IPL 2022

IPL 2022: কলকাতার হার, রিঙ্কুর জয়! কলকাতার বিদায়, রিঙ্কুর মুক্তি

এ বারের আইপিএলে ফিনিক্স পাখির মতো ছাইয়ের গাদা থেকে উঠে এসেছেন রিঙ্কু। প্রজাপতি হয়ে নাইটদের সংসারে র‌ং ছড়াচ্ছেন তিনি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২২ ১৭:০৮
কলকাতার হয়ে পুনর্জন্ম রিঙ্কুর

কলকাতার হয়ে পুনর্জন্ম রিঙ্কুর ফাইল চিত্র

দল হেরেছে। কিন্তু জিতে গিয়েছেন তিনি। ম্যাচ হেরেও তাই অধিনায়কের মুখে হতাশা নেই, বরং রয়েছে আনন্দ। দলের ক্রিকেটারের লড়াই যে তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন তিনি। পরের মরসুমে সব ব্যর্থতা ভুলে ফের নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন দেখছেন কলকাতার অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার।

এ বারের আইপিএলের আগে নিলামে যখন ফের ৫৫ লক্ষ টাকায় রিঙ্কু সিংহকে কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনেছিল তখন ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। আবার কেন সেই একই প্লেয়ারকে কেনা। গোটা মরসুমে তো সুযোগ পাবেন না। বেঞ্চ গরম করবেন। তার থেকে বাঙালি কোনও ক্রিকেটারকে কিনতে পারত দল। কেউ কেউ তো মজা করে বলেন, অন্য ক্রিকেটারদের জন্য মাঠে জল নিয়ে যাওয়ার জন্যও তো কাউকে লাগবে। সেই কারণেই রিঙ্কুকে নেওয়া। তার পরে তিনি নাকি আবার হাসি-তামাশা করে সাজঘরে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। জৈবদুর্গের মধ্যে কিছুটা হলেও তো বিনোদন হবে। মরসুমের শুরু থেকে একের পর এক ম্যাচে সুযোগ না পাওয়ায় সেই মজা আরও বেড়েছিল। সে সব হয়তো এ বার বন্ধ হয়ে গেল। বলা ভাল, বন্ধ করে দিলেন কেকেআরের বাঁহাতি ক্রিকেটার রিঙ্কু। এ বারের আইপিএলে পুনর্জন্ম হল তাঁর।

উত্তরপ্রদেশের এই ছেলে দলের জন্য সব করতে পারেন। সত্যিই মাঠে সতীর্থদের জন্য জল নিয়ে যান। কেউ কোনও কারণে মাঠের বাইরে গেলে পরিবর্ত ফিল্ডার হিসেবে নেমে জান লড়িয়ে দেন। দেখে মনে হয় মাঠে নামার সুযোগ পেয়েই আপ্লুত তিনি। যেটুকু খেলার সুযোগ পাওয়া যায় সেটুকুই চেটেপুটে খেতে চান তিনি। সব সময় ছটফট করছেন। মাঠে নামতে মুখিয়ে রয়েছেন। আগের চার মরসুমে যে ১০ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন তাতে আহামরি কিছু খেলতে পারেননি। কিন্তু এ বার পারলেন। এ বার এক লড়াই দেখল আইপিএল। সামর্থ্যের বাইরে বেরিয়ে লড়াই। নিজের উচ্চতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই। নাম প্রতিষ্ঠার লড়াই। ইচ্ছেশক্তি, কাজের প্রতি ভালবাসা ও নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার চেষ্টায় যে অসাধ্যসাধন হয় তা আরও এক বার করে দেখিয়েছেন রিঙ্কু। ডেভিড হয়ে গোলিয়াথের বিরুদ্ধে লড়েছেন। অসম লড়াই। জানতেন হারবেন। কিন্তু হারার আগে হারেননি। জীবন পণ করে লড়েছেন রিঙ্কু। যে পরিবারের মাসে আয় ১০-১২ হাজার টাকা সেই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলের কাছে লড়াই নতুন কিছু নয়। সেটাই করে দেখিয়েছেন রিঙ্কু।

Advertisement
রিঙ্কুর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সবাই

রিঙ্কুর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সবাই

আইপিএলের নিলামে তাঁকে কোনও দল কিনবে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না রিঙ্কু। কারণ চোটের কারণে অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কলকাতা তাঁর উপর ভরসা দেখিয়েছে। তাঁর চিকিৎসরা খরচ দিয়েছে। রিহ্যাবের ব্যবস্থা করেছে। অনেক সময় কোনও দল কোনও ক্রিকেটারের উপর এত ভরসা দেখায় যে সেই প্লেয়ারও সংশ্লিষ্ট দলকে নিজের বলে মনে করেন। সেটাই হয়েছে রিঙ্কুর ক্ষেত্রে। কেকেআর অ্যাকাডেমির ছেলে তাই দলের জন্য সব করতে পারেন। চার মরসুমে মাত্র ১০টা ম্যাচে সুযোগ পেয়েও তাই তিনি দুঃখ পান না, হতাশ হন না। অপেক্ষা করে থাকেন সুযোগের। আর নিজেকে তৈরি করেন। যাতে সুযোগ পেলে আর ব্যর্থ না হন। যাতে কেউ তাঁকে বলতে না পারেন, জল বওয়ার জন্যই কেনা হয়েছে রিঙ্কুকে।

ফিনিক্স পাখির মতো ছাইয়ের গাদা থেকে উঠেছেন রিঙ্কু। প্রথম সাত ম্যাচে সুযোগ পাননি। পরের সাত ম্যাচে কলকাতার হয়ে অন্যতম ধারাবাহিক ক্রিকেটারের নাম রিঙ্কু। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে কঠিন পরিস্থিতিতে ২৮ বলে ৩৫ রান করেছেন। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ২৩ বলে ম্যাচ জেতানো ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে হারতে থাকা ম্যাচ একার ব্যাটে জিতিয়ে দিচ্ছিলেন। ১৫ বলে ৪০ রান করেন তিনি। সাত ম্যাচে ৩৪.৮০ গড়ে ১৭৪ রান করেছেন রিঙ্কু। কেকেআর দলে আন্দ্রে রাসেলের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় তাঁর। স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৭১।

চোয়াল চাপা লড়াই দিয়ে সব অবজ্ঞা, অবহেলাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন রিঙ্কু। গলি থেকে রাজপথে উঠে এসেছেন। স্রেফ নিজের পরিশ্রমে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে উঠেছেন তিনি। রং ছড়াচ্ছেন নাইটদের সংসারে। তাই তিনি যখন একার দায়িত্বে ম্যাচ জেতান তখন আনন্দ পান মেন্টর অভিষেক নায়ার। আউট হওয়ার পরে রিঙ্কুর দুঃখ দেখে কষ্ট পান দলের অধিনায়ক শ্রেয়স। তিনি প্রকাশ্যে জানান, এ বারের আইপিএলে কলকাতার সব থেকে বড় প্রাপ্তি রিঙ্কু। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম দল ছেড়ে যাওয়ার সময়ও বলে যান রিঙ্কুর দিকে নজর থাকবে তাঁর। কেউ আর বলে না, জল বওয়ার জন্য কেনা হয়েছে রিঙ্কুকে। এখানেই রিঙ্কুর মুক্তি। এখানেই জিতে গিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement