এ বারের আইপিএলে ব্যর্থ বিরাট, রোহিত, ধোনিরা। —ফাইল চিত্র
কেউ চার জন, কেউ তিন জন, কেউ আবার দু’জন ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছিল নিলামের আগে। ভরসা রেখেছিল এই ক্রিকেটারদের উপর। কারা সেই আস্থার মান রাখলেন, কারা পারলেন না? দেখে নেওয়া যাক ‘রিটেইনড’ ক্রিকেটাররা কেমন খেললেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্স
চার জন ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছিল কলকাতা। এর মধ্যে বেঙ্কটেশ আয়ার এবং বরুণ চক্রবর্তী একেবারেই দাগ কাটতে পারেননি। কিছু ম্যাচে বসিয়েও দিতে হয় তাঁদের। বিস্ময় স্পিনার বরুণ এ বারের আইপিএলে খেলেছেন ১১টি ম্যাচ, নিয়েছেন মাত্র ছ’টি উইকেট। বেঙ্কটেশ খেলেছেন ১২টি ম্যাচ, রান মাত্র ১৮২। গত বছর ভাল খেলা এই দুই ক্রিকেটারের উপর ভরসা করে দল গড়েছিল কলকাতা। কিন্তু দু’জনেই ব্যর্থ। আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইনকেও রেখে দিয়েছিল কেকেআর। রাসেল বেশ কিছু ম্যাচ জিতিয়েছেন। তিনি ১৪টি ম্যাচ খেলে ৩৩৫ রান করেছেন, সেই সঙ্গে নিয়েছেন ১৭টি উইকেট। এ বারের আইপিএলে কলকাতার সফলতম বোলার তিনিই। নারাইন ১৪টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ন’টি উইকেট। খুব বেশি উইকেট না পেলেও তাঁর কৃপণ বোলিং কলকাতাকে লড়াই করার সুযোগ করে দিয়েছে বহু ম্যাচে।
চেন্নাই সুপার কিংস
চেন্নাই রেখে দিয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, রবীন্দ্র জাডেজা, মইন আলি এবং রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে। ধোনির থেকে বেশি দাম দিয়ে জাডেজাকে রেখেছিল চেন্নাই। আইপিএল শুরুর আগে অধিনায়ক করা হয় জাডেজাকে। কিন্তু আইপিএলের মাঝপথেই মোহভঙ্গ। ফের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় ধোনির কাঁধে। চোট পেয়ে আইপিএল থেকে ছিটকে যান জাডেজা। মইন আলি এই আইপিএলে ১০টি ম্যাচ খেলে করেছেন ২৪৪ রান এবং নিয়েছেন আটটি উইকেট। রুতুরাজ করেছেন ৩৬৮ রান। চেন্নাইয়ের হয়ে সব থেকে বেশি রান তাঁরই। ধোনির ব্যাট থেকে এসেছে ২৩২ রান। চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার আগে ১০ ম্যাচ খেলে জাডেজা নিয়েছিলেন মাত্র পাঁচটি উইকেট।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
রোহিত শর্মারা চেষ্টা করেছিলেন দলের মূল শক্তিটা ধরে রাখতে। রোহিত নিজে যেমন ছিলেন, তেমনই রেখে দেওয়া হয় যশপ্রীত বুমরা, সূর্যকুমার যাদব এবং কায়রন পোলার্ডকে। কিন্তু এই আইপিএলে রোহিতের ব্যাটে রান নেই, বুমরা শুরু থেকে ব্যর্থ, চোটের কারণে একাধিক ম্যাচ খেলতেই পারলেন না সূর্যকুমার। পোলার্ডও এখন আর আগের মতো বিধ্বংসী নন। এমন একাধিক ক্রিকেটার ব্যর্থ হওয়ায় মুম্বইও ছিটকে যায় প্লে-অফের দৌড় থেকে। এই আইপিএলে রোহিতের সংগ্রহ ২৬৮ রান। মাত্র আটটি ম্যাচ খেলে সূর্যকুমার করেন ৩০৩ রান। পোলার্ড ১১টি ম্যাচ খেলে ১৪৪ রান করেন এবং সেই সঙ্গে নেন মাত্র চারটি উইকেট। বুমরা নেন ১৫টি উইকেট।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর
তিন জন ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছিল আরসিবি। বিরাট কোহলী, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং মহম্মদ সিরাজ। এই আইপিএলে তিন বার ‘গোল্ডেন ডাক’ হয়েছেন বিরাট। বার বার প্রথম বলে আউট হওয়া বিরাট রানই পাননি এই আইপিএলে। তাঁর সংগ্রহ মাত্র ৩৪১ রান। করেছেন মাত্র দু’টি অর্ধশতরান। নেতৃত্ব ছেড়ে ব্যাটিংয়ে মন দিতে চাওয়া বিরাট এখনও ছন্দহীন। ম্যাক্সওয়েল ১৩টি ম্যাচ খেলে করেন ৩০১ রান। সিরাজ নেন মাত্র ন’টি উইকেট। বেঙ্গালুরুর রেখে দেওয়া ক্রিকেটাররা প্রায় সকলেই ব্যর্থ।
রাজস্থান রয়্যালস
রাজস্থান যে ক্রিকেটারদের রেখে দিয়েছিল তাঁরাই সব থেকে সফল। তাদের ধরে রাখা জস বাটলার কমলা টুপি পেয়েছেন। এই আইপিএলে চারটি শতরান করেছেন। আইপিএল ২০২২ রাজত্ব করেছেন বাটলার। ফাইনাল খেললেও যদিও ট্রফি জেতা হয়নি। এই আইপিএলে ১৭টি ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ৮৬৩ রান। রাজস্থান ধরে রেখেছিল সঞ্জু স্যামসন এবং যশস্বী জয়সবালকেও। ১০টি ম্যাচ খেলে যশস্বী করেন ২৫৮ রান। অধিনায়ক সঞ্জু করেন ৪৫৮ রান। দলকে সফল ভাবে নেতৃত্বও দিয়েছেন এবং ফাইনালে তুলেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ট্রফি অধরাই থেকে গিয়েছে।
দিল্লি ক্যাপিটালস
দিল্লি রেখে দিয়েছিল পৃথ্বী শ, ঋষভ পন্থ, এনরিখ নোখিয়া এবং অক্ষর পটেলকে। শেষ ম্যাচে মুম্বইয়ের কাছে প্লে-অফের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় পন্থদের। দিল্লির ধরে রাখা ক্রিকেটারদের মধ্যে পন্থ করেন ৩৪০ রান। পৃথ্বী চোটের জন্য বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে পারেননি। তিনি ১০টি ম্যাচ খেলে করেন ২৮৩ রান। অক্ষর ব্যাট হাতে ১৮২ রান করেন এবং বল হাতে নেন মাত্র ছ’টি উইকেট। নোখিয়া খেলেন মাত্র ছ’টি ম্যাচ। তাঁর সংগ্রহ ন’টি উইকেট। পৃথ্বী এবং ঋষভ কিছুটা রান পেলেও বাকিদের থেকে সে ভাবে সাহায্য পায়নি দিল্লি।
পঞ্জাব কিংস
পঞ্জাব রেখে দিয়েছিল মাত্র দু’জন ক্রিকেটারকে। ময়ঙ্ক অগ্রবাল এবং অর্শদীপ সিংহ। অধিনায়ক হিসাবে এ বারের আইপিএলে খেলেন ময়ঙ্ক। কিন্তু দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। এই আইপিএলে ১৩টি ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ১৯৬ রান। ব্যাট হাতে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। তরুণ পেসার অর্শদীপ ভাল বল করেন। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তিনি। এই আইপিএলে ১৪টি ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ১০টি উইকেট।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ
হায়দরাবাদ নিলামে তোলেনি কেন উইলিয়ামসন, উমরান মালিক এবং আব্দুল সামাদকে। অধিনায়ক উইলিয়ামসন ব্যর্থ। তিনি করেন মাত্র ২১৬ রান। ডেভিড ওয়ার্নারকে ছেড়ে দিয়ে উইলিয়ামসনের উপর ভরসা রেখেছিল হায়দরাবাদ। কিন্তু তিন সে ভাবে রানই পেলেন না। এই আইপিএলে সামাদ খেলেছেন মাত্র দু’টি ম্যাচ। করেন মাত্র চার রান। হায়দরাবাদের ধরে রাখা ক্রিকেটারদের মধ্যে সফল অবশ্যই উমরান মালিক। ধারাবাহিক ভাবে তাঁর গতি নজর কাড়ে। ১৫৭ কিমি গতি বেগে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ১৪ ম্যাচে ২২টি উইকেট নেন উমরান। ভারতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন। ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার রসদ তাঁর মধ্যে রয়েছে বলেই মনে করছে ক্রিকেটমহল।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।