ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে, তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কুস্তিগিরেরা। তাঁদের অভিযোগ, বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে যে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তাঁরা স্বচ্ছতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদন্ত চলাকালীন ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠেরা কুস্তিগির ও তাঁদের পরিবারকে ভয় দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ যে ১৬০০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে তাতে এই বিষয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মেরি কমের নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছে ই-মেল করে অভিযোগ করেছিলেন কুস্তিগিরেরা। আরও বলা হয়েছে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে বয়ান বদলের জন্য তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছে।
ই-মেলে জানানো হয়েছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে তদন্ত কমিটির সামনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল কুস্তিগিরদের। সেখানে কুস্তিগিরদের জবানবন্দি নেওয়ার সময় সব রকমের গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত ছিল। অভিযোগ, যে ঘরে জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছিল তার বাইরে ব্রিজভূষণের তিন ঘনিষ্ঠ জয় প্রকাশ, মহাবীর বিষ্ণোই ও দিলীপ ঘুরঘুর করছিলেন। সেখানে তাঁদের থাকারই কথা নয়। কুস্তিগিরেরা কী বয়ান দিচ্ছিলেন তা ওই তিন ব্যক্তি শুনতে পাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কুস্তিগিরদের আরও অভিযোগ, সেখানে যে কুস্তিগিরেরা জবানবন্দি দিতে এসেছিলেন তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই তিন ব্যক্তি। তাঁদের বয়ান বদলের চাপ দেওয়া হচ্ছিল। বয়ান রেকর্ড করার সময় সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রাখার দায়িত্ব ছিল কমিটির। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই অভিযোগ কুস্তিগিরদের।
ই-মেলে কুস্তিগিরদের আরও অভিযোগ, ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তার বাইরেও এক ব্যক্তি বয়ান রেকর্ডের সময় ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কুস্তিগিরদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। ওই ব্যক্তি কে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কুস্তিগিরদের। তদন্তের জন্য যে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার মাথায় ছিলেন মেরি কম। বাকি সদস্যেরা হলেন, অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত, কমনওয়েলথে সোনাজয়ী কুস্তিগির ববিতা ফোগট, প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তৃপ্তি মুরগুন্ডে এবং স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই)-এর দুই আধিকারিক রাধিকা শ্রীমানন্দ ও রাজেশ রাজাগোপালন। এই ছ’জনের বাইরে আর কার কথা কুস্তিগিরেরা বলতে চেয়েছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।
কমিটির তদন্তে খুশি নন দলেরই সদস্য ববিতা। তাই কমিটির ফাইনাল রিপোর্টে সই করেননি তিনি। ববিতার দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করা হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘‘শুধু মামলার সঙ্গে যুক্তদেরই ডাকা হয়েছে। নিরপেক্ষ কারও বয়ান নেওয়া হয়নি। নিয়মরক্ষার জন্যই তদন্ত করতে হয়েছে। কোনও সত্যি বার করে আনার চেষ্টা হয়নি। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার পূর্ণ অধিকার ছিল কমিটির। কিন্তু সে সব কিছুই করা হয়নি।’’
নাবালিকা-সহ ছয় মহিলা কুস্তিগিরকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে কুস্তিদিরদের ধর্নায় উত্তাল হয়েছে দিল্লি। বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিকদের চাপে অবশেষে তদন্ত করেছে দিল্লি পুলিশ। চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি অগস্ট মাসে হওয়ার কথা।