Novak Djokovic vs Casper Ruud

২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামে ইতিহাস! নাদালকে টপকে শীর্ষে, রুডকে উড়িয়ে ফরাসি ওপেন জোকারের

রাফায়েল নাদালের অনুপস্থিতিতে ফরাসি ওপেন জিতলেন নোভাক জোকোভিচ। ট্রফি ক্যাবিনেটে চলে এল ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ইতিহাস গড়লেন সার্বিয়ার খেলোয়াড়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ২১:৫৪
novak djokovic

রবিবার ফাইনালে জেতার পরে জোকোভিচ। ছবি: রয়টার্স

ফিলিপে শাঁতিয়ের কোর্টকে এক সময় নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন রাফায়েল নাদাল। একই কোর্টে ১৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম! আগে কেউ পারেননি। ভবিষ্যতেও এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আপাতত সেই ‘ঘরের মাঠে’ এক ভাগীদার এসে গেল। তিনি নোভাক জোকোভিচ। নাদালের অনুপস্থিতিতে ফরাসি ওপেন জিতলেনই না, ভেঙে দিলেন স্প্যানিশ খেলোয়াড়ের নজিরও। ট্রফি ক্যাবিনেটে ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ঢুকল তাঁর। ট্রফির বিচারে বিশ্বের সেরা পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হয়ে গেলেন জোকোভিচ। রবিবার ফাইনালে নরওয়ের ক্যাসপার রুডকে তিনি হারালেন ৭-৬, ৬-৩, ৭-৫ গেমে। আড়াই ঘণ্টাও লাগল না জিততে। এতটাই একপেশে খেললেন তিনি।

২০০৮ সালে প্রথম বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন জোকোভিচ। তত দিনে রজার ফেডেরারের ক্যাবিনেটে ঢুকে গিয়েছে ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ছুঁয়ে ফেলেছেন রয় এমার্সনকে। জোকোভিচ প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার আগে নাদালের ট্রফি ছিল তিনটি। সে বছরই ফরাসি ওপেন এবং উইম্বলডন জিতে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন তিনি। কিন্তু গত দশক দেখেছে জোকোভিচের দাপট। নাদালের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় ফরাসি ওপেনে সে ভাবে আগে দাঁত ফোটাতে পারেননি। দু’টি ট্রফি ছিল। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়া ফেডেরারের খারাপ ছন্দে থাকার সুযোগ নিয়ে হার্ডকোর্টে একের পর এক ট্রফি জিতেছেন। অবশেষে টপকেই গেলেন দু’জনকে। জোকোভিচের বয়স যা, তাতে আরও কয়েকটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার থেকেও বড় কথা, এখনকার পুরুষদের টেনিসে যা অবস্থা, তাতে জোকোভিচকে আগামী দিনে আর কেউ ছুঁতে পারবে কি না, সেই তর্ক চলতেই পারে।

Advertisement

এই জোকোভিচই প্রথম ম্যাচের পর বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিতর্কিত এলাকা কসোভাকে নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য লিখেছিলেন। সতর্ক করে দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। এমনকি প্রতিযোগিতা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। জোকোভিচ পরের ম্যাচেই সেই মন্তব্য থেকে সরে আসেন। বুঝতে পেরেছিলেন, জীবনে লক্ষ্য স্থির রাখতে গেলে এ রকম ছোটখাটো ব্যাপারে জড়িয়ে পড়লে চলবে না। এমন জিনিস নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই। তার পর থেকে বাকি প্রতিযোগিতায় না তাঁকে এক বারও কোনও বার্তা লিখতে দেখা গিয়েছে, না কোনও বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। লক্ষ্য স্থির রাখার ফল পেলেন তিনি।

ফাইনালের আগে একটা সম্ভাবনা সব জায়গাতেই ছিল। ম্যাচ অন্তত চার সেটে গড়াচ্ছেই। টানা দ্বিতীয় বার ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন রুড। সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে সুরকির কোর্টে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক দেখাচ্ছিল তাঁকে। মনে হয়েছিল, গত বার নাদালের কাছে হারলেও এ বার জোকোভিচকে সমস্যায় ফেলতে পারেন। কোথায় কী! সরাসরি সেটে উড়ে গেলেন। প্রথম সেট বাদে কখনওই জোকোভিচকে সমস্যায় ফেলতে পারেননি। সার্বিয়ার খেলোয়াড়কে আদৌ ফাইনালে উঠে নিজের সেরাটা দিতে হল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর থেকে সেমিফাইনালে কার্লোস আলকারাজের বিরুদ্ধে জিততে বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছিল তাঁকে। রুড স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তরুণ প্রজন্মের ব্যাটনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আরও একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম বোঝাল, অভিজ্ঞতার কোনও বিকল্প নেই।

শুধু ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতাই নয়, জোকোভিচ আরও কিছু নজির গড়লেন। সবচেয়ে বেশি বয়সে (৩৬ বছর ২০ দিন) রোলাঁ গারোজের ট্রফি জিতলেন। পাশাপাশি তিনিই প্রথম পুরুষ খেলোয়াড়, যাঁর প্রতিটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম অন্তত তিনটি করে রয়েছে। রবিবার জোকোভিচের খেলা দেখতে হাজির ছিলেন ফ্রান্সের ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে, অলিভিয়ের জিহু, সুইডেনের জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, অভিনেতা হিউ গ্রান্ট, আমেরিকার ফুটবলের খেলোয়াড় টম ব্র্যাডি।

চলতি ফরাসি ওপেনে বার বারই প্রথম সেটে সমস্যায় পড়েছেন জোকোভিচ। বার দুয়েক সেট হারাতেও হয়েছে। রবিবারের ফাইনালের শুরুটা যে ভাবে হল, মনে হয়েছিল একই দৃশ্য দেখা যেতে চলেছে। রুড নিজের প্রথম সার্ভ ধরে রাখা পরের গেমেই জোকোভিচকে ব্রেক করে দেন। ১১ মিনিট ধরে চলে একটি গেম। দু’বার জোকোভিচ ব্রেক পয়েন্ট বাঁচালেও লাভ হয়নি। কিন্তু সার্বিয়ার খেলোয়াড় যে ভাবে ভুলভাল শট খেলছিলেন তা চিন্তায় ফেলেছিল অনুরাগীদের।

রুড পরের সার্ভ ধরে রাখেন। ৩-০ এগিয়ে যান। ৬ মিনিট ধরে গেমটি চলে। ডাবল ফল্ট করেও বেঁচে যান রুড। এর পর দুই খেলোয়াড়ই নিজেদের সার্ভ ধরে রাখেন। জোকোভিচের প্রত্যাবর্তন শুরু হয় এর পরেই। সপ্তম গেমে তিনি ব্রেক করেন রুডকে। প্রথম ব্রেক পয়েন্টই কাজে লাগান। এত ক্ষণ যে ম্যাচে দাপট ছিল রুডের, তা ক্রমশ চলে যায় জোকোভিচের হাতে। এর পর দুই খেলোয়াড়ই নিজেদের সার্ভিস ধরে রাখায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে জোকোভিচ দাঁড়াতে দেননি নরওয়ের খেলোয়াড়কে। ৭-১ জিতে নেন।

দ্বিতীয় সেট থেকে শুরু হয় জোকোভিচের দাপট দেখানোর পালা। নিজের সার্ভ ধরে রাখার পরেই ব্রেক করেন রুডকে। এগিয়ে যান ৩-০ গেমে। সেই সময় একের পর এক ‘এস’ সার্ভিস মারছিলেন জোকোভিচ। ওই একটি ব্রেকেই কাজ হয়ে যায়। বাকি ম্যাচে দু’জনে নিজেদের সার্ভ ধরে রাখেন। শেষ পর্যন্ত ৬-৩ গেমে সেট পকেটে পুরে নেন জোকোভিচ।

তৃতীয় সেটে কোনও অঘটন দেখা যায়নি। দুই খেলোয়াড় নিজেদের সবক’টি সার্ভ ধরে রেখে টাইব্রেকারের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু জোকোভিচই ব্রেক করেন রুডকে। ১১তম গেমে ব্রেক করার পর নিজের সার্ভ ধরে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement