—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র
খবর ছড়িয়েছিল যে প্রতিযোগিতার পরেই নমুনা সংগ্রহ করতে আসবেন আধিকারিকেরা। সে কথা শুনেই ট্র্যাক ছেড়ে দৌড় দিলেন অ্যাথলিটেরা। এমনকি, পদক নিতেই এলেন না কেউ। ১০০ মিটারের একটি ফাইনালে দৌড়লেন মাত্র এক জন প্রতিযোগী। গোটা সময় ধরে আধিকারিকদের সঙ্গে প্রতিযোগীদের চোর-পুলিশ খেলা চলল। দিল্লির রাজ্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় এই ঘটনা দেখে হতবাক কর্তারা।
২৩ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা হয়েছে। প্রতিযোগিতা চলাকালীন স্টেডিয়ামের একটি শৌচাগারের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, ওষুধের খালি শিশি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ভিডিয়ো দেখার পরেই দেশের ডোপিং বিরোধী সংস্থা (নাডা)-র আধিকারিকেরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিযোগিতার শেষ দিন অ্যাথলিটদের নমুনা সংগ্রহ করবেন। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে যে প্রতিযোগীরা কোনও নিষিদ্ধ পদার্থ নিয়েছেন কি না।
আধিকারিকদের আসার খবর চাউর হয়ে যায়। তার পরেই প্রতিযোগীদের মধ্যে দৌড় শুরু হয়। খবর পেয়ে প্রতিযোগিতায় নামার আগেই প্রায় অর্ধেক প্রতিযোগী পালিয়ে যান। যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যেও অনেকে প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরেই দৌড় লাগান। অনেকে পদক নিতে পোডিয়ামে পর্যন্ত আসেননি। এই প্রসঙ্গে এক কর্তা বলেন, ‘‘ট্র্যাকে ফাইনালে সাধারণত আট জন প্রতিযোগী থাকে। কিন্তু প্রতিটা ইভেন্টে তিন থেকে চার জন ছিল না। জুনিয়র স্টিপলচেজের একটা ইভেন্টে তো এক জন মেয়ে প্রতিযোগিতা শেষ করার পরেও দৌড় থামায়নি। নমুনা নেওয়ার জন্য ওর পিছনে নাডা-র এক জন আধিকারিক দৌড়ান।’’
পুরুষদের ১০০ মিটার ফাইনালে নামেন এক জন প্রতিযোগী। তাঁর নাম ললিত কুমার। বাকিদের পাওয়া যায়নি। বাকি সাত জনই নাকি ললিতকে জানান যে তাঁদের পায়ে ক্র্যাম্প ধরেছে। তাই তাঁরা দৌড়াবেন না। ললিত বলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম দিল্লির সেরা অ্যাথলিটদের বিরুদ্ধে লড়তে। কিন্তু কেউ এলই না। আসলে সবাই নমুনা পরীক্ষার ভয় পাচ্ছিল। আমি হতাশ হয়েছি। এ রকম ঘটনা দেখতে হবে ভাবিনি।’’
তিন দশকের বেশি সময় ধরে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় দায়িত্বে থাকা এক রেফারি বলেন, ‘‘আমি এই প্রথম বার দেখলাম কোনও প্রতিযোগিতায় এক জন দৌড়াচ্ছে। গোটা প্রতিযোগিতায় প্রায় অর্ধেক প্রতিযোগী ছিল না।’’ দিল্লি রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সভাপতি সানি জোশুয়া বলেন, ‘‘প্রতিটা ইভেন্টেই একই ছবি দেখা গিয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তো দূর, পদক নিতেও আসেনি অনেকে।’’
কেন এই ঘটনা ঘটল সেই প্রশ্ন উঠছে। যাঁরা পালিয়ে গেলেন তাঁরা কি সত্যিই নিষিদ্ধ পদার্থের ব্যবহার করেছিলেন? ধরা পড়ার ভয়ে নমুনাই দিলেন না। এই প্রসঙ্গে জোশুয়া বলেন, ‘‘আমাদের কাজ অ্যাথলিট ও কোচদের সব বিষয়ে সতর্ক করা। ওদের অনুশীলনের দিকেও আমরা নজর রাখি। কিন্তু আড়ালে ওরা কী করছে সেটা তো জানি না। এক জন অ্যাথলিট নিষিদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ। আশা করছি ভবিষ্যতে এই ঘটনা আর দেখতে হবে না।’’