Rafael Nadal

Rafael Nadal: লাল মাটি তাঁর, শুধু তাঁর! নিজেকেই ভুল প্রমাণ করলেন সুরকির রাজা

জোকোভিচের বিরুদ্ধে নিজেকে পিছিয়ে রেখেছিলেন নাদাল। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ভুল প্রমাণ করলেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২২ ০৬:০৯
ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে রাফায়েল নাদাল।

ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে রাফায়েল নাদাল। ছবি: রয়টার্স

চোটে এতটাই কাহিল যে, এখন না কি প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামার আগে মনে হচ্ছে, এটিই তাঁর শেষ ম্যাচ হতে চলেছে। তার পর যখন শুনলেন, পছন্দের ‘ডে স্লটে’ ম্যাচ পাননি, খেলা শুরু হবে রাত ৯টায়, তখন আরও ভেঙে পড়েছিলেন। রাখঢাক না করেই ম্যাচের আগে নোভাক জোকোভিচকে এগিয়ে রেখেছিলেন রাফায়েল নাদাল।

কিন্তু ভবিতব্য বুঝতে ভুল হয়েছিল ‘কিং অফ ক্লে’-র। আর বুঝতে ভুল হয়েছিল নিজেকে। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ভুল প্রমাণ করার আনন্দ নিয়ে ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলেন নাদাল। জোকোভিচকে হারালেন ৬-২, ৪-৬, ৬-২, ৭-৬ গেমে।

বিশ্ব টেনিসের ওপেন এরায় এই প্রথম কোনও ম্যাচে এমন দু’জন মুখোমুখি হয়েছিলেন, যাঁদের প্রত্যেকের অন্তত ২০টি করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব আছে, অন্তত ৩০০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ জয় আছে এবং সব মিলিয়ে অন্তত এক হাজার ম্যাচ জয় আছে।

Advertisement

ম্যাচের দ্বিতীয় পয়েন্টেই বোঝা গিয়েছিল, কী হতে চলেছে। ডিউস পয়েন্টে তিন বার জোকোভিচ এগিয়ে গিয়েছিলেন, তিন বার নাদাল তাঁকে ধরেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম সার্ভিস গেমটাই হারাতে হয় জোকোভিচকে। প্রথম সেটটা এক কথায় বললে বলতে হয় নাদালের ছলনা। বার বার জোকোভিচকে কোর্টের ভুল দিকে ঠেলে দিয়ে পয়েন্ট তুলে নিয়েছেন।

জোকোভিচকে হারানোর পরে নাদাল।

জোকোভিচকে হারানোর পরে নাদাল। ছবি: রয়টার্স

জন ম্যাকেনরো বলছেন, ক্লে-কোর্টে ফর্মে থাকা নাদালকে সামলানোর থেকে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন আর কিছু হয় না। এটাই টেনিসের সব থেকে বড় পরীক্ষা। পঞ্চম গেমে জোকোভিচের একটি শট একেবারেই খারাপ ছিল না। কিন্তু গোটা শরীরকে চাগিয়ে তুলে নাদাল যে ভাবে ডাউন দ্য লাইন উইনার মারলেন, তাতে বোঝা গেল ম্যাকেনরোর দুঃস্বপ্নের মর্মার্থ। অষ্টম গেমে জোকোভিচ ডাউন দ্য লাইন একটি শক্তিশালী ফোরহ্যান্ড মেরেছিলেন। কিন্তু সেখানেও নাদালকে হারাতে পারেননি।

দ্বিতীয় সেটও হতাশা দিয়ে শুরু হয় জোকোভিচের। প্রথম গেমেই ডাবল ফল্ট করেন। শরীরী ভাষায় সেই হতাশা ফুটে ওঠে। প্রথম সার্ভিসই ব্রেক হয়ে যায়। অথচ কোনও সময়ই মনে হয়নি জোকোভিচ ভাল খেলতে পারছেন না। যে মানের টেনিস খেলেছেন, তাতে বিপক্ষে অন্য যে কেউ থাকলে তিনি হাসতে হাসতে স্ট্রেট সেটে জিততেন। কিন্তু মঙ্গলবার ফিলিপ শাতিয়ের উল্টো দিকে যে ছিলেন কিং অফ ক্লে। সুরকির কোর্টে নাদাল মানেই স্বর্গীয় টেনিস।

অবশেষে পঞ্চম গেমে নাদালের সার্ভিস ব্রেক করতে পারেন জোকোভিচ। নেটের সামনে এসে নাদালকে ‘রং ফুট’-এ ফেলে দেন। পরের গেমটি ২০ মিনিট ধরে চলে। নাদালের একটি ক্রস কোর্ট ফোরহ্যান্ডের পর জোকোভিচের হাসিই বুঝিয়ে দেয় ক্লে কোর্টে সেরা কে। কিন্তু তিনিও তো বিশ্বের এক নম্বর। সহজে হাল ছাড়ার লোক নন। মোক্ষম সময়ে ম্যাচে ফেরেন। সেই প্রথম ম্যাচে এগিয়ে যান। অষ্টম গেম অন্য উচ্চতায় পৌঁছয়। নাদালের সার্ভিস গেমে দু’বার জোকোভিচ এগিয়ে যান। দু’বার নাদাল ফিরে আসেন। ড্রপ শট, ড্রপ শট, সেখান থেকে নাদালের উইনার ভলি। শেষে নাদালকে কোর্টের ভুল দিকে ঠেলে জোকোভিচের পয়েন্ট। এই গেমের পর বসে থাকতে পারেনি ফিলিপ শাতিয়ে কোর্ট। উঠে দাঁড়িয়ে বরণ করে নেয় দু’জনকে। ০-৩ পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত জোকোভিচ দ্বিতীয় সেট জিতে নেন ৬-৪ গেমে।

তৃতীয় সেটেও জোকোভিচকে ব্রেক করে শুরু করেন নাদাল। পঞ্চম গেমে জোকোভিচ ৩০-১৫ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা অবস্থায় নাদালের এক হাতে ফোরহ্যান্ড শটটাই শুধু বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট কেন তিনি লাল মাটির রাজা। জোকোভিচের সেই সার্ভিস গেমও ব্রেক করে দেন রাফা। তখন তিনি গিয়ার বদলে অন্য গতিতে। দ্বিতীয় সেটের অর্ধেক সময়ে ৬-২ গেমে তৃতীয় সেট জিতে নেন নাদাল।

চতুর্থ সেট শুরু হয় দু’তরফে পর পর চারটি ড্রপ শট দিয়ে। তখন প্রতিটি গেম আলাদা আলাদা যুদ্ধ। কে জিতবেন, প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বুঁদ ফিলিপ শাতিয়ে। জোকোভিচ দ্বিতীয় গেমে প্রথম সার্ভিস ব্রেক করে এগিয়ে যান। ৫-৩ গেমে এগিয়ে থেকে জোকোভিচ যখন সেটের জন্য সার্ভ করছেন, তখন সবাই নিশ্চিত ছিলেন ম্যাচ পঞ্চম সেটে গড়াবে। ৪০-৩০, সেট পয়েন্টে পৌঁছে যান জোকোভিচ। নাদাল অবিশ্বাস্য ডাউন দ্য লাইন শটে ডিউস করেন। ঠিক তার পরেই ক্রস কোর্ট ভলিতে জোকোভিচ এগিয়ে যান। নাদাল ফের ডিউস করেন। পরের পয়েন্টে জোকোভিচের শট ‘ট্রাম লাইন’-এ পড়তে নাদাল ‘অ্যাডভান্টেজ’ পান। শেষ পর্যন্ত সার্ভিস ব্রেক করে ৪-৫ করে ফেলেন। সেট টাই ব্রেকারে গড়ায়। শুরুতেই নাদাল ৩-০ এগিয়ে যান। তারপর ৪-১, ৫-১। জোকোভিচ মরিয়া হয়ে ঝুঁকি নিয়ে একটি ড্রপ শট মারেন। সফল হননি। পাঁচটি ম্যাচ পয়েন্ট পেয়ে যান নাদাল। সেখান থেকে চারটি ম্যাচ পয়েন্ট, তিনটি, দু’টি। তারপর আর পারেননি। চার ঘণ্টা ১২ মিনিটের লড়াই শেষে ক্লে কোর্টের রাজার কাছে হারতে হয় তাঁকে।

মে মাসের শেষ দিন রাত ৯টায় শুরু হওয়া ম্যাচ যখন জুনের প্রথম দিন ১টা ১২ মিনিটে শেষ হল, তখন প্যারিসের তাপমাত্রা মধ্য পঞ্চাশে। লাল মাটির উপর দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি যখন ফিলিপ শাতিয়ের দর্শকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, তখন বোঝা গেল, নিজেকে ভুল প্রমাণ করে কতটা খুশি রাজা। নিজেই বুঝলেন, ক্লে কোর্টের রাজা তিনি অনেক আগেই হয়ে গিয়েছেন। প্রশ্ন শুধু সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে। আদৌ কি তাঁকে পাওয়া যাবে!

আরও পড়ুন
Advertisement