ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমের খবর, মঙ্গলবার পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। তার আগে সোমবার থেকে তাঁর দেহ রাখা থাকবে স্যান্টোসের স্টেডিয়ামে। ফাইল ছবি
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় গভীর রাতে প্রয়াত হয়েছেন পেলে। সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। এখনই তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের করে অন্যত্র সরানো হবে না। হাসপাতালেই কিংবদন্তি ফুটবলারের দেহ রাখা থাকবে। ব্রাজিলের সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের পরিকল্পনা করেছে। কী ভাবে শেষকৃত্য হবে তা জানানো হবে।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমের খবর, মঙ্গলবার পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। তার আগে সোমবার থেকে তাঁর দেহ রাখা থাকবে স্যান্টোসের স্টেডিয়ামে। ভিলা বেলমিরো নামে সেই স্টেডিয়ামে ফুটবলজীবনের সেরা কিছু ম্যাচ খেলেছেন পেলে। স্মরণীয় প্রচুর গোল রয়েছে সেই স্টেডিয়ামেই। পেলের স্মৃতিবিজড়িত সেই ভিলা বেলমিরোতেই ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।
স্যান্টোসের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার ভোরবেলায় হাসপাতাল থেকে পেলের মরদেহ নিয়ে আসা হবে স্টেডিয়ামে। মাঠের একদম মাঝখানে রাখা থাকবে সেটি। সকাল ১০টা থেকে সাধারণ মানুষ এসে পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানো যাবে। এর পর পেলের কফিন নিয়ে শোভাযাত্রা করে স্যান্টোসের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরানো হবে। সেটি যাবে তাঁর পৈতৃক বাড়ির সামনে দিয়েও, যেখানে এখন শয্যাশায়ী পেলের শতায়ু মা সেলেস্টি। তবে ছেলের শেষযাত্রা দেখতে পাবেন না তিনি। কারণ, এখন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না।
পেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে স্যান্টোসের মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিকাতে। শুধু পরিবারের সদস্যরাই সেখানে হাজির থাকতে পারবেন। স্যান্টোসে পেলের একটি বাড়ি রয়েছে, যেখানে তিনি জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন। পরের দিকে তিনি চলে যান গুয়ারুজা সিটিতে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি।
২০২১ সাল থেকে অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন পেলে। কাতার বিশ্বকাপের সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ নভেম্বর তাঁকে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ২২ ডিসেম্বর ক্যানসারের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে বাড়ি ফেরা হয়নি। বড়দিনে এ বছর হাসপাতালেই কাটিয়েছিলেন পেলে। বিছানায় অসুস্থ বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছবি গণমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তাঁর কন্যা কেলি। গত শনিবার হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে এডিসনও। গত কয়েক দিন ধরে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে তাঁর পাশেই ছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ডাক্তাররা সুস্থ করে তুলতে পারলেন না ফুটবল সম্রাটকে। চিরনিদ্রার দেশে চলে গেলেন পেলে।
‘ফিফা’ ম্যাগাজিনের পাঠক এবং জুরি বোর্ডের বিচারে তিনিই বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলার। তবে ইন্টারনেটে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ভোট গিয়েছিল দিয়েগো মারাদোনার পক্ষে। ফিফা শেষ পর্যন্ত যুগ্ম ভাবে শতাব্দীসেরা ঘোষণা করে দু’জনকেই। মারাদোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে প্রয়াত হন আচমকাই। এ বার পেলেকেও হারাল বিশ্ব।
পেলের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। বাবার দেওয়া নাম এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো। সে নামে অবশ্য বিশ্ব তাঁকে চেনেনি। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ। পর পর চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। তার মধ্যে তিন বার চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বিশ্বের আর কোনও ফুটবলারের তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের নজির নেই।