গুজরাত টাইটান্সের মোহিত শর্মাই এখন হয়ে উঠেছেন তুরুপের তাস। ছবি: পিটিআই।
আইপিএলের দুনিয়া থেকে একটা সময় ছিটকেই গিয়েছিলেন তিনি। বছর দুই-তিন তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না আইপিএলে। গুজরাত টাইটান্সে যোগ দিয়েছিলেন নেট বোলার হিসাবে। সেই মোহিত শর্মাই এখন হয়ে উঠেছেন তুরুপের তাস। হার্দিক পাণ্ড্যের দলে ম্যাচ জেতানো বোলারের অভাব নেই। তবু মোহিতে ভরসা করেন হার্দিক। আর সেই মোহিতই তাঁকে জেতাচ্ছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। অথচ যশ দয়ালকে যদি রিঙ্কু সিংহ পাঁচ ছক্কা না মারতেন, তা হলে আইপিএলে হয়তো খেলাই হত না মোহিতের।
আইপিএলে এর আগে কোনও দিন কোনও বোলার প্লে-অফের কোনও ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিতে পারেননি। এ বারের আইপিএলে তিন দিনের ব্যবধানে দেখা গেল সেই ঘটনা। লখনউ ম্যাচে আকাশ মাধোয়াল পাঁচ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। শুক্রবার মোহিত পাঁচ উইকেট নিলেন ১০ রানে।
২০১৪ সালে চেন্নাইয়ের হলে খেলার সময় আইপিএলে বেগনি টুপি জিতেছিলেন মোহিত। ভারতের হয়ে দু’টি বিশ্বকাপে (২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৫ এক দিনের বিশ্বকাপ) খেলেছেন। কিন্তু ২০২১ সালের আইপিএলে খেলেননি। ২০২২ নিলামে তাঁকে কেউ কেনেনি।
গত বছর নিলামে অবিক্রিত থাকার পর বসে না থেকে গুজরাতের নেট বোলার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মোহিত। নেটে তাঁর নিখুঁত ইয়র্কার এবং স্লোয়ার দেখে মুগ্ধ হয়ে যান হার্দিকরা। সে বছর তাঁকে চুক্তিবদ্ধ করা সম্ভব না হলেও এ মরসুমের শুরুতেই তাঁর সঙ্গে চুক্তি করে নেওয়া হয়। প্রথম তিনটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে রিঙ্কু সিংহের হাতে যশ দয়াল পাঁচটি ছক্কা খাওয়ার পর ঘুরে যায় পরিস্থিতি।
চতুর্থ ম্যাচের আগে রাত ২.৩০টেয় কোচ আশিস নেহরার একটি বার্তা পান মোহিত। লেখা ছিল, ‘‘তুমি দলে আছ।’’ ব্যস! এই একটা সুযোগেরই দরকার ছিল মোহিতের। প্রথম ম্যাচেই পেলেন দু’টি উইকেট। তার পর থেকে ফিরে তাকাতে হয়নি। লখনউয়ের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে ১২ রান তুলতে দেননি। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে চার উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হয়তো তাঁর প্রতিযোগিতায় সেরা পারফরম্যান্স দেখা গেল।
আট বছর ধরে ভারতের হয়ে খেলেননি। বছর দুয়েক আগে বাবা মারা যান। ২০১৯ সালে পিঠে অস্ত্রোপচার হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলা কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে প্রচণ্ড জেদি ছিলেন মোহিত। কোচ বিজয় যাদব এবং বেশ কিছু সমবয়সি ক্রিকেটার মোহিতকে পরামর্শ দেন ক্রিকেট ছেড়ে কোচিংয়ে আসার জন্য। হয়তো চলেও আসতেন। কিন্তু এই মরসুমের শুরুতে আরও একটা বছর নিজেকে দিতে চেয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তই ফলে গেল।
কোচ বিজয় যাদব সম্প্রতি বলেছেন, “নেট বোলার হিসাবে যোগ দেওয়া সাহসী একটা সিদ্ধান্ত। একজন বোলার যে অতীতে ভারতের হয়ে খেলেছে দুটো বিশ্বকাপে, তাঁর নেট বোলারে পরিণত হওয়া, ব্যাপারটা সুখের ছিল না। এই সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সাহসী হতে হয়। নিজের আত্মসম্মান এবং খ্যাতি সরিয়ে রাখতে হয়। মোহিত সে সবের পরোয়া করেনি। সব ভুলে নিজেকে নেট বোলার হিসাবে নিংড়ে দিয়েছে। সবার কাছে ও প্রমাণ করতে চেয়েছিল কতটা ভাল হতে পারে।”
তাঁকে মাত্র ৫০ লাখ টাকায় কিনেছে গুজরাত। কিন্তু মোহিত যে পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে, তা আইপিএলে কোটি কোটি টাকা দামের ক্রিকেটাররাও দিতে পারেননি।