জয়ের পর কেকেআর ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। বেঙ্গালুরুকে হারাল তারা। ছবি: পিটিআই
অবশেষে আইপিএলে জয়ের রাস্তা ফিরল কলকাতা। বুধবার বেঙ্গালুরুতে বিরাট কোহলির আরসিবিকে ২১ রানে হারিয়ে দিল তারা। টানা চার ম্যাচে হারের পর জিতল কলকাতা। এ দিন প্রথমে ব্যাট করে ২০০-৫ তোলে কলকাতা। জবাবে কলকাতার বোলারদের দাপটে ১৭৯-৮ শেষ আরসিবি। ব্যাটারদের ব্যর্থতাই ডোবাল আরসিবিকে। কোহলি বাদে বাকি ব্যাটাররা কেউই খেলতে পারলেন না।
কেকেআরের নায়ক হলেন আরআরআর। অর্থাৎ রাসেল, রয় এবং রানা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাসেল উইকেট তুলে নিলেন, যার মধ্যে রয়েছে কোহলির দামি উইকেট। একটি অসাধারণ ক্যাচ নিলেন। কলকাতার শুরুটা দুর্দান্ত করলেন জেসন রয়। এবং মাঝের দিকে চালিয়ে খেলে ভদ্রস্থ রানে পৌঁছে দিলেন নীতীশ রানা।
রান তাড়া করার সময় আরসিবির ইনিংস চলার মাঝে একটা তথ্য ভেসে উঠল টিভিতে। দেখা গেল এই মরসুমে আরসিবির মোট রানে প্রায় ৭৯ শতাংশ করেছেন তিন জন। তাঁরা হলেন ফাফ ডুপ্লেসি, কোহলি এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৯০০-রও বেশি। শুরুটাও ডুপ্লেসি এবং কোহলি সে রকমই করেছিলেন। বৈভব অরোরা প্রথম ওভারে খেলেন ১০ রান। উমেশ যাদবের পরের ওভারে উঠল ১৯। মনে হচ্ছিল ১৫ ওভারেই দুশো রান তাড়া করে নেবে আরসিবি।
খেলা ঘুরল তার পরেই। উপায় না দেখে তৃতীয় ওভারেই সুযশ শর্মাকে নিয়ে এলেন নীতীশ। দ্বিতীয় বলেই সুযশকে ছয় মারতে গিয়ে রিঙ্কু সিংহের হাতে ক্যাচ দিলেন ডুপ্লেসি। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জায়গায় শাহবাজ আহমেদকে নামিয়ে ফাটকা খেলতে চেয়েছিল আরসিবি। তা কাজে লাগল না। বলের মতো ব্যাটেও ব্যর্থ শাহবাজ (২)।
দায়িত্ব গিয়ে পড়েছিল সেই ম্যাক্সওয়েল এবং কোহলির উপরেই। বড় ম্যাচে হতাশ করলেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁকেও তুলে নিয়ে সুযশ। স্লো বল করেছিলেন। কভারে ক্যাচ নিলেন ডেভিড উইজ়া। একাই আরসিবির হয়ে রান তাড়া করছিলেন কোহলি। সঙ্গী পেয়েছিলেন মহিপাল লোমরোরকে। কেকেআরের স্পিনারদের আক্রমণ করে বেশ সাফল্য পাচ্ছিলেন মহিপাল। অন্য দিকে, কোহলিও খেলছিলেন ভালই।
দু’টি উইকেটই গেল পর পর। বরুণের বলে সুইপ করে ছয় মারতে গিয়ে ফিরলেন মহিপাল। তার পরের ওভারেই কোহলিকে দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরালেন বেঙ্কটেশ। বেঙ্গালুরুর কাছে জেতার মতো আর কোনও রসদ ছিল না।
WHAT. A. CATCH 🔥🔥@Russell12A gets the big wicket of Virat Kohli as @venkateshiyer takes a stunning catch 👏🏻👏🏻#TATAIPL | #RCBvKKR pic.twitter.com/RNrIKSaqTs
— IndianPremierLeague (@IPL) April 26, 2023
এ দিকে, কেকেআরের ব্যাটিংও প্রথম দিকে খুব ভাল হয়নি। আগে ব্যাট করলে পাওয়ার প্লে-তে বড় রান তুলতে হবে, এটাই আইপিএলে যে কোনও দলের মূল কথা। বিশেষত যদি ম্যাচ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে হয় তা হলে রানের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হতে পারে। কিন্তু কলকাতা ৬৬ রানের বেশি তুলতে পারল না। তার পিছনে দায়ী ওপেনার নারায়ণ জগদীশন।
প্রথম তিন ওভারে কলকাতার খুব বেশি রান ওঠেনি। কিন্তু চতুর্থ ওভার থেকেই চালাতে শুরু করেন জেসন রয়। ডেভিড উইলির সেই ওভারে ওঠে ১৭ রান। ষষ্ঠ ওভারে শাহবাজ আহমেদকে চারটি ছয় এবং একটি চার মারেন জেসন। সেই ওভার থেকে পাওয়া যায় ২৫। হলে কী হবে, উল্টো দিকে নারায়ণ ব্যাটে-বলে করতেই পারছিলেন না। আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন খুচরো রান নিয়ে জেসনকে স্ট্রাইক দেওয়ার। কিন্তু খুচরো রান নিতে গেলেও তো সঠিক জায়গায় বল মারতে হয়। নারায়ণকে দেখে মনে হচ্ছিল সেটাও হবে না।
এই মরসুমে ওপেনিংয়ে কলকাতার সর্বোচ্চ রান উঠেছিল ২৬। সেটাও এই আরসিবির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে। এই ম্যাচে তবু একটা অর্ধশতরানের জুটি পাওয়া গেল। কিন্তু জেসন এক দিকে দুর্দান্ত খেললে, উল্টো দিকের সতীর্থ ডুবিয়ে দিচ্ছেন। চিন্নাস্বামীর মতো ছোট এবং পাটা উইকেটের মাঠে নারায়ণ করলেন ২৯ বলে ২৭। নিঃসন্দেহে ক্ষমাহীন অপরাধ। তিনি ফিরতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন কেকেআর সমর্থকরা।
জেসনকেও পুরোপুরি ছাড় দিলে চলবে না। ক্রিজে জমে যাওয়া একজন ব্যাটার পুরোপুরি লেগস্টাম্প ছেড়ে শট খেলতে গেলেন। বিজয়কুমার বিশাখের বল তাঁর লেগস্টাম্প ভেঙে দিল।
পর পর দু’টি উইকেট চলে যাওয়ায় চাপে পড়েছিল কলকাতা। কিন্তু চাপ কাটিয়ে দিলেন বেঙ্কটেশ আয়ার এবং নীতীশ রানার জুটি। দু’জনের জুটি ৮০ রান উঠে গেল। কিন্তু রান তোলার গতি অনেকটাই কমে গেল। নীতীশ তবু একটু হাত খুলে খেলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বেঙ্কটেশ আদ্যোপান্ত ব্যাক ফুটের ক্রিকেটার। তাঁকে অন্য রকম বল দিলেই আর কিছু করতে পারেন না। ফলে কোনও ভাবেই রানের গতি উঠল না। কোনও রকমে খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন নীতীশ-বেঙ্কটেশ জুটি।
হাতে আটটি উইকেট থাকা সত্ত্বেও কেন যে আরও সাহসী হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলেন না তাঁরা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। দু’জনের জুটি চলল ১৮তম ওভার পর্যন্ত। পরের দিকে নেমে রিঙ্কু সিংহ এবং ডেভিড উইজ়া আগ্রাসী ক্রিকেট খেললেন। তাঁরা যদি আরও কয়েকটা বল পেতেন, তা হলে নিঃসন্দেহে আরও বেশি রান উঠতে পারত।