স্পেনের বিরুদ্ধে ইটালির কালাফিয়োরির গোলের মুহূর্ত। ছবি: রয়টার্স।
ইউরো কাপ শুরু হওয়ার পর এক সপ্তাহের বেশি কেটে গিয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষ হওয়ার পথে। অথচ সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে রয়েছেন তিন জন খেলোয়াড়। জার্মানির জামাল মুসিয়ালা, জর্জিয়ার জর্জেস মিকাউতাদজে এবং স্লোভাকিয়ার ইভান শ্রাঞ্জ দু’টি করে গোল করেছেন। তবে ছ’টি গোল করে সবার উপরে রয়েছে আত্মঘাতী গোল। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইউরো কাপে ২৩টি ম্যাচে ছ’টি আত্মঘাতী গোল হয়ে গিয়েছে। গত বারের থেকে এখনও তিনটি পিছিয়ে। কিন্তু যে গতিতে আত্মঘাতী গোলের সংখ্যা এগোচ্ছে তাতে গত বারের নজির পেরিয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ইউরোর প্রথম ম্যাচেই জার্মানির আন্তোনিয়ো রুডিগার আত্মঘাতী গোল করেন। এর পর অস্ট্রিয়ার ম্যাক্সিমিলিয়ান উবের, চেকিয়ার রবিন রানাচ, আলবেনিয়ার ক্লস জাসুলা, ইটালির রিকার্ডো কালাফিয়োরি এবং তুরস্কের সামেত আকায়দিন আত্মঘাতী গোল করেছেন। কেমন ভাবে হয়েছে গোলগুলি?
১) আন্তোনিয়ো রুডিগার বনাম স্কটল্যান্ড
ডান দিক থেকে স্কট ম্যাকটোমিনের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন রুডিগার। কিন্তু মাথার ঠিক জায়গায় লাগেনি। বল বাঁ দিকের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। জার্মান গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যুয়েরের কিছুই করার ছিল না।
২) ক্লস জাসুলা বনাম ক্রোয়েশিয়া
৭২ মিনিটের মাথায় মাঠে নেমেছিলেন পরিবর্ত ফুটবলার হিসাবে। সঙ্গে সঙ্গে গোল দেয় ক্রোয়েশিয়া। এর পর জাসুলার আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় তারা। বাঁ দিক থেকে আসা ক্রস জাসুলার হাঁটুতে লেগে গোলে ঢুকে যায়। তিনি দৌড়ে আসছিলেন বল বাঁচাতে। কিন্তু বল আসার সময় কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না।
৩) ম্যাক্স উবের বনাম ফ্রান্স
ডান দিক থেকে বল ভাসিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। বলের গতি ছিল ভালই। উবের হেড করে বল বাইরে বার করতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তা নিজের জালেই জড়িয়ে যায়। যে পাঁচটি গোল হয়েছে, তার মধ্যে এটিকে দেখেই মনে হয়েছে চেষ্টা করলে এড়ানো যেত। এই একমাত্র গোলেই জেতে ফ্রান্স।
৪) রবিন রানাচ বনাম পর্তুগাল
এ ক্ষেত্রেও চেকিয়ার ডিফেন্ডারের কিছু করার ছিল না। বাঁ দিক থেকে বল ভাসিয়েছিলেন রাফায়েল লিয়াও। চেকিয়ার গোলকিপার বলটি হাতে ধরার বদলে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন। সামনে থাকা রানাচের গায়ে লেগে সেটি গোলে ঢুকে যায়। রানাচের কিছু করারই ছিল না।
৫) রিকার্ডো কালাফিয়োরি বনাম স্পেন
ডিফেন্ডারের অসহায়তার আর এক উদাহরণ। স্পেনের নিকো উইলিয়ামস বাঁ দিক থেকে বল ভাসিয়েছিলেন। গোলের দিকে ছুটে আসছিলেন কালাফিয়োরি। উইলিয়ামসের শটে কোনও মতে আঙুল ঠেকান ইটালি গোলকিপার জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা। পাশে থাকা কালাফিয়োরি কিছু বোঝার আগেই তাঁর হাঁটুতে লেগে গোল ঢুকে যায়।
৬) সামেত আকায়দিন বনাম পর্তুগাল
শনিবারের ম্যাচেও দেখা গিয়েছে আত্মঘাতী গোল। পর্তুগাল তখন ১-০ এগিয়ে। পর্তুগালের একটি আক্রমণ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফাঁকায় থাকা আকায়দিন পাস দিতে গিয়েছিলেন গোলকিপারকে। কিন্তু তিনি দেখেনইনি গোলকিপার কোথায়। গোলকিপার আলতে বাইন্দির তখন অনেকটা বাঁ দিকে সরে এসেছেন। পাসের নাগাল না পেয়ে পিছনে ছুটতে শুরু করেন। এক ডিফেন্ডার এসে কোনও মতে বল বার করে দিলেও তত ক্ষণে তা অনেকটাই গোলে ঢুকে যায়।
এ কথা ঠিকই যে আত্মঘাতী গোল কেউ ইচ্ছা করে করেন না। কিন্তু এ বার এত আত্মঘাতী গোল হচ্ছে যে তা দেখে বিস্মিত অনেকেই। তার কোনও ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি। এটি কাকতালীয় না কি এর নেপথ্যে কোনও কারণ রয়েছে তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার প্রীতম কোটাল আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “ফুটবলে কোনও খেলোয়াড়ই ইচ্ছাকৃত ভাবে আত্মঘাতী গোল করে না। যে ক’টা আত্মঘাতী গোল আমি দেখেছি, তার একটাতেও সংশ্লিষ্ট ফুটবলারের কিছু করার ছিল না।”
ডিফেন্ডারেরা কি সতর্ক থাকছেন না বলেই আত্মঘাতী গোল হচ্ছে? মানতে চাননি প্রীতম। তাঁর কথায়, “ইউরোর মতো প্রতিযোগিতায় সেরা মানের ডিফেন্ডারেরা খেলে। সেখানে ওরা সতর্ক থাকবে না এটা হতেই পারে না। উচ্চমানের ডিফেন্ডিং দেখছি। তাই ওদের দোষ দেওয়ার জায়গা নেই।”
তবে বলের কারণে আত্মঘাতী গোল হতে পারে বলে মনে করছেন প্রীতম। তাঁর মতে, ইউরোর এই বলের গতি কিছুটা বেশি। তিনি বলেছেন, “বলে একটু বদল দেখতে পাচ্ছি। অনেক গতিতে বল যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ফুটবলারদের পক্ষে। সে কারণেও আত্মঘাতী গোলের পরিমাণ বাড়তে পারে।”
ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার অর্ণব মণ্ডল আবার অন্য দু’টি ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তিনি বললেন, “খেয়াল করলে দেখা যাবে এ বার বক্সের বাইরে থেকে অনেক শট এবং গোল হয়েছে। বাকি ইউরোকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সেটা বাঁচাতে গিয়েও অনেক সময় আত্মঘাতী গোল হয়েছে।”
অর্ণব আরও বললেন, “এ ছাড়া গোল বাঁচাতে বক্সের মধ্যে অনেক ফুটবলারের ভিড় দেখা যাচ্ছে। যে হেতু খেলোয়াড়েরা এ বার দূর থেকে শট নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাই অনেক সময় সেগুলো বাঁচাতে গিয়ে কারও না কারও গায়ে লেগে গোলে ঢুকে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই খেলোয়াড় বা গোলকিপারের কিছু করার থাকছে না। এ বারের বলে ভাল গতি রয়েছে বলে আমার মনে হয়।”