশিয়া।
ভারত থেকে কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের তালিকায় নাম থাকে তাইল্যান্ডের। তবে উপযুক্ত পরিকল্পনা করলে সাধ্যের মধ্যে মালয়েশিয়া ভ্রমণও সম্ভব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ক্রমশই জনপ্রিয়তা লাভ করছে দেশটি । ২০২৪ সালে ভারতীয়দের জন্য ভিসা ছাড়াই মালয়েশিয়া ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছিল সেই দেশের সরকার। পর্যটনের প্রসারে সেই সুযোগই বহাল খাকছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। ফলে, চলতি বছরেও মালয়েশিয়া ভ্রমণে ভিসা খরচ লাগবে না ভারতীয়দের। শুধু যাওয়ার জন্য শুধু মালয়েশিয়া ডিজ়িটাল অ্যারাইভাল কার্ড (এমডিএসই )-এর জন্য অনলাইনে ফর্ম ভরতে হবে। তা হলেই এক মাসের জন্য এই দেশে ঘুরতে বা কাজের জন্য থাকতে পারবেন ভারতীয়েরা।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর। ঝাঁ- চকচকে একটি শহর। দেশের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে দক্ষিণ চিন সাগর। সাগর মালয়েশিয়াকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। সাধারণত লোকজন কুয়ালালামপুরে থেকে আশপাশ ঘুরে নেন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম ঠিকানা হল পেনাং। মোটামুটি ৬-৭ দিনে মালয়েশিয়া ঘোরা সম্ভব।
কুয়ালালামপুর ভ্রমণ: কুয়ালালামপুরের নৈশজীবন থেকে শুরু করে শহুরে জীবনযাত্রার আকর্ষণ কিছু কম নয়। শহরে রয়েছে আকাশচুম্বী মিনার।পড়ন্ত বিকেলে শহরের রূপ উপভোগে চলে যেতে পারেন কে এল টাওয়ার এবং প্যাট্রনস টুইন টাওয়ারে। কেএল টাওয়ারে স্কাই ডেক দেখে সমগ্র শহরের রূপ উপভোগ করা যায়। এর অদূরেই রয়েছে প্যাট্রনস টুইন টাওয়ার, যার উচ্চতা ৪৫১ মিটার। ৮৮ তলা উঁচু। এক জোড়া টাওয়ার পাশাপাশি। টাওয়ারের কাছেই রয়েছে সাজানো-গোছানো কেএলসিসি পার্ক।
বাটু কেভ: মালয়েশিয়ার আর একটি আকর্ষণ বাটু কেভ। বিশাল গুহাটি ভাল ভাবে ঘুরে দেখতে সময় লেগে যায় ২-৩ ঘণ্টা। গুহায় যেতে হলে ২৭২টি সিঁড়ি চড়তে হয়। গুহার সামনে রয়েছে কার্তিকের সুউচ্চ মূর্তি। সিঁড়ি দিয়ে পৌঁছনো যায় বিশাল গুহার সামনে। ভিতরে রয়েছে আরও তিনটি গুহা। তার একটিতে মন্দির, একটিতে রয়েছে আর্ট গ্যালারি এবং তৃতীয়টিতে মিউজ়িয়াম।
কুয়ালালামপুরে ছোটখাটো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। এখানকার নৈশজীবন, রেস্তরাঁ, পানশালাও পর্যটকেরা উপভোগ করেন। মোটমুটি ২-৩ দিনে কুয়ালালামপুর ঘোরা হয়ে যায়।
পেনাং: মালয়েশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য জনপ্রিয় পেনাং। সাজানো-গোছানো জনপদ। জর্জ টাউন, সমুদ্র, পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকেরা পেনাংকে বেছে নেন। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পেয়েছ পেনাং। এখানকার স্থাপত্য, কারি নুডলসের জনপ্রিয়তা জগৎজোড়া। এখানে রয়েছে মিউজ়িয়াম, ডাচ স্কোয়ার, ছবির মতো সুন্দর সৈকত।
কুয়ালালামপুর এবং পেনাং মিলিয়ে মোটামুটি ৬-৭ দিন লাগে ঘুরতে। কুয়ালালামপুর থেকে দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক শহর মলাক্কাও।
খরচ কী ভাবে কমানো যাবে?
বিমান ভাড়া: ভারতের বড় বড় বিমানবন্দরগুলি থেকে সরাসরি কুয়ালালামপুরের বিমান মেলে। যাওয়া-আসা নিয়ে মাথাপিছু বিমান খরচ পড়ে ১০-২০ হাজার টাকা। মাস দুয়েক আগে টিকিট কাটলে ভাড়া আয়ত্তে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিমান পরিবহণ সংস্থা মাঝেমধ্যে চমকপ্রদ সুযোগ-সুবিধা দেয়। তেমন সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বিমান ভাড়া অনেক কম হয়ে যায়।
থাকা: মালয়েশিয়ায় একলা থাকার জন্য হস্টেল যেমন রয়েছে, তেমনই বিভিন্ন মানের হোটেলও রয়েছে। ১২০০-১৫০০ টাকায় হস্টেল বা হোটেল পাওয়া যায়। মধ্যম মানের হোটেলে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা এক রাতের খরচ। ৪-৫ হাজার টাকায় এখানে ভাল মানের হোটেল পাওয়া যায়। বাজেট অনুযায়ী যে কোনও হোটেল, হস্টেল বেছে নিতে পারেন।
যাতায়াত: মনোরেল, বাস, ক্যাব, নৌকা সবই ব্যবহার করতে পারবেন ঘোরার জন্য। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার জন্য বাস, ইলেকট্রিক ট্রেন পরিষেবা, ট্যাক্সি আছে। শহর ঘোরার জন্য বিশেষ বাস পরিষেবা রয়েছে। যেখানে বাসের খোলা ছাদে বসে শহর ঘোরা যায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে এখানে গাড়ি ভাড়া নিয়েও ঘোরা যায়। একটু পরিকল্পনা করে যেতে পারলে পকেট বাঁচিয়েই ঘোরাঘুরি করা সম্ভব।
খাওয়া: মালয়েশিয়ার স্থানীয় খাবার চেখে দেখতে পারেন। খরচ বাঁচাতে বিভিন্ন মল থেকে প্যাকেটজাত খাবার কিনে সঙ্গে রাখতে পারেন। এখানে খাওয়ার খরচ খুব বেশি নয়।
তবে কয়েকটি জিনিস মনে রাখা দরকার। বিনামূল্যের ভিসা মাত্র এক মাসের জন্য। মালেয়শিয়া যাওয়ার আগে কোথায়, কত দিন থাকবেন তার তথ্য সঙ্গে রাখতে হবে। অভিবাসনের সময় সেগুলি দেখতে চাইতে পারে। পাসপোর্ট-সহ সমস্ত রকম পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে আমেরিকান ডলার বা সে দেশের মুদ্রা। ভারতীয় টাকা মালয়েশিয়ায় চলে না।