দীর্ঘ ৪১ বছর পর পদক ভারতের ঘরে। ছবি রয়টার্স
ভারতীয় ক্রিকেটে হার্দিক পাণ্ড্যের নাম প্রত্যেকেই শুনেছেন। কিন্তু এখন ভারতীয় হকিতেও এখন দাপাচ্ছেন আর এক হার্দিক। ইনি হার্দিক সিংহ। জাতীয় দলে অপেক্ষা করে থেকেও সুযোগ না পেয়ে একসময় যিনি খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।
পঞ্জাবের জালন্ধরের খুসরোপুর গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন হার্দিক। এমন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন যাঁরা পাঁচ পুরুষ ধরে হকি খেলছে। ছোটবেলায় বাবা বরিন্দরপ্রীত সিংহ এবং ঠাকুর্দা প্রীতম সিংহ রায়ের সৌজন্যে হকি খেলায় হাতেখড়ি। দু’জনেই চুটিয়ে হকি খেলেছেন। ভারতীয় মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক রাজবীর কৌর তাঁর কাকিমা। কাকা গুরমাইল সিংহ ১৯৮০ সালের সোনাজয়ী হকি দলের সদস্য ছিলেন।
তবে সব থেকে বেশি সাহায্য পেয়েছেন ভারতের অন্যতম সেরা ড্র্যাগ ফ্লিকার এবং কাকা যুগরাজ সিংহের থেকে। হার্দিক বলেছেন, “১৪ বছর বয়সে আমি মোহালি অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হই। খুব দ্রুত এগিয়ে গিয়েছিলাম। ভারতের হয়ে সাব-জুনিয়রেও খেলেছি। কিন্তু জাতীয় দলের দরজা কিছুতেই আমার সামনে খুলছিল না। ২০১৭-এ ভেবেছিলাম খেলাই ছেড়ে দেব এবং নেদারল্যান্ডসে গিয়ে ক্লাব হকি খেলব।” হার্দিকের সংযোজন, “এই সময় কাকা যুগরাজ আমাকে প্রচণ্ড সাহায্য করেছেন। আমাকে ফের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে বলেন। তারপর আমি দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই এবং আরও পরিশ্রম করতে শুরু করি। সেই পরিশ্রমই আজ ফল দিচ্ছে।” ভারতের সেই হার্দিক ভারতের পদকজয়ের ম্যাচে একটি গোল করলেন। প্রতিযোগিতায় পাঁচ গোল রয়েছে তাঁর।
HISTORY HAS BEEN REWRITTEN! THEY HAVE ENDED THE MEDAL DROUGHT!🥉#IND beat #GER by 5-4 to clinch the #bronze medal at #Tokyo2020……the FIRST #hockey Olympic medal after 41 years! #UnitedByEmotion | #StrongerTogether
— #Tokyo2020 for India (@Tokyo2020hi) August 5, 2021
Historic! A day that will be etched in the memory of every Indian.
— Narendra Modi (@narendramodi) August 5, 2021
Congratulations to our Men’s Hockey Team for bringing home the Bronze. With this feat, they have captured the imagination of the entire nation, especially our youth. India is proud of our Hockey team. 🏑
রূপিন্দর পাল সিংহের জীবনটাও অনেকটা একইরকম। তাঁর বাবা হরিন্দর সিংহ পঞ্জাবের হয়ে হকি খেলেছেন। ছোটখাটো ব্যবসাও করতেন। সেই ব্যবসা ডুবে যাওয়ায় তাঁকে খেলা ছাড়তে হয়। চেয়েছিলেন দুই ছেলে হকি খেলোয়াড় হোক। রূপিন্দরের দাদাও রাজ্যস্তরের খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু ভাইকে আরও উঁচুতে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই নিজে খেলা ছেড়ে চাকরি করতে শুরু করেন, যাতে ভাইয়ের খেলার অর্থ জোগাড় করতে কোনও সমস্যা না হয়।
পয়সা বাঁচাতে একসময় ট্রেনের স্লিপার শ্রেণিতে যাতায়াত করতেন রূপিন্দর। অর্ধেক দিন খাবার খেতেন না টাকা জমাবেন বলে। তিনিই আজ ভারত তথা গোটা বিশ্বের অন্যতম সেরা ড্র্যাগ ফ্লিকার। ২৫ লক্ষ টাকার গাড়ি চড়েন। পরিবারকেও সুখের মুখ দেখিয়েছেন তিনি। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন একাধিক বার। কিন্তু পরিশ্রম করে দ্রুত ফিরে এসেছেন। এ বারের অলিম্পিক্সে চারগোল হয়ে গিয়েছে তাঁর। তার মধ্যে জার্মানির বিরুদ্ধে বৃহস্পিতবার ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচেও গোল রয়েছে।
বৃহস্পতিবার জার্মানির বিরুদ্ধে ভারতের দূর্গ রক্ষা করছিলেন পি আর শ্রীজেশ। একের পর এক এক আক্রমণ ধেয়ে আসা সত্ত্বেও মাথা নত করেননি তিনি। ম্যাচ শেষের মাত্র ছয় সেকেন্ড আগে পেনাল্টি কর্নার পায় জার্মানি। দুর্দান্ত ভঙ্গিমায় সেই শট বাঁচিয়ে দেন শ্রীজেশ। গোটা ম্যাচেই অনবদ্য খেলেছেন তিনি। এর আগে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধেও দুরন্ত গোলকিপিং করেছিলেন।
কেরল থেকে খুব একটা হকি খেলোয়াড় উঠে আসতে দেখা যায় না। কিন্তু শ্রীজেশ সেখানে বিরল নাম। তিনি ছোটবেলায় স্প্রিন্ট, ভলিবল এবং লং জাম্প খেলেছেন। কিন্তু যে স্কুলে পড়তেন সেখানকার ক্রীড়াশিক্ষকই তাঁকে বলেন হকি খেলতে। উচ্চতা বেশি হওয়ায় গোলকিপার হিসেবে সুযোগ পান শ্রীজেশ। ২০০৪ সালে জুনিয়র আন্তর্জাতিক হকি দিয়ে কেরিয়ার শুরু। প্রথম দিকে খুব একটা সাফল্য পাননি। বেশিরভাগ সময়েই পরিবর্ত হিসেবে সুযোগ পেতেন। কিন্তু ২০১১-য় এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুরন্ত খেলায় জাতীয় দলের পাকাপাকি সদস্য হয়ে যান। এরপর এশিয়া কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পরপর সাফল্য পেতে শুরু করেন।
২০১৬-র রিয়ো অলিম্পিক্সে ব্যর্থতার পর ভেবেছিলেন খেলা ছেড়ে দেবেন। চোট-আঘাতে জাতীয় দল থেকে বাদও পড়েন। কিন্তু ঠিক সময়ে দলে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। সেই প্রথম ম্যাচ থেকে ভাল খেলছেন। পদক জয়ের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে তাঁরও।