ফাইল চিত্র।
পদকের রং শেষ পর্যন্ত সোনালি না হলেও কার্পেটের রঙ লালই থাকছে। অসমের প্রথম অলিম্পিক্স পদকজয়ী লাভলিনা বরগোহাঁই ৯ অগস্ট গুয়াহাটি পৌঁছবেন। সে দিন লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ বিমানবন্দরে তাঁকে লাল কার্পেট পেতে অভ্যর্থনা জানানোর সিদ্ধান্ত নিল অসম সরকার।
ইতিমধ্যে রাজ্যের ক্রীড়ানীতি অনুযায়ী লাভলিনাকে ৫০ লক্ষ টাকা ও এসিএস/এপিএস পদমর্যাদার চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। গোলাঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম বারো মুখিয়ায় স্বাধীনতার এত বছরে পরেও পাকা রাস্তা হয়নি। ঘরের মেয়ে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতায় রাস্তা পাকা হচ্ছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়!
কিন্তু সব উৎসাহের মধ্যেও মনমরা বারো মুখিয়া গ্রাম আর গ্রামের আদরের মেয়ে লাভলিনা। একলব্যের নিষ্ঠায়, আদর্শ মহম্মদ আলিকে সামনে রেখে এগোতে থাকা এই বক্সার কোয়ার্টার ফাইনালে জেতার পরে জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে পদকের অর্থ একটাই, সেটা সোনা। অসমের সাংবাদিকদের দেওয়া বার্তায় বুধবার লাভলিনা বলে দিলেন, “একটা পদক জিতেছি, তা আনন্দের। কিন্তু আজকের হারে আমি খুবই হতাশ। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী ছিল। ওর বিরুদ্ধে নেওয়া রণকৌশল কাজে আসেনি। খারাপ লাগছে। কিন্তু ভেঙে পড়ছি না। পরের বার আরও ভাল করব।”
প্রায় বছর খানেক বাড়িছাড়া লাভলিনা। তাই ৯ অগস্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিনিও। বলেছেন, “এত দিন পরে বাড়ি ফিরব, তাও আবার পাকা রাস্তা দিয়ে। ভেবেই ভাল লাগছে।” বারো মুখিয়ার বাসিন্দা টিকেন ও মামনি বরগোহাঁইয়ের তিন মেয়ে। পুত্রসন্তান না থাকায় পড়শিদের গঞ্জনাও কম শোনেননি। মা মেয়েদের বলতেন, “এমন কিছু করো, যাতে কথা শোনানো মানুষগুলোকে যোগ্য জবাব দিতে পারি।” জবাব দিয়েছেন তিন কন্যাই। তিনজনেই কিক বক্সিং শিখেছেন। দুই দিদি লিসা ও লিমা জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত খেলে এখন সিআইএসএফ এবং বিএসএফ-এ কর্মরত। ছোট মেয়ের গলায় আবার অলিম্পিকের পদক!
লাভলিনার বাবা-মা বুধবারও উৎকন্ঠায় খেলা দেখেননি। কিন্তু তাঁর বাড়িতে ছিল জনারণ্য। বারো মুখিয়া, বরপথারে বাজিও ফেটেছে অনেক। টিকেন বললেন, “আমার মেয়ের জন্য সবাই যে ভাবে প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন, প্রার্থনা করলেন, তার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে গেল। মা-বাবা হিসেবে আমরা অবশ্য গর্বিত। মেয়ের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আমি নিশ্চিত, কঠোর অনুশীলন করে, আজকের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের বার ও আরও ভাল ফল করবে।” রেশমনগরী শুয়ালকুচির বুদরাম মাধব সত্রাধিকার মহাবিদ্যালয় ও স্পোর্টস অ্যাকাডেমি অফ শুয়ালকুচির উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্রের পারে মানুষ ও ফুলাম গামোসা অভিনব মেলবন্ধনে এই আনন্দের মুহূর্ত পালন করেন।
এ দিকে নজিরবিহীন ভাবে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন স্থগিত রেখে সব মন্ত্রী-বিধায়কেরা একসঙ্গে লাভলিনার খেলা দেখেন। তাঁর পরাজয়ে খারাপ লাগলেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা থেকে শুরু করে সকলেই তাঁকে অভিনন্দনে ভরিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, লাল কার্পেটে স্বাগত জানানোর পরে লাভলিনাকে গুয়াহাটির শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রে বিপুল সংর্ধনাও দেওয়া হবে। সঙ্গে তাঁর নাম রাজীব গাঁধী খেলরত্ন পুরস্কারের জন্যও সুপারিশ করবে রাজ্য সরকার।