বৃহস্পতিবার ইডেনে আইপিএলে নতুন নজির গড়লেন যশস্বী। ছবি: আইপিএল।
আইপিএলের দ্রুততম অর্ধশতরান করলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১৩ বলে ৫০ রান করে ভেঙে দিলেন লোকেশ রাহুল এবং প্যাট কামিন্সের নজির।
এ বারের আইপিএলে স্বপ্নের ছন্দে রয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের যশস্বী। কলকাতার বিরুদ্ধে নতুন নজির গড়লেন ব্যাট হাতে। বৃহস্পতিবার শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে শুরু করেন তিনি। প্রথম ওভারেই কলকাতার অধিনায়ক নীতীশ রানাকে দু’টি ছক্কা এবং তিনটি চার মারেন। প্রথম ৬ বলে করেন ২৬ রান। তার পরেও তাঁকে থামাতে পারেননি কেকেআরের বোলাররা। ১৩ বলে ৫০ রান পূর্ণ করতে যশস্বী মারলেন ৬টি চার এবং ৩টি ছয়।
এর আগে আইপিএলে দ্রুততম অর্ধশতরান করার নজির ছিল রাহুল এবং কামিন্সের। তাঁরা ১৪ বলে ৫০ রান পূর্ণ করেছিলেন। তাঁদের থেকে ১ বল কম খেলেই ইডেনে অর্ধশতরান পূর্ণ করলেন যশস্বী। তাঁর সামনে কলকাতার কোনও বোলারই সুবিধা করতে পারলেন না। যশস্বীর দাপটে রাজস্থানের অন্য ব্যাটাররাও কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন। ২১ বছরের বাঁহাতি ব্যাটার একাই দলের ৭০ শতাংশের বেশি রান করলেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড যুবরাজ সিংহের দখলে। তিনি ১২ বলে অর্ধশতরান করেছিলেন।
ক্রিকেটে যশস্বীর সুযোগ পাওয়াটাই রূপকথার মতো। উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি জেলার সুরিয়া এলাকায় জন্ম যশস্বীর। বাবা ভূপেন্দ্র রং বিক্রি করতেন। বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন মা কাঞ্চন। চার সন্তানের লালন-পালনের পর যশস্বীকে ক্রিকেটার বানানোর খরচ জোগানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। কিন্তু নাছোড় যশস্বী তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসার জন্য বাবাকে বুঝিয়েছিলেন। দশ বছর বয়সে মুম্বই চলে আসেন তিনি। চোখে স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। পেট চালাতে প্রথমে দোকানে কাজ নেন। কিন্তু মাথায় তখন শুধুই ক্রিকেট। প্রতি দিন অনর্গল অনুশীলন। প্র্যাকটিসের পিছনে এতটাই সময় দিতেন যে, দোকানের জন্য আর সময় ছিল না। কাজ চলে যায় কিছু দিনের মধ্যেই।
অনুশীলন বন্ধ থাকেনি। কিন্তু স্বপ্নপূরণের জন্য টাকাও তো দরকার। মুম্বইয়ের আদাজ ময়দানে গোলগাপ্পা বেচতে শুরু করেন। আর কারও কাছে কৈফিয়ৎ দেওয়ার নেই। কাজের বাঁধাধরা নিয়ম, সময় নেই। জীবনের স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দে ক্রিকেটের সাধনা বেড়ে যায় যশস্বীর। ময়দানেরই এক মাঠ কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। তাঁর বদান্যতায় তাঁবুতেই রাত কাটাতেন। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, খাওয়ার জল ছিল না। শুধু ছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন।
যশস্বী হঠাৎই নজরে পড়ে যান জ্বালা সিংহের। ঘুরে যায় জীবনের গতিপথ। তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন জ্বালা। হবু স্ত্রী বন্দনাকে বলে দেন, এই ছেলেটাকে কিন্তু নিজের ছেলের মতোই গড়ে তুলতে হবে। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। সেই শুরু। আর ফিরে তাকাতে হয়নি যশস্বীকে। জ্বালাকে যশস্বী শুরুতে শুধু বলেছিলেন, ‘‘স্যার, আমি আর কোনও কিছু পারি না। শুধু ক্রিকেট খেলতে পারি। আমি আপনার সব কাজ করে দেব। যা বলবেন সব করব। ঘর পরিষ্কার করব, জুতো পালিশও করে দেব। শুধু ক্রিকেট খেলতে দেবেন।’’