Saline Controversy

প্রসূতির মৃত্যুতে কাঠগড়ায় নির্দিষ্ট সংস্থার স্যালাইন! আপাতত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিল স্বাস্থ্য দফতর

ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইন সরকারি গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা এবং তদন্তের ফল প্রকাশিত না-হওয়া পর্যন্ত ওই স্যালাইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩০
স্যালাইন নিয়ে কড়া নির্দেশিকা স্বাস্থ্য দফতরের।

স্যালাইন নিয়ে কড়া নির্দেশিকা স্বাস্থ্য দফতরের। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতিদের নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই আবহে রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে কড়া নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর। জানিয়ে দেওয়া হল, সুরক্ষার কারণে রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি সংস্থার তৈরি স্যালাইন ব্যবহার করা যাবে না। ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইন সরকারি গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা এবং তদন্তের ফল প্রকাশিত না-হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে শুক্রবার এক প্রসূতির মৃত্যুর পরেই তাঁকে দেওয়া ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট’ স্যালাইনের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই স্বাস্থ্য দফতর কড়া নির্দেশিকা জারি করে। জানিয়ে দেওয়া হয়, যে সংস্থার তৈরি স্যালাইন আতশকাচের নীচে রয়েছে, তাদের তৈরি সব স্যালাইন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। যদিও নির্দেশিকায় সংস্থার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ-ও জানানো হয়েছে, রোগীদের স্বার্থের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। সব সরকারি হাসপাতালের প্রধানদের এই মর্মে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ওই স্যালাইন নিয়ে সরকারি গবেষণাকারে পরীক্ষা চলছে। সেই পরীক্ষা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইন ব্যবহার করা যাবে না।

স্বাস্থ্য দফতরের এই নির্দেশ পাওয়ার পরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে ১০ ধরনের স্যালাইন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে— রিঙ্গার ল্যাকটেট-৫০০ এমএল, রিঙ্গার সলিউশন আইপি ইনজেকশন-৫০০ এমএল, ডেক্সট্রোস ইনজেকশন ১০% ৬৫০ এমওএসএম/এল-৫০০ এমএল, ম্যানিটল ইনফিউশন আইপি ২০%-১০০ এমএল, প্যারাসিটামল ইনফিউশন-১০০০ মিলিগ্রাম/১০০ এমএল, অফলোক্সাসিন-২০০ মিলিগ্রাম/১০০ এমএল, লেভোফ্লোক্সাসিন-১০০ এমএল, ১/২ ডিএনএস-৫০০ এমএল, সোডিয়াম ক্লোরাইড ইরিগেশন সলিউশন-৩ লিটার, পেডিয়াট্রিক মেনটেনান্স ইলেক্ট্রোলাইট সলিউশন-৫০০ এমএল।

রিঙ্গার ল্যাকটেট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকেও। যদিও শনিবার পর্যন্ত ওই স্যালাইন রোগীদের দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নীলাঞ্জন প্রামাণিক। তিনি জানিয়েছেন, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশের পরে রবিবার ওই স্যালাইন সব ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

একই দিনে অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম দেওয়া পাঁচ প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। তাঁদেরই এক জন মামণি রুইদাসের (২৫) মৃত্যু হয় শুক্রবার সকালে। ওই ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের স্যালাইন (রিঙ্গার ল্যাকটেট) নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তড়িঘড়ি তদন্ত কমিটি গড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। প্রসূতিদের যে স্যালাইন এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তার নমুনা পরীক্ষায় পাঠিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলের দল। মেদিনীপুর মেডিক্যালও ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি কমিটি’ গড়েছে।

‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইনের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় গত ১০ ডিসেম্বর ওই স্যালাইনের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও মেনেছেন, গত নভেম্বরে স্যালাইন উৎপাদক ওই সংস্থাটিকে কর্নাটক সরকার কালো তালিকাভুক্ত করার পরে রাজ্যও ওই নির্দেশ দেয়। সব সরকারি হাসপাতালকে সংস্থার ১৪ ধরনের ওষুধ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেও ওই স্যালাইন কী ভাবে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হল, মামণির মৃত্যুর পরে সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই সব বিষয় খতিয়ে দেখতেই শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর গঠিত তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি, রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংস্থার তৈরি স্যালাইন নিষিদ্ধ করেছে।

Advertisement
আরও পড়ুন