গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হার প্রায় অবধারিতই ছিল হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে। কিন্তু শেষবেলায় প্রচারে নেমে খেলা ঘুরিয়ে দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) কর্মীরা। বিজেপির যা অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা, তাতে দলের দিল্লিতে জেতা বেশ কঠিন। তা বুঝেই হরিয়ানা-মহারাষ্ট্রের মতোই গেরুয়া শিবিরের পক্ষে জনমত গঠনে মাঠে নেমে পড়েছেন সঙ্ঘ কর্মীরা। তাঁর কি জয়ের হ্যাটট্রিক কি করতে পারবেন, এখন প্রশ্ন এটাই।
বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণ হল, বর্তমানে দলের যা পরিস্থিতি তাতে দিল্লিতে আগের চেয়ে আসন বাড়লেও ক্ষমতায় ফেরার পূর্বাভাস নেই। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে বিজেপির হাল ধরতে মাঠে নেমেছে আরএসএস। সূত্রের মতে, কেন্দ্রপিছু গড়ে ৫০-৭০ জন করে আরএসএস কর্মীকে জনভিত্তি বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাঁদের মূল কাজ, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে গেরুয়া শিবিরের হয়ে প্রচার চালানো। বিশেষ করে আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের কারণে দিল্লি যে অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরে প্রচার জোর দেওয়া। মূলত ওই অনুপ্রবেশকারীদের কারণেই যে দিল্লির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফি দিন খারাপ হয়ে চলেছে, তা নিয়েও সরব হচ্ছেন আরএসএস কর্মীরা। পাশাপাশি, ভোটের দিন ভোটারেরা যাতে ভোট দিতে বুথ পর্যন্ত পৌঁছন সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করছেন সঙ্ঘের কর্মীরা।
বিজেপির পক্ষে জনমত গঠনে ব্যবহার করা হচ্ছে সঙ্ঘের ছাতার তলায় থাকা বিভিন্ন সংগঠনকে। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশিষ্টজনেদের সমর্থন আদায়ে। সূত্রের মতে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, কলেজ পড়ুয়া ও শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ রক্ষা, বিজেপির হয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ওই ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়ারা। মূলত দিল্লির বস্তি এলাকায় কাজ করে থাকে সঙ্ঘের সেবা ভারতী সংগঠন। তাদের উপর দায়িত্ব রয়েছে বস্তি ও ঝুপড়িতে গিয়ে বিজেপির হয়ে প্রচারের। তেমনি দিল্লির যে সংখ্যক ব্যবসায়ী সমাজের ভোট রয়েছে তাদের সমর্খন আদায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে সঙ্ঘের লঘু উদ্যোগ ভারতী সংগঠনের সদস্যদের। এ ছাড়া, দিল্লির মহিলাদের সমর্থন আদায়ে তৎপর হয়েছে রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি। দিল্লির ভোটারদের একটি বড় অংশ হলেন শিখ সমাজের প্রতিনিধিরা। সেই সমাজের ভোটকে নিশ্চিত করতে মাঠে নামানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় শিখ সঙ্গত-কে। যাদের কাজ বিভিন্ন গুরুদ্বারা ধরে ধরে প্রচার চালানো।
সব মিলিয়ে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের ধাঁচেই সামগ্রিক ভাবে বিজেপির হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র উভয় রাজ্যেই আশানরূপ ফল করতে ব্যর্থ হয় বিজেপি। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে। ওই রাজ্যে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীরা লোকসভায় বেশি আসন পেয়েছিলেন। ফলে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-শিবসেনা-এনসিপি জোটের হার যখন নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল সে সময়ে মাঠে নেমে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন আরএসএস কর্মীরা।’’ যা সম্প্রতি স্বীকার করে নিয়েছেন বিরোধী এনসিপি (শরদ) দলের প্রধান শরদ পওয়ার। গতকাল দলীয় কর্মসূচিতে তিনি মহারাষ্ট্র বিধানসভার জয়ের পিছনে আরএসএস কর্মীরা মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে দলীয় কর্মীদের আরএসএস কর্মীদের মতো দলের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়ার পরামর্শ দেন। রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে আরএসএসের মতো সঙ্ঘবদ্ধ ক্যাডারভিত্তিক সমর্থক গড়ার উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।