বেড়ানো হবে, কাজও হবে। পাহাড় না সমুদ্র কোথায় যেতে চান? ছবি: সংগৃহীত।
কংক্রিটের চার দেওয়াল নয়। যদি সুযোগ থাকে পাহাড়ের বুকে, নদীর ধারে বসে কাজ করার, তবে কেমন হয়?
কোভিড পরিস্থিতির পর থেকেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ জনপ্রিয়। আরও একটি নতুন শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে নতুন প্রজন্ম, ‘ওয়ার্কেশন’, অর্থাৎ বেড়াতে গিয়ে কাজ। কোভিডের আতঙ্কে কাটিয়ে জীবন আবার ছন্দে ফিরেছে অনেক দিনই। তবে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সংস্কৃতি এখনও বহু পেশাতেই বহাল রয়েছে। কাজের চাপে লম্বা ছুটি না পেলে ল্যাপটপ সঙ্গে নিয়েই বরং বেরিয়ে পড়তে পারেন এমন কোনও জায়গায়, যেখানে থাকবে পাহাড়, নদী, গাছগাছালি। বিরতির সময় হেঁটে নিতে পারবেন চা-বাগানে। কিংবা সান্ধ্যভ্রমণ করা যাবে সমুদ্র সৈকতে।
কাসোল, হিমাচল প্রদেশ
খরস্রোতা পার্বতীর তীরে ছবির মতো সাজানো জনপদ কাসোল। পাহাড়, নদীর সান্নিধ্য তো রয়েইছে। পাশাপাশি ক্যাফে, হস্টেল, সস্তার হোম স্টে, ইন্টারনেট সংযোগ, অফিসের কাজ করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবটাই মজুত রয়েছে এখানে। হিমাচলি খাবারের পাশাপাশি ইজরায়েলেরও রকমারি পদ পাওয়া যায় এখানে। দিনভর কাজের পর নৈশজীবন উপভোগে রয়েছে ক্যাফে, আড্ডা দেওয়ার জায়গা।
পাহাড়ি গ্রামটি ছবির মতোই সুন্দর। ঘোরার জায়গার কোনও অভাব নেই। সপ্তাহশেষে ছুটির দিনে এখান থেকেই ট্রেক করা যায় তোস গ্রাম, ক্ষীরগঙ্গা। ঘুরে নেওয়া যায় মণিকরণ ও গুরুদ্বারে। কাসোলেই রয়েছে গুম্ফা, বৌদ্ধ গুহা। কোথাও যেতে না চাইলে নদীর ধারের কোনও ক্যাফেতে বসে কফির কাপে চুমুক দিয়েও দিব্যি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়। এখানে প্রচুর একলা ভ্রমণার্থী পাবেন। চাইলে কারও সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করে দিব্যি নতুন বন্ধুও পাতিয়ে ফেলতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
ভুন্টার থেকে কাসোলের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। ভুন্টারে বিমানবন্দর আছে। ট্রেন বা বিমানে দিল্লি গিয়ে, সেখান থেকে বাসে পৌঁছনো যায় ভুন্টার। সেখান থেকে যেতে হবে কাসোল। চণ্ডীগড় দিয়েই কাসোল যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
কাসোলে হস্টেল, হোম স্টে, হোটেল রয়েছে। বিভিন্ন মানের ও দামের।
দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
দার্জিলিং বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিনটি ছবি। শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা, টয় ট্রেন ও চা। দার্জিলিঙে এসে অনেকেই এখন বেশ কিছু দিন থেকে অফিসের কাজকর্ম করেন। দার্জিলিঙের ম্যালের এলাকা কিছুটা ঘিঞ্জি হলেও, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার এদিক-ওদিক গেলেই রয়েছে হোম স্টে। বেশির ভাগ জায়গাতেই ইন্টারনেট নিয়ে বিশেষ অসুবিধা নেই। অনেক হোম স্টে ওয়াইফাই-এর সুবিধাও দেয়।
দার্জিলিংকে ওয়ার্কেশন হিসাবে বেছে নেওয়ার সুবিধা কাজের শেষে ম্যালে চলে যাওয়া যায়। সেখানে ক্যাফে, দোকানপাট, রেস্তরাঁ, পানশালা— কোনও কিছুরই অভাব নেই। চাইলে সপ্তাহান্তে ঘুরে নিতে পারেন পাহাড়ি কোনও গ্রামে। এখান থেকে কালেজ ভ্যালি, তাকদা, তাবাকোশি, বিজনবাড়ি— যে কোনও জায়গায় ঘোরা যায়। কালেজ ভ্যালি, বিজনবাড়ির অনেক হোম স্টেতেই হাইস্পিড ইন্টারনেট রয়েছে। ফলে কাজের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে এনজেপি এসে শেয়ার গাড়িতে দার্জিলিং পৌঁছনো যায়। কলকাতা থেকে বাসে শিলিগুড়ি পৌঁছে গাড়িতে দার্জিলিং আসা যায়। বিমানপথে এলে বাগডোগরা হয়ে আসতে হবে।
কোথায় থাকবেন?
দার্জিলিঙে একাধিক হোটেল রয়েছে। পাওয়া যায় হোম স্টে। ওয়ার্কেশনের জন্য টানা দশ দিন বা ১৫-২০ দিন থাকতে চাইলেও একাধিক হোম স্টেতে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ দেওয়া হয়।
ভারকালা, কেরল
সমুদ্র, পাহাড়, নারকেল গাছের সারি। কেরালা বললেই দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে এমনই ছবি। জলপ্রপাত, ব্যাকওয়াটার এ রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ। পাহাড় নয়, সমুদ্র যদি ভালবাসা হয়, তা হলে ‘ওয়ার্কেশন’-এর স্থান হিসাবে ভারকালা সমুদ্র সৈকত হতে পারে সঠিক ঠিকানা।
কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম থেকে ভারকালার দূরত্ব ৪১ কিলোমিটার। এখানে হোটেল রয়েছে, আছে হস্টেলও। আর আছে কেরলের স্থানীয় খাবার। ভারকালার সৌন্দর্যের টানে বিদেশ থেকেও পর্যটকেরা ছুটে আসেন।
এই জায়গাটি তিরুঅনন্তপুরম থেকে খুব বেশি দূরে নয়। গণপরিবহণ ব্যবস্থাও ভাল। বাইক ভাড়া নিয়েও আশপাশের জায়গা ঘুরে দেখা যায়।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ট্রেনে, বিমানপথে কেরল যাওয়া যায়। এর্নাকুলাম জংশন স্টেশন, তিরুঅনন্তপুরম সেন্ট্রাল স্টেশনে নেমে ভারকালা গাড়িতে বা বাসে যেতে পারেন। তিরুঅনন্তপুরমে বিমানবন্দরও রয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
একটি নামী সংস্থার হস্টেল রয়েছে এখানে। সেখানে থেকে কাজ করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের বন্দোবস্ত রয়েছে। এ ছাড়া হোটেলও আছে।