ফরাসি ওপেন ট্রফি হাতে নোভাক জোকোভিচ। গায়ে ‘২৩’ লেখা জ্যাকেট। ছবি: রয়টার্স
ফরাসি ওপেন জিতে পুরুষদের টেনিসে ইতিহাস গড়েছেন নোভাক জোকোভিচ। ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ছাপিয়ে গিয়েছেন রাফায়েল নাদালকে। লাল সুরকির কোর্টে নিজের থেকে ১২ বছরের ছোট ক্যাসপার রুডকে উড়িয়ে দিয়েছেন (৭-৬, ৬-৩, ৭-৫)। ফরাসি ওপেন জিতে তাঁর মনে হচ্ছে, নিজের ভাগ্য লেখার ক্ষমতা তাঁর নিজের হাতেই রয়েছে। উঠতি খেলোয়াড়দের সেই বিশ্বাস রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জোকার।
স্ট্রেট সেটে রুডকে হারিয়ে জোকোভিচ বলেন, ‘‘২৩টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা সহজ নয়। আমার যখন ৭ বছর বয়স তখন স্বপ্ন দেখতাম যে এক দিন উইম্বলডন জিতব। বিশ্বের ১ নম্বর টেনিস খেলোয়াড় হব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’’ সার্বিয়ান তারকা আরও বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, নিজের ভাগ্য লেখার ক্ষমতা আমার আছে। আমি প্রত্যেক তরুণ খেলোয়াড়কে বলতে চাই, যদি ভবিষ্যতে উন্নতি করতে চাও তা হলে মাথায় রেখো, তোমাদেরও ভাগ্য গড়ার ক্ষমতা তোমাদের হাতেই রয়েছে।’’
গত দু’বছরে গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলা নিয়ে বার বার সমস্যায় পড়তে হয়েছে জোকোভিচকে। কোভিড টিকা না নেওয়ায় গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে পারেননি তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও দেশে ফিরতে হয়েছিল। একই কারণে ইউএস ওপেন থেকেও নাম তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরেও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। এ বার ফরাসি ওপেনে প্রথম ম্যাচের পরেও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন জোকোভিচ। বিতর্কিত এলাকা কসোভাকে নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য করেছিলেন। সতর্ক করে দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। এমনকি প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাসিত করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কোর্টের বাইরের যাবতীয় সমস্যাকে নিজের শক্তিশালী ফোরহ্যান্ডের মতো উড়িয়ে দিয়ে লক্ষ্য পূরণ করেছেন জোকার। তাই হয়তো নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার কথা বলেছেন তিনি।
রবিবার রুডের রিটার্ন বাইরে যেতেই সুরকির কোর্টের উপর শুয়ে পড়েন জোকোভিচ। কিছু ক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে হাত মুঠো করে উচ্ছ্বাস। এর পরেই গ্যালারিতে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন কোচ গোরান ইভানিসেভিচকে। একে একে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন। কোর্টে ফিরে আসার সময় একটি নতুন জ্যাকেট পরতে দেখা যায় তাঁকে। যেখানে ‘২৩’ সংখ্যাটা খোদাই করা ছিল। বোঝা যায়, গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের বিশ্বরেকর্ড করার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি।
ম্যাচ জিতে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না জোকোভিচ। নাদালের প্রিয় ফরাসি ওপেনেই তাঁর নজির ভেঙে জোকোভিচ বলেন, “প্যারিসে এসে ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা আমার কাছে কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। এই ট্রফিটা আমার কাছে জেতা সবচেয়ে কঠিন ছিল। তাই এখন আমার আবেগ আর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।”
রুডকে স্ট্রেট সেটে হারালেও তাঁর প্রশংসা করেছেন জোকোভিচ। রুডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী তিনি। বলেন, “টেনিসে তুমি অন্যতম ভাল খেলোয়াড়দের একজন। সবাই তোমাকে সমীহ করে, ভালবাসে এবং সেটার কারণও রয়েছে। আজকে ফলাফলের জন্যে তোমার খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু ভাল খেলেছ বলেই গত বার এবং এ বার ফাইনালে উঠেছ। এটাই তোমার টেনিস প্রতিভা সম্পর্কে বলে দেয়।” এর পরেই হাসতে হাসতে জোকোভিচের কৌতুক, “চাইব আমার বিরুদ্ধে ছাড়া সব ম্যাচে তুমি জেতো।”