উৎসব: মনদীপ ও মনপ্রীতের পরিবারের সদস্যদের উচ্ছ্বাস। পিটিআই
কী অসাধারণ ভাবে নিজেদের তুলে ধরে অদম্য এই ভারতীয় দল ব্রোঞ্জ পদক জিতল। ৪১ বছরের অপেক্ষা, দুঃখ, যন্ত্রণা সব মুছে গেল। ব্যক্তিগত ভাবে এই জয় ২০০০ সালে সিডনির হতাশা কমাল। যে যন্ত্রণা আমিও বয়ে বেড়াচ্ছিলাম।
যখন আম্পায়াররা ম্যাচ শেষ হওয়ার বাঁশি বাজাল, আমি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আনন্দে কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। যা বলতে চাইছি, বলতে পারছিলাম না।
সবাই আশা করেছিলেন ভারতীয় দল টোকিয়ো অলিম্পিক্স থেকে সোনা জিতবে। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে ও রকম একটা হারের পরে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ ছিল না। কিন্তু মনের জোর আর ফিটনেসের দিক থেকে এই দলটা অন্য ছাঁচে গড়া। গোটা প্রতিযোগিতায় আমরা সেটা দেখেছি, এই ম্যাচে আবারও দেখলাম। জার্মানদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে গিয়েছে মনপ্রীতরা। ওদের হার-না মানা মানসিকতাই সাফল্য এনে দিল।
করোনার জন্য গোটা বিশ্বে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভারতেও কম ক্ষতি হয়নি। এ রকম একটা অন্ধকার সময়ে এই ব্রোঞ্জ পদক অনেক আনন্দ এনে দিল দেশের মানুষকে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে এখনও পর্যন্ত আমাদের জয় করা অন্য পদকগুলোর মতোই।
হকি এ দেশে শুধু একটা খেলা নয়। একটা আবেগ। প্রধানমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রীর নেতৃত্বে গোটা দেশ এই দলটাকে নিঃশর্ত ভাবে সমর্থন করে গিয়েছে। এক জন অ্যাথলিট হিসেবে এর চেয়ে বেশি আর কী চাওয়ার আছে। দলের খেলোয়াড়েরা যে রকম উজাড় করে দিয়েছে নিজেদের, তেমনই সাপোর্ট স্টাফের কথাও বলতে হবে। বছরে পর বছর যাঁরা নীরবে পরিশ্রম করে গিয়েছেন চোখের আড়ালে।
হকি একটা দলগত খেলা। যেখানে সকলের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। যেখানে আর্থিক বিষয় খুব বড় ভূমিকা নেয়। ভারতীয় হকিতে বহুজাতিক সংস্থাগুলির অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসার ঘটনা ২০০৩ সালের। কয়েক বছর আগে হকিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও জোরালো সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিল ওড়িশা সরকার। তারা শুধু হকিতে অর্থ ঢেলেছে তাই নয়, বিশ্বমানের পরিকাঠামোও গড়ে তুলেছে। যার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সুযোগও পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ। এই সময়ে ভারত বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়ে আরও ভাল করে প্রস্তুত করে নিতে পেরেছে।
এই দলটা এক দিনে গড়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালে জুনিয়র বিশ্বকাপ জয়ই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমার বিশ্বাস, ভারতীয় হকির সামনে একটা দারুণ সফর রয়েছে। এটা তার শুরু।
একই সঙ্গে আমি মেয়েদের হকি দলকেও গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে নামার আগে আরও উৎসাহ দিতে চাই। যাও, মেয়েরা তোমাদের পদকটা জিতে এসো। অভিনন্দন জানাচ্ছি কুস্তিগির রবি দাহিয়াকেও রুপো জয়ের জন্য।
শেষে অভিনন্দন জানাতে চাই এ দেশের সংবাদমাধ্যমকে। যারা এই খেলোয়াড়দের কথা সকলকে জানিয়েছে, পাশে থেকেছে এবং তাঁদের প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছে। (টিসিএম)