CWG 2022

Wrestling: অলিম্পিক্স, এশিয়াডে মুখ থুবড়ে পড়বেন ভারতীয় কুস্তিগিররা? সোনার উচ্ছ্বাস কি থাকবে না

এ বারের কমনওয়েলথে কুস্তিতে ছ’টি সোনা জিতেছে ভারত। কিন্তু অলিম্পিক্স, এশিয়াড ও বিশ্ব কুস্তিতে সেই সাফল্য নেই কেন?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ১৪:১২
বজরং পুনিয়া।

বজরং পুনিয়া। ছবি পিটিআই

কমনওয়েলথ গেমসে বরাবরই ভারতের কুস্তিগিরদের দাপট দেখা যায়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কুস্তি থেকে শুধু ছ’টি সোনাই আসেনি, যে ১২টি বিভাগে নেমেছিলেন ভারতের কুস্তিগিররা, প্রত্যেকটি থেকেই কোনও না কোনও পদক এসেছে। কুস্তি থেকে সবচেয়ে বেশি সোনা জিতেছে ভারত। পুরুষদের ফ্রিস্টাইল বিভাগে সোনা জিতেছেন বজরং পুনিয়া, দীপক পুনিয়া, রবি দাহিয়া এবং নবীন। মহিলাদের বিভাগে সোনা বিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিকের। কিন্তু অলিম্পিক্স, এশিয়াড বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় কুস্তিগিরদের এই সাফল্য দেখা যায় না কেন? কোথায় সমস্যা হয় তাঁদের?

ব্যর্থতার মূল কারণ হল, প্রতিযোগিতার মান। কমনওয়েলথে যে সব দেশ অংশ নেয়, তাদের কেউই কুস্তিতে শক্তিশালী নয়। নাইজেরিয়া, কানাডা বা পাকিস্তানের মতো দেশের বেশির ভাগ প্রথম সারির কুস্তিগির বড় প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতামানই পেরোতে পারেন না। ফলে তাঁদের মান যে ভাল হবে না, এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অলিম্পিক্স, এশিয়ান গেমস বা বিশ্ব কুস্তিতে শক্তিশালী দেশ বলে যারা পরিচিত, সেই ইরান, কিরঘিজস্তান, আজারবাইজান, উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান, জর্জিয়া, তুরস্ক, বেলারুস, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, আমেরিকা এবং আর্মেনিয়ার মতো দেশগুলি অংশ নেয়। কমনওয়েলথে তারা কেউই নেই। ফলে ভারতীয় কুস্তিগিরদের লড়াই অনেক সহজ।

Advertisement

কতটা সহজ? পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে। কমনওয়েলথ গেমসে কুস্তিতে সামগ্রিক পদকজয়ের বিচারে কানাডার পিছনেই রয়েছে ভারত। এখনও পর্যন্ত ৪৯টি সোনা-সহ মোট ১১৪টি পদক জিতেছে। কানাডার রয়েছে ৬৯টি সোনা, ৪৮টি রুপো এবং ৩০টি ব্রোঞ্জ।

বিনেশ ফোগাট।

বিনেশ ফোগাট। ছবি পিটিআই

এ বার অলিম্পিক্স এবং বাকি প্রতিযোগিতাগুলিতে ভারতের পারফরম্যান্স বিচার করা যাক। আশ্চর্য হলেও এটাই সত্যি, স্বাধীন ভারতে অলিম্পিক্সে প্রথম এসেছিল কুস্তি থেকেই। ১৯৫২ হেলসিঙ্কি অলিম্পিক্সে পুরুষদের ৫৭ কেজি বিভাগে পদক পান কেডি যাদব। তার পর কুস্তিতে পদক আসতে লেগে যায় ৫৬ বছর! ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জেতেন সুশীল কুমার। গত চারটি অলিম্পিক্সে প্রতি বারই কুস্তি থেকে পদক এসেছে। এখনও পর্যন্ত মোট সাতটি পদক রয়েছে অলিম্পিক্সে। সুশীল একাই দু’বার জিতেছেন। কেডি যাদব বাদে বাকিরা হলেন যোগেশ্বর দত্ত (২০১২), সাক্ষী মালিক (২০১৬), রবি দাহিয়া (২০২০) এবং বজরং পুনিয়া (২০২০)।

এশিয়ান গেমসে ১৯৮৬ সোল গেমসে সোনা জেতেন ভারতের কর্তার সিংহ। তার পর টানা সাতটি এশিয়ান গেমসে কোনও সোনা আসেনি। ২০১৪-য় খরা কাটান যোগেশ্বর দত্ত। ৬৫ কেজি বিভাগে সোনা জেতেন। এশিয়ান গেমসে এখনও পর্যন্ত ভারত জিতেছে ১১টি সোনা-সহ ৫৯টি পদক। গত বার জাকার্তা গেমসে বজরং এবং বিনেশ সোনা জেতেন। ব্রোঞ্জ পান দিব্যা কাকরান। ১৮ জন কুস্তিগির এশিয়ান গেমসের যোগ্যতা অর্জন করেন। এ বার কমনওয়েলথের পরেই এশিয়ান গেমস হওয়ার কথা ছিল। কোভিডের কারণে প্রতিযোগিতা এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ কুস্তিতে এখনও পর্যন্ত ২০টি পদক জিততে পেরেছে ভারত। মাত্র একটি সোনা রয়েছে। ২০১০ সালের মস্কো বিশ্ব কুস্তিতে সেটি জেতেন এখন জেলবন্দি কুস্তিগির সুশীল কুমার। এই প্রতিযোগিতায় একাধিক পদক রয়েছে একমাত্র বজরংয়ের। একটি রুপো এবং দু’টি ব্রোঞ্জ পেয়েছেন তিনি। ২০১৯ বিশ্ব কুস্তি সবচেয়ে সফল গিয়েছে ভারতের। সে বার পাঁচটি পদক পায় তারা। বজরং, দীপক, রবি ছাড়াও রাহুল আওয়ারে এবং বিনেশ পদক জেতেন। এ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে ১০ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর, সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। গত বার বিশ্ব কুস্তি থেকে মাত্র দু’টি পদক এসেছিল। অংশু মালিক রুপো এবং সরিতা মোর ব্রোঞ্জ পান। তবে এটাও ঠিক, অলিম্পিক্সে যে প্রতিযোগীরা গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে বিশ্ব কুস্তিতে অংশ নেননি।

এশিয়া বা বিশ্ব মঞ্চে যে তাঁরা পিছিয়ে, এটা স্বীকার করে নিচ্ছেন এ বারের কমনওয়েলথে সোনাজয়ী রবি দাহিয়া। এক ওয়েবসাইটে বলেছেন, “এশিয়ান গেমস বা বিশ্ব কুস্তির মান অনেক কঠিন। কুস্তির শক্তিধর দেশগুলির প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে খেলতে হয় ওখানে। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার চাপও থাকে।”

পুরুষদের ফ্রিস্টাইল কুস্তির কোচ বিনোদ কুমার বলেছেন, “এশিয়াড বা বিশ্ব কুস্তির জন্য প্রস্তুত হওয়ার মঞ্চ হিসাবেই কমনওয়েলথকে দেখা উচিত। মধ্য এশিয়া, জাপান, চিন, ইরানের মতো দেশের কুস্তিগিররা খেলে না। পরের বছর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পর পর এশিয়ান গেমস এবং বিশ্ব কুস্তিতে খেলতে হবে।”

ফলে কমনওয়েলথের সাফল্যে মাথা ঘুরে গেলে চলবে না, এমনটা মনে করছেন অনেকেই। আসল লড়াই এখনও বাকি।

আরও পড়ুন
Advertisement