আরও এক বার প্রিয় ইডেন গার্ডেন্সে খেলতে নামছেন বিরাট কোহলি। ছন্দে রয়েছেন বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটার। —ফাইল চিত্র
কী কারণে টিকিটের এত হাহাকার? ৩ বছর পরে ঘরের মাঠে খেলতে নামা কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়, না প্রতিপক্ষ দলের বিরাট কোহলির ব্যাটে বড় রান, কী দেখতে চাইছে কলকাতা? বিরাটকে প্রতিপক্ষও কি বলা যায়? আসলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বা কোহলিরা যে শহরেই খেলতে নামুন না কেন, সেটাই তাঁদের শহর। অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও বিরাটই কি আকর্ষণের কেন্দ্রে? তাঁকে দেখতেই কি ইডেন ভরাবে জনতা?
শেষ বার কোহলি ইডেনে খেলেছিলেন চলতি বছর ১২ মার্চ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে খেলেছিলেন তিনি। তার ৮৩ দিন পরে আবার কলকাতার মাঠে নামতে চলেছেন বিরাট। তাই তাঁকে নিয়েই উন্মাদনা তুঙ্গে। তিনিই এই ম্যাচের মধ্যমণি।
ইডেন গার্ডেন্সের সঙ্গে বিরাটের সখ্য নতুন নয়। এই মাঠে তাঁর রেকর্ড বেশ ভাল। সেটা জাতীয় দলের জার্সিতে হোক বা আইপিএলে। ভারতের হয়ে ইডেনে ৭টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন বিরাট। করেছেন ৩৩০ রান। গড় ৪৭.১৪। ১টি শতরান ও ৩টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ১০৭ রান। টি-টোয়েন্টিতে ইডেনে ৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন বিরাট। ৩৪.৭৫ গড় এবং ১২৯.৯ স্ট্রাইক রেটে ১৩৯ রান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা ৫৫ রান। ইডেনে বিরাটের টেস্ট পরিসংখ্যানেও ভাল। এই মাঠে ৪টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। করেছেন ৩২৩ রান। তার মধ্যে ২টি শতরান রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি বল টেস্টে শেষ বার এই মাঠে শতরান করেছিলেন বিরাট। তার পর থেকেই দীর্ঘ তিন বছর তাঁর ব্যাট থেকে কোনও শতরান আসেনি। তবে গত বছর এশিয়া কাপ থেকে আবার ছন্দে ফিরেছেন কোহলি।
ইডেনে বিরাট আইপিএলে ১১টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩৩২ রান করেছেন তিনি। গড় ৩০.১৮। স্ট্রাইক রেট ১২৭.৬। আইপিএলে বিরাটের ৫টি শতরানের মধ্যে ১টি ইডেনে। সেটাও এসেছিল ২০১৯ সালে কেকেআরের বিরুদ্ধে। সে বারই শেষ হোম-অ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলা হয়েছিল। তিন বছর পরে আবার সেই ফরম্যাট শুরু হয়েছে।
ইডেনের সঙ্গে বিরাটের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তিনি বহু বার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই মাঠ তাঁর খুব প্রিয়। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে জিতিয়ে ইডেনের গ্যালারিতে থাকা সচিন তেন্ডুলকরের দিকে তাকিয়ে তাঁর সেই অভিব্যক্তি (সচিনের দিকে দু’হাত দেখিয়ে মাথা নত করেছিলেন বিরাট) ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকালীন। সেই মাঠেই আরও এক বার খেলতে নামবেন বিরাট।
ইডেনে নামার আগে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন কোহলি। বুধবার অনুশীলন করেননি তিনি। বদলে ফ্যাফ ডুপ্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের নিয়ে নিজের রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন। সেখানে কোহলিদের দেখে হইচই পড়ে যায়। অনেকের সঙ্গে নিজস্বীও তোলেন ক্রিকেটাররা। কোহলির এই মেজাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে, কোনও বাড়তি চাপ না নিয়ে বৃহস্পতিবার খেলতে নামছেন তিনি।
গত বছর থেকেই ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ক্রিকেটার। আর এ বছর প্রথম ম্যাচেই বিরাট যে ইনিংস খেলেছেন তাতে মনে হচ্ছে আর একটি শতরান সময়ের অপেক্ষা। এ বার কি আইপিএলে চার বছরের খরা কাটতে চলেছে তাঁর? জাতীয় দলের হয়ে আগেই ছন্দে ফিরেছিলেন কোহলি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই শতরান করেছিলেন। কিন্তু আইপিএলে দাপট দেখাতে পারছিলেন না। সেটাই মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দেখা গিয়েছে।
রোহিত শর্মাদের বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে গিয়ে কিন্তু প্রথম বল থেকেই চালিয়ে মারার চেষ্টা করেননি কোহলি। প্রথম কয়েকটা বল একটু দেখে খেলেছেন। সেই পুরনো কোহলি। কোনও তাড়াহুড়ো নয়। কয়েকটা বল দেখে নিয়ে তার পর ইনিংস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সেটাই করেছেন। এক বার শট মারতে শুরু করার পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। যত সময় গড়িয়েছে, তত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন তিনি। এক বারের জন্যও মনে হয়নি তাঁর খেলতে কোনও সমস্যা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ৮২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। আরও এক বার ‘চেজ় মাস্টার’-এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বিরাটকে। সেই বিরাটকে দেখতেই কি ইডেনে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শকরা। এখনও কি আকর্ষণের কেন্দ্রে তিনি।